পশুর যেসব ত্রুটি থাকলে কোরবানি হবে না
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৪, ০৯:২২ AM , আপডেট: ১০ জুন ২০২৪, ০৯:৩৩ AM
‘ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও মরণ সব কিছুই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানে নিবেদিত। (৬ঃ১৬২)
আল্লাহ নৈকট্য অর্জনের অনন্য ইবাদত কোরবানি। ছয় ধরনের পশু দিয়ে এ কোরবানি করা যায়— উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা। এ ধরনের পশুকে কুরআনের ভাষায় বলা হয় ‘বাহিমাতুল আনআম অর্থাৎ অহিংস্র গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু।’ তবে শর্ত হল পশুগুলো সুনির্দিষ্ট কিছু দোষ-খুঁত ও সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে হবে। অবশ্যই সুস্থ, সুন্দর ও পষ্ট-পুষ্ট হতে হবে কোরবানির পশু।
কুরবানির পশু কেমন হবে এ সম্পর্কে হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা চেষ্টা করবে কুরবানির জন্য নির্দিষ্ট বয়সের পশু নির্বাচন করতে। যদি না পাও তাহলে ছয় মাসের দুম্বা কোরবানি করতে পার। (মুসলিম।)
ফকিহগণ বলেছেন, উটের বয়স পাঁচ বছর, গরু বা মহিষ দুই বছর, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এক বছরের হওয়া শর্ত। বয়স কম; কিন্তু দেখতে হৃষ্টপুষ্ট এমন পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ হওয়ার পক্ষে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।
রাসুল (সা.) উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ছাড়া অন্য কোনো পশু কুরবানি করেননি কিংবা অনুমোদনও করেননি। তাই এসব পশু দিয়েই কুরবানি করা সুন্নাত। শরিয়তের পরামর্শ হল, হৃষ্টপুষ্ট, বেশি গোশত, নিখুঁত এবং দেখতে সুন্দর পশু কুরবানি করা। কুরবানির পশু সব ধরনের দোষ-ত্রুটিমুক্ত হওয়া চাই।
বারা ইবনে আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, চার ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ নয়। অন্ধ, রোগা, পঙ্গু এবং আহত।
নাসায়ির বর্ণনায় ‘আহত’ শব্দের জায়গায় ‘পাগল’ বলা হয়েছে। (সুনানে নাসায়ি।) শিং ভাঙা, কান কাটা, লেজ কাটা, ওলান কাটা, লিঙ্গ কাটা ইত্যাদি ধরনের পশু দিয়ে কুরবানি করাকে মাকরুহ বলেছেন ফকিহরা।
হাদিসের আলোকে কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হৃষ্টপুষ্ট, নিখুঁত ও উত্তম পশু কুরবানি করতেন এবং খুঁতবিশিষ্ট পশু কুরবানি করতে নিষেধ করেছেন।
খুঁতবিশিষ্ট যে সব প্রাণিতে কুরবানি বৈধ নয়- সুন্নাহর আলোকে ইসলামী স্কলারগণ তা নির্ধারণ করেছেন। যেমন- যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন খোঁড়া পশুর কুরবানি জায়েজ নয়।
এমন রুগ্ণ দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারাও কুরবানি করা জায়েজ নয়। যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না- এমন পশু দ্বারাও কুরবানি করা জায়েজ নয়।
যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুও কুরবানি জায়েজ নয়। তবে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানি করা জায়েজ আছে।
যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানি জায়েজ নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানি জায়েজ আছে। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কুরবানি করা জায়েজ নয়।
কুরবানির নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানি জায়েজ হয় না- তাহলে ওই পশুর কুরবানি সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানি করতে হবে। তবে ক্রেতা গরিব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানি করতে পারবেন।
নিশ্চিত অবগতি না থাকলে যদি বিক্রেতা কুরবানির পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার ওপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানি করা যাবে।
কোরবানির পশু জবাই করার কিছু মাসয়ালা
১. কোরবানির পশু যে কোন মুসলমান জবাই করতে পারবে।
২. নিজের কুরবানির পশু নিজেই জবাই করা উত্তম।
৩. দোয়া জানা জরুরি নয়,বিসমিল্লাহ, আল্লাহু আকবর বলাই যথেষ্ট।
৪. নিজে জবাই করতে না পারলে,যে কোন কাউকে দিয়ে জবাই করতে পারেন।