বুলিং-র‌্যাগিংয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ শাস্তি পাবেন গভর্নিং বডির সদস্যরাও

শিক্ষা মন্ত্রণালয়
শিক্ষা মন্ত্রণালয়  © ফাইল ছবি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং-র‌্যাগিংয়ের মাত্রা অনুসারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে। এ অপরাধে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গভর্নিং বডির সদস্যরা শাস্তিও পাবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র‌্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত চূড়ান্ত নীতিমালায় এমন বিধান রাখা হয়েছে। এর গেজেটের অনুলিপি দাখিল করা হয়েছে হাইকোর্টে।

গত ২৯ জুন চূড়ান্ত নীতিমালার বিষয়ে গেজেট জারি করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (আইন) আবদুল জলিল মজুমদার গত বুধবার এই নীতিমালার  অনুলিপি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার পর ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি আদেশ দেন। এতে বুলিং ও আত্মহত্যা প্রতিরোধের উপায় নির্ণয়ে নীতিমালা তৈরির জন্য অতিরিক্ত শিক্ষাসচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে দেন। ২০১৯ সালে কমিটি নীতিমালা খসড়া করে আদালতে দাখিল করে। এরপর কয়েক দফা সংশোধন করা হয়।

জানা গেছে, নীতিমালায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে ৩-৫ সদস্যবিশিষ্ট বুলিং ও র‌্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। প্রয়োজনে একাধিক কমিটি গঠন করতে পারবে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। শিক্ষা বছরের শুরুতে এবং পরবর্তীতে তিন মাস অন্তর শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করবে। বুলিং ও র‌্যাগিং হয় কিনা তা কমিটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, কাউকে উদ্দেশ করে মানহানিকর বা অপমানজনক কিছু বলা বা লেখা, যা খারাপ কোনো কিছুর ইঙ্গিত বহন করে এমন বিষয়কে মৌখিক বুলিং বোঝাবে। উপহাস করা, খারাপ নামে সম্বোধন বা ডাকা, অশালীন শব্দ ব্যবহার, গালিগালাজ, হুমকি, শারীরিক অসমর্থতা নিয়ে উপহাসের মতো বিষয় থাকবে।

আর কাউকে আঘাত করা, চড়-থাপ্পড়, শরীরে পানি বা রঙ ঢালা, লাথি, ধাক্কা, খোঁচা মারা, থুথু দেওয়া, বেঁধে রাখা, বিশেষ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে, বসে বা বিশেষ অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দেওয়া অথবা কিছু করতে বা না করতে বাধ্য করা, জিনিসপত্র জোর করে নিয়ে যাওয়া বা ভেঙে ফেলা, অশালীন বা অসৌজন্যমূলক অঙ্গভঙ্গি করার মতো বিষয় শারীরিক বুলিং হবে।

সামাজিক বুলিং ও র‌্যাগিং হবে, কারও সম্পর্কে গুজব ছড়ানো, অপমান করা, ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোত্র, পেশা, গায়ের রং, অঞ্চল বা জাত তুলে কথা বলা বা এমন কাজ। আর সাইবার বুলিং বা র‌্যাগিং সম্পর্কে বলা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটু লেখা বা ছবি বা অশালীন কিছু পোস্ট করে অপদস্থ করা।

ইচ্ছাকৃতভাবে শরীরে আপত্তিজনকভাবে স্পর্শ করা বা করার চেষ্টা, ইঙ্গিতবাহী চিহ্ন প্রদর্শন, আঁচড় দেওয়া, জামা-কাপড় খুলে নেওয়া বা বাধ্য করার মতো কাজ সেক্সুয়াল বুলিং ও র‌্যাগিং হবে। 

বুলিং ও র‌্যাগিং প্রতিরোধ ও প্রতিকারে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কিছু করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। বুলিং ও র‌্যাগিংয়ে উৎসাহিত হয় এমন কার্যকলাপ, সমাবেশ ও অনুষ্ঠান করা যাবে না। যেখানে বুলিং ও র‌্যাগিং হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেসব জায়গায় প্রয়োজনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। আবাসিক হলসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘটনার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবে।

ওয়েবসাইট এবং প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে পোস্টারের মাধ্যমে প্রচারণা চালাবে। বুলিং ও র‌্যাগিং প্রতিরোধ দিবস পালন করে এ কুফল সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবকদের শপথ নিতে হবে। সিনেমা, কার্টুন, টিভি সিরিজ প্রদর্শন, অনলাইনে দায়িত্বশীল আচরণের ব্যাপারে কর্মশালা আয়োজনের জন্য কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

শিক্ষার্থীদের এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজেও অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করবে। তাদের মধ্যে সহমর্মিতা এবং সহানুভূতিশীলতার শিক্ষা দিতে স্বেচ্ছাসেবী কাজে নিযুক্ত করতে হবে। সুনির্দিষ্ট কোনো শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাউন্সিলিংয়ের দায়িত্ব দিতে হবে। নীতিমালা বাস্তবায়নে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা পদক্ষেপ নেবেন। কর্তৃপক্ষ এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত পরীবিক্ষণ করবেন এবং নীতিমালা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন।


সর্বশেষ সংবাদ