রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১১ বছর, ন্যায় বিচার কতদূর?

রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১১ বছর
রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১১ বছর  © সংগৃহীত

আজ ২৪ এপ্রিল। রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১১ বছর পূর্ণ হলো। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাজধানীর অদূরে সাভারে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবন ধসে পড়ে পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ শ্রমিক প্রাণ হারান। আহত হন আড়াই হাজার। যাদের অনেককেই আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে। এ দুর্ঘটনাকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে মনে করা হয়। ভয়াবহ এই ট্রাজেডির ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। 

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সাভারের রানা প্লাজার সামনে অবস্থিত অস্থায়ী বেদিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় নিহতদের স্মরণে কিছু সময় নীরবতা পালন করা হয়। নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতের পাশাপাশি রানা প্লাজার ট্রাজেডির সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানায় শ্রমিক সংগঠন ও শ্রমিকদের পরিবার।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতি বছর এই দিনে নিহতদের স্বরণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করি। প্রতি বছরই বিভিন্ন দাবি তুলে ধরি।

দাবিগুলো হচ্ছে, ২৪ এপ্রিলকে জাতীয়ভাবে শ্রমিক শোক দিবস ঘোষণা করা, রানা প্লাজার সামনে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা, রানা প্লাজার জমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত ও আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং হতাহত শ্রমিকদের এক জীবনের আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা। তিনি আরও বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির কোনোটাই বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমাদের দাবিগুলো পূরণ করতে হবে।

সেদিন যা ঘটেছিল
২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ভবনের তৃতীয় তলার পিলার ও দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। পরেদিন (২৪ এপ্রিল) শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেন মালিকপক্ষ। এর সঙ্গে যোগ দেন রানা প্লাজা ভবনের মালিক খালেক ও তাঁর ছেলে সোহেল রানা। সোহেল রানা সেদিন দম্ভ করে বলেছিলেন, ‘আগামী ১০০ বছরেও রানা প্লাজা ভেঙে পড়বে না।’ রানা প্লাজা তৈরিতে ধাপে ধাপে অনিয়ম ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ায় শেষ পর্যন্ত গোটা ভবনটিকে পরিণত করে একটি মৃত্যুকূপে।

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১০ বছর পূর্তি হলো আজ | The Business Standard

স্বজন হারানো শোকার্ত হাজারো মানুষ এখনো সেই ঘটনাস্থল ঘিরে খুঁজে ফেরেন প্রিয় স্বজনের স্মৃতি। একদিকে শোকাবহ পরিবেশ অন্যদিকে বিচার না পাওয়ার বেদনায় মুষড়ে পড়েন অনেকেই। তাদের দীর্ঘশ্বাসে ক্রমেই ভারী হয়ে ওঠছে সেখানকার পরিবেশ।

রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে এখনো নিখোঁজ ছেলেকে খুঁজে ফেরেন জয়পুরহাটের ষাটোর্ধ ফেরদৌসী বেগম। গত ১০ বছর ধরে ছেলের সন্ধান করেছেন তিনি।"আমার ছেলে মাহিদুল ইসলাম কাজ করত রানা প্লাজার ৫ম তলায়।আমি কি আমার হারানো মানিককে কোন দিন পাব না’’- বলেই কেঁদে ওঠেন তিনি।

এদিকে, রানা প্লাজা ধসে হতাহতের ঘটনায় সব মিলিয়ে ১৪টি মামলা দায়ের হওয়ার কথা জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এর মধ্যে রয়েছে, অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে পুলিশের হত্যা মামলা, ইমারত নির্মাণ আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় রাজউকের করা মামলা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলা। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরই ১১টি মামলা দায়ের করে বলে জানা যায়। এর মধ্যে কেবল দুদকের দায়ের করা দুটি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।

সম্পদের হিসাব দাখিল না করা সংক্রান্ত নন-সাবমিশন মামলায় ২০১৭ সালের ২৯ অগাস্ট প্রধান আসামি সোহেল রানার তিন বছর কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিল ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালত। ওই মামলায় তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এদিকে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ রানার মা মর্জিনা বেগমের ছয় বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেইসাথে তার প্রায় সাত কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে আদালত। বাকি মামলাগুলোর বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

রানা প্লাজা ট্রাজেডি: ৯ বছরে অশ্রুসিক্ত ছবির দৃশ্যপট

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মামলার ৫৯৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। ৮৪ জনের সাক্ষ্য বর্তমানে চলমান। সর্বশেষ চলতি বছরের ২১ এপ্রিল মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন চারজন আদালতে সাক্ষ্য দেন। চারজনের মধ্যে তিনজনের জেরা শেষ হলেও একজনের জেরা শেষ হয়নি। আগামী ২৮ এপ্রিল মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালত নতুন দিন ধার্য করেন।


সর্বশেষ সংবাদ