শিক্ষা ক্যাডারে অসন্তোষ: আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দুষছেন শিক্ষকরা

নানা দাবিতে আন্দোলন করছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি
নানা দাবিতে আন্দোলন করছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি  © ফাইল ছবি

দেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজ, শিক্ষাবোর্ড ও অধিদপ্তরে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে দুরবস্থা শিক্ষা ক্যাডারের, এমন অভিযোগ তাদের। এ সংকট ও বৈষম্যের জন্য সরাসরি প্রশাসনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দুষছেন তারা। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি বিষয়টি নতুনভাবে সামনে এনে যেকোনো মূল্যে সুরাহার তাগিদ দিচ্ছেন। যদিও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।

সূত্র জানায়, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ, অর্জিত ছুটি প্রদান, ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগ বিধি বাতিল, শিক্ষা ক্যাডার তফসিলভূক্ত পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভূতদের প্রত্যাহার ও প্রয়োজনীয় পদ সৃজনসহ নানান দাবি দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষিপ্তভাবে জানিয়ে আসছিলেন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। নিয়মিত পদোন্নতি না হওয়া এবং পদ সৃজন না করার অভিযোগও বেশ পুরোনো। 

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা বলেছেন, দেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য শিক্ষা ক্যাডার সৃষ্টি হয়েছে। তবে শিক্ষা ক্যাডারকে বিশেষায়িত পেশা হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। বঞ্চনা আর বৈষম্যের মাধ্যমে এ পেশার কার্যক্রমকে সঙ্কুচিত করা হয়েছে। এ পেশাকে গ্রাস করছে অদক্ষ অপেশাদাররা। দেশের সার্বিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ক্যাডারের নানাবিধ সমস্যা ও যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের জন্য বারবার কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে।

তারা বলছেন— প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, জেলা উপজেলায় শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রশাসন সৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় পদসৃজন, চাকরীর পাঁচ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড প্রদানসহ বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সকল ন্যায্য দাবি দ্রুত মেনে নিতে হবে। 

দীর্ঘদিনের আন্দোলন রূপ নিয়েছে কর্মবিরতীতে

চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারের সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের দাবি তুলে ধরেন। পরে ১৪ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এরপরও কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ৩০ সেপ্টেম্বর সাংবাদ সম্মেলন করে ২ অক্টোবর কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়। যা সমিতির জেলা ও ইউনিট কমিটি এবং সকল দপ্তর প্রধানের নেতৃত্বে পালিত হয়েছে।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা বলেছেন, দেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য শিক্ষা ক্যাডার সৃষ্টি হয়েছে। তবে শিক্ষা ক্যাডারকে বিশেষায়িত পেশা হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। বঞ্চনা আর বৈষম্যের মাধ্যমে এ পেশার কার্যক্রমকে সঙ্কুচিত করা হয়েছে।

এরপরও সমস্যা সমাধানে কার্যকর ও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আজ মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) থেকে টানা তিন দিনের কর্মবিরতি শুরু হচ্ছে। অর্থাৎ ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর টানা তিন দিনের সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবেন দেশের সব সরকারি কলেজ, আয়িয়া মাদ্রাসা, সরকারি টিটি কলেজ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর, সকল শিক্ষা বোর্ড, এনসিটিবি, নায়েম, ব্যানবেইসসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর ও অধিদপ্তরে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। 

এ সময় ক্লাস, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অধীন ভর্তি, ফরম পূরণ, সকল ধরনের পরীক্ষা, প্রশিক্ষণ কর্মশালা, এবং দাপ্তরিক সকল কর্মকান্ড, কর্মবিরতির আওতায় থাকবে বলেও জানা গেছে। 

পদোন্নতিতে পরিকল্পিত জট তৈরির অভিযোগ

শিক্ষা ক্যাডারে বিদ্যমান নানা সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলো নির্ধারিত সময়ে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি না পাওয়া। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে ২৪তম থেকে ২৭তম বিসিএস পর্যন্ত পদোন্নতি যোগ্য কর্মকর্তা আছেন প্রায় তিন হাজার জন। অথচ দু’বছর পদোন্নতি না দিয়ে জট তৈরি করা হয়েছে। প্যাটার্ন অনুযায়ী, পদসৃজন না করে পদোন্নতি সমস্যাকে আরও তীব্রতর করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বারবার আশ্বাস দিয়েও বিভিন্ন টালবাহানা করে সময়ক্ষেপন করা হয়েছে। পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা সমুন্নত রাখা এবং কর্মস্পৃহা ধরে রাখার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতির সুযোগ তৈরির একটি নির্দেশনা রয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার পরও কোনো বিবেচনায় নেয়া হয়নি। সম্প্রতি মাত্র ৬৯০ জন কর্মকর্তার পদোন্নতি আদেশ দেওয়া হয়েছে, যা স্মরণাতীত কালের সহযোগী অধ্যাপক পদে সর্বনিম্ন সংখ্যক পদোন্নতি।

সমস্যা সমাধানে কার্যকর ও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আজ মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) থেকে টানা তিন দিনের কর্মবিরতি শুরু হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা ক্যাডারের এক কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, ‘দীর্ঘ সাত বছর ধরে সহকারী অধ্যাপক আছি। ১৩ বছর শিক্ষা ক্যাডারে সার্ভিস দিচ্ছি। আমার পদোন্নতি দূরে থাক, সিনিয়র আরো চার ব্যাচেরও খবর নেই। কবে আমার নাম আসবে সেটি কেউ জানে না। লোকজন সহকারী অধ্যাপক শুনে খুব ইয়ং মনে করেন। সম্প্রতি এক বিশ্ববিদ্যালয় গেলাম। এক অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, তিনি আমার তিন ব্যাচ জুনিয়র।’

তিনি খুব বিব্রত হলেন জানিয়ে এ শিক্ষক আরও বলেন, ‘আমি হেসে বললাম, আমরা ভাই ইচ্ছে করে প্রমোশন নিই না। প্রমোশন নিলেই তো বুড়ো হয়ে গেলাম। এই যে আপনি এই কাঁচা বয়সে অধ্যাপক হয়ে গেছেন। বললেই কেউ বিশ্বাস করবে না। আসলে আমাদের সার্ভিসটা চিরযৌবনা। কাউকে সহজে পদ পদবিতে বৃদ্ধ হতে দেয় না।’

নামে সিভিল সার্ভিসের ক্যাডার হলেও বাস্তবে কোন ধরনের মর্যাদা শিক্ষা ক্যাডারের নেই বলেও অভিযোগ কর্মকর্তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও এক কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষা ক্যাডারে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় গ্রেড নেই। জেলা-উপজেলায় অফিস নেই, কলেজে বসার জায়গা নেই, ট্রান্সপোর্ট সুবিধা নেই, নিয়মিত প্রমোশন নেই, নিজের দপ্তরের দখল নেই। শুধু বঞ্চিত করার জন্য ‘মহান পেশা’ টাইটেল আছে। এভাবে চলতে পারে না।

প্রশাসনের আমলাদের দুষছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি 

পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনের পদে বসে থাকা আমলারা শিক্ষা ক্যাডারের সমস্যা জিইয়ে রেখে বিলুপ্ত করার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ‘আমাদের এ সার্ভিসটিকে ধাপে ধাপে বিলুপ্ত করবার একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে যে, শিক্ষা ক্যাডারের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে বা বিপন্ন করার জন্য অনেকেই উদ্যোগ নিয়েছেন।’

তিনি বলেন, সংবিধানে স্পষ্ট বলা রয়েছে যে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী সমানভাবে সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য হবেন। প্রত্যেকটি ক্যাডারের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণের কথা বলা রয়েছে। কিন্তু আমরা শিক্ষা ক্যাডারে একটি ভিন্ন চিত্র দেখেছি। অন্য অনেক ক্যাডারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য বিরাজ করছে। কিন্তু এ বৈষম্য গুলো নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশনা দিয়েছেন এবং বৈষম্যগুলো দূর করতে বলেছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে, এ নির্দেশনা অমান্য করে বৈষম্য দূর করার বদলে দিন দিন বাড়ছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে প্রশাসন যন্ত্রে যারা রয়েছেন, তাদের মধ্যে রাষ্ট্রবিরোধী দেশবিরোধী চক্র বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যাহত করার জন্য এ ডিসক্রিমিনেশন তৈরি করছে।’

শাহেদুল খবির আরও বলেন, শিক্ষা ক্যাডার ধ্বংস করার জন্য এটি  সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ। প্রশাসনে যারা ঘাপটি মেরে বসে আছে এবং সরকারের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করছে, তারা এটিকে জিইয়ে রেখেছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এ বৈষম্য দূর করতে, সেখানে এটিকে আরো উস্কে দেয়া হচ্ছে। আমাদের পদোন্নতি নিয়মিত না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আমাদের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবেই অনেককে অবসরে চলে যেতে হচ্ছে। কেউ কেউ অধ্যাপক পর্যন্ত হতে পারছেন না। এই যে একটি চরম প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা যাচ্ছেন, সেটি দূর করতে হবে।’

পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনের পদে বসে থাকা আমলারা শিক্ষা ক্যাডারের সমস্যা জিইয়ে রেখে বিলুপ্ত করার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী।

দাবি আদায় না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি 

শিক্ষা ক্যাডারের সংকট নিরসনের জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ না নিলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব মো. শওকত হোসেন মোল্যা। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছা থাকলেই সব সমস্যার সমাধান করে ফেলা সম্ভব। আমাদের যতগুলো দাবি আছে কোন কিছুই অযৌক্তিক নয়। সবগুলোই সম্পূর্ণ বিধি মোতাবেক। যে সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলোর সমাধান করার জন্য আমরা বলছি। এখানে অন্য কোন বিষয় নেই। মন্ত্রণালয় চাইলেই খুব সহজে এ সমস্যার সমাধান করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু মন্ত্রণালয় আমলারা নিয়ন্ত্রণ করছেন, তাদের মধ্য থেকেই সমস্যাটি তৈরি হচ্ছে। আমরা বিষয়গুলো নিয়ে মন্ত্রী মহোদয়সহ সংশ্লিষ্টদের অবগত করেছি। তিনি আমাদেরকে সমাধানের জন্য আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু সমস্যার সমাধান তো হয়নি বরং পদোন্নতির ক্ষেত্রে উল্টো জটিলতা তৈরি করা হচ্ছে। এটি ইচ্ছে করেই করা হচ্ছে। সর্বশেষ যেটি হয়েছে, সেটি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ বিধিমালা করে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সরাসরি প্রশাসনিক পদগুলো থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যেটি সম্পূর্ণ নিয়ম পরিপন্থী।’

এ শিক্ষক নেতা বলেন, ‘আমাদের মতামত না নিয়েই এককেন্দ্রীক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেজন্য আমরা বিষয়টিকে আমাদের অস্তিত্বের সংকট মনে করছি। এ সমস্যার আশু সমাধান না হলে পরবর্তীতে আরও বৃহৎ কর্মসূচি দেওয়া হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence