‘সার্টিফিকেট পোড়ালে যদি চাকরি পাওয়া যায় তবে সার্টিফিকেট পোড়ানোই ভালো’

নিজের সার্টিফিকেট পোড়ানোর পর চাকরি পান ইডেন কলেজের ছাত্রী মুক্তা সুলতানা
নিজের সার্টিফিকেট পোড়ানোর পর চাকরি পান ইডেন কলেজের ছাত্রী মুক্তা সুলতানা  © টিডিসি ছবি

ইডেন কলেজের ছাত্রী মুক্তা সুলতানা সম্প্রতি তার অর্জিত সব অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট পুড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন। এরপর আজ সোমবার (২৯ মে) তার চাকরি হয় আইসিটি মন্ত্রণালয়ে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তাকে চাকরি দিয়েছেন।

এর আগে গত ২৩ মে সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে ফেসবুক লাইভে এসে নিজের সব সার্টিফিকেট পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তিনি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব সিকিউরড ইমেইল ফর গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার’ প্রজেক্টে চাকরি দেয়া হয়েছে ইডেনের এই ছাত্রীকে। এ প্রজেক্টে ‘কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল কমিউনিকেশন অফিসার’ হিসেবে ৩৫ হাজার টাকা বেতনে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তার এই চাকরির খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়ে উঠেছেন নেটিজেনরা। তারা বলছেন, চাকরি পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পথ কি তাহলে ভাইরাল হওয়া? এনটিআরসিএ নামে একটি পেজ থেকে অনেকটা হাস্যরসাত্মক ভাবে এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘সার্টিফিকেট পোড়ালে যদি চাকরি পাওয়া যায় তবে সার্টিফিকেট পোড়ানোই ভালো।’ এর সাথে সরল, যৌগিক, জটিল, মিশ্র কয়েকটা পছন্দ জুড়ে দিয়ে প্রশ্ন করেন এটা কোন প্রকারের বাক্য। 

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ লিখেছেন, ‘যারা বেকার আছেন, আসুন সবাই সার্টিফিকেট পুড়িয়ে পলক ভাইয়ের কাছ থেকে চাকরি নিয়ে নেই। তবে ছাত্রলীগের বেকার ভাইরা ভুলেও এ কাজ করতে যাবেন না। ওতে যে দলের এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।’

এর আগে, গত বছরের জানুয়ারিতে ‘দু’বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই’ শিরোনামে দেয়ালে বিজ্ঞাপন সাঁটান বগুড়ার জহুরুলনগরের মো. আলমগীর কবির। পরে সে বিজ্ঞাপনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেলে রিটেল চেইন স্বপ্নের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট পদে তার চাকরি হয় তার। বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর উদ্যোগে চাকরি হয়ে যায় তার। 

এরপর একই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে মাস্টার্সসহ সব একাডেমিক সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলার ঘোষণা দেন কিশোরগঞ্জের শারীরিক প্রতিবন্ধী আনিছুর রহমান। পড়াশোনা শেষ করে কোন চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে একাজ করতে চেয়েছিলেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায় সে স্ট্যাটাসও। পরে তারও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয় বলে জানা গেছে। পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) কেন্দ্রীয় সভানেত্রী জীশান মীর্জার উদ্যোগে চাকরি হয় তার। 

তবে ইডেন ছাত্রী মুক্তার ঘটনায় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছ থেকে নিয়োগপত্র নিলেও এভাবে ভাইরাল হওয়াকে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বলছেন তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার একাউন্ট থেকে করা পোস্টে তিনি বলেন, এক শ্রেণির মানুষ যারা নিজের যোগ্যতায় সফল হওয়ার সম্ভবনা কম তারা সফল হওয়ার জন্য ইদানিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে ভাইরাল হওয়ার পথ বেছে নিয়েছে। নিজের বিবেক, বুদ্ধি, বিবেচনা, মানবিকতা, বিসর্জন দিয়ে, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের সম্মান সবকিছুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভাইরাল হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

এদিকে এধরণের ঘটনা ‘খুবই দুঃখজনক’ উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের দেশের কিছু মানুষ আবার এদের এই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় তাদের পাশে দাড়চ্ছে এবং তাদেরকে সাপোর্ট দিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করছে। সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের নিজ যোগ্যতায় সফল হওয়া দিনে দিনে কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে। পরোক্ষভাবে আমরা বিবেক, বুদ্ধি বিবর্জিত একটা অসুস্থ এবং মানসিক বিকারগ্রস্থ জাতি গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। যা খুবই দুঃখজনক!’


সর্বশেষ সংবাদ