লাইলাতুল কদর গোপন কেন, আলামত কি

লাইলাতুল কদর
লাইলাতুল কদর  © ফাইল ফটো

‘শবে কদর’ কথাটি ফারসি। শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান, মর্যাদা, গুণাগুণ, সম্ভাবনা, ভাগ্য ইত্যাদি। শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদার রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদরের আরবি হলো লাইলাতুল কদর তথা সম্মানিত রাত। যে রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে, সে রাতই লাইলাতুল কদর।

আল্লাহ তাআলা বলেন: নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদর রজনী কী? মহিমান্বিত কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষা পর্যন্ত। 

হাদিসের ভাষ্যমতে, শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর হয়ে থাকে। এ জন্য রমজানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখে গুরুত্বের সঙ্গে ইবাদত করতে হয়। তবে ২৭ রমজানে হওয়ার বিষয়টি সমাজে প্রসিদ্ধ। উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তা অবশ্যই জানি এবং আমার অধিক ধারণা হলো, যে রাত জেগে ইবাদাত করার জন্য আল্লাহর রাসুল আদেশ দিয়েছিলেন সেটি ২৭-এর রাত। (মুসলিম : ১৬৫৯)

লাইলাতুল কদর গোপন কেন?
লাইলাতুল কদর গোপন রাখার প্রকৃত রহস্য আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন। যদিও মুহাদ্দিস আলেমরা যুক্তিসংগত বিভিন্ন অভিমত পেশ করেছেন। এর সারাংশ হলো, মানুষ যেন লাইলাতুল কদরের আশায় রমজানের শেষ ১০ দিন পুরোপুরি ইবাদতে কাটায় এ জন্য গোপন করে রাখা হয়েছে।

উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) আমাদের লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে অবহিত করার জন্য বের হয়েছিলেন।

তখন দুজন মুসলমান ঝগড়া করছিল। তা দেখে তিনি বলেন, আমি তোমাদের লাইলাতুল কদরের সংবাদ দেওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম। তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল। ফলে তার নির্দিষ্ট তারিখের পরিচয় হারিয়ে যায়।

সম্ভবত এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত আছে। তোমরা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ করো। (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৬ )

লাইলাতুল কদরের আলামত
লাইলাতুল কদর সন্ধ্যা থেকে ফজর পর্যন্ত পুরোটাই গুরুত্বপূর্ণ। এ রাতে চাঁদ হবে উজ্জ্বল। জোছনায় আলোকিত থাকবে চার দিক।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, লাইলাতুল কদরের আলামত হচ্ছে, স্বচ্ছ রাত, যে রাতে চাঁদ উজ্জ্বল হবে। আবহাওয়ায় প্রশান্তি থাকবে। না ঠাণ্ডা, না গরম। সকাল পর্যন্ত আকাশে কোনো উল্কাপিণ্ড দেখা যাবে না। ওই রাতের চাঁদের মতো সূর্য উঠবে (তীব্র) আলোকরশ্মি ছাড়া। শয়তান সেই সময় বের হয় না।
(মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ২২৭৬৫)

উবাই ইবনে কাব (রা.) বলেন, আর ওই রাতের আলামত এই যে দিনের সূর্য উদিত হয় উজ্জ্বল হয়ে, তাতে (কিরণের) তীব্রতা থাকে না। (মুসলিম, হাদিস : ১৬৫৮)

শবে কদরের আমল হলো: ক. নফল নামাজ। ১. তাহিয়্যাতুল অজু, ২. দুখুলিল মাসজিদ, ৩. আউওয়াবিন, ৪. তাহাজ্জুদ, ৫. সালাতুত তাসবিহ, ৬. তাওবার নামাজ, ৭. সালাতুল হাজাত, ৮. সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া।

খ. নামাজে কিরাত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা। গ. কোরআন শরিফ। ১. সুরা কদর, ২. সুরা দুখান, ৩. সুরা মুয্যাম্মিল, ৪. সুরা মুদ্দাচ্ছির, ৫. ইয়া-সিন, ৬. সুরা ত-হা, ৭. সুরা আর রহমান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা;

ঘ. দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া; ঙ. তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা; চ. দোয়া-কালাম, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদি করা; ছ. কবর জিয়ারত করা; জ. নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করা।


সর্বশেষ সংবাদ