ভাইরাল সেন্টুর পাশে ফারাজ, কিনে দিলেন অক্সিজেন মেশিন

অসুস্থ মনিরুজ্জামান সেন্টু ও ফারাজ করিম চৌধুরী
অসুস্থ মনিরুজ্জামান সেন্টু ও ফারাজ করিম চৌধুরী  © সংগৃহীত

চট্টগ্রামের মানবিক তরুণ সমাজসেবক ফারাজ করিম চৌধুরী একের পর এক ব্যতিক্রমী কর্মকাণ্ড নিয়ে সামনে আসছেন। এসব সামাজিক কাজের মাধ্যমে তিনি দেশজুড়ে অর্জন করেছেন তুমুল জনপ্রিয়তা। তার সামাজিক এসব কর্মকাণ্ডের তথ্যচিত্র তিনি নিয়মিত ফেসবুকে শেয়ার করেন। পরিস্থিতি এমন যে, যেখানেই বিপর্যয় ঘটে, সেখানেই আশার আলো হয়ে হাজির হন তিনি।

এরই ধারাবাহিকতায় এবার রাজশাহী নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কলাবাগান এলাকার মনিরুজ্জামান সেন্টুর (৫৫) পাশে দাঁড়িয়ে ফের সামনে এসেছেন তিনি। মনিরুজ্জামান শুধু পেটের তাগিদে নয়, জীবন বাঁচাতে অক্সিজেন নিয়ে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। সেন্টুর এ সংক্রান্ত কিছু ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টিও নজর এড়ায়নি তরুণ সমাজসেবক ফারাজের।

রোববার (১৪ মে) স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার জন্য মনিরুজ্জামান সেন্টুর ছবিগুলো তোলেন এক ফটো সাংবাদিক। তারপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সেগুলো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেদিন গভীর রাত থেকেই প্রচণ্ড অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সেন্টু। মঙ্গলবার (১৬ মে) সকালে হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিছানায় বসে যখন তিনি এ সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, তখনও কথা বলতে যথেষ্ট কষ্ট হচ্ছিল তার। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনার চিত্র ছড়িয়ে পড়ার পরই ফারাজ করিম চৌধুরী ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাসে লিখেছেন, রাজশাহী নগরীতে ৭ বছর ধরে সাথে অক্সিজেন নিয়ে রিক্সা চালান তিনি। ভিক্ষার চেয়ে কর্ম করা নিশ্চয়ই অনেক উত্তম। আমি উনার পাশে দাঁড়াতে চাই। যদি উনি তা গ্রহণ না করেন তবে উনাকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করতে সহযোগিতা করতে চাই। পরবর্তীতে লাভ হলে আমার টাকা বিনা সুদে তিনি দিয়ে দিতে পারেন। আর না দিলেও অসুবিধা নেই।

আরও পড়ুন: দুর্যোগের আগেই খাবার-পানি নিয়ে প্রস্তুত ফারাজ করিম

এ পোস্টে তিনি তার সেন্টুর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার নম্বরের কথাও উল্লেখ করেন। এরপরই বুধবার (১৭ মে) ফারাজ করিম চৌধুরী ফেসবুকে অপর এক পোস্টে বলেন, মানুষটিকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, আপনাকে কিভাবে সহযোগিতা করতে পারি? তখন তিনি বলেন, অক্সিজেন মেশিন সাথে নিয়ে আমার রিকশা চালাতে হয়। আমি কাজ করে নিজের অর্থ দিয়ে জীবনযাপন করি। আমি কারো কাছ থেকে টাকা নিই না। তবে হাসপাতালেই ভর্তি হওয়ার পর ডাক্তার সাহেবরা বলেছেন একটি দামী অক্সিজেন মেশিন প্রয়োজন। এই অক্সিজেন মেশিনটি নিয়ে দিলে আমি খুব উপকৃত হবো।

পরে সে অনুযায়ী ফারাজ ৫০-৫৫ হাজার টাকা মূল্যের ওই অক্সিজেন মেশিনটি ক্রয়ের টাকা সেন্টুকে বুঝিয়ে দেন। ফারাজ বলেন, ‘‘আলহামদুলিল্লাহ! এই মানুষটির জন্য একটি অক্সিজেন মেশিন কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পেরে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’’

অক্সিজেন কেনার টাকা পেয়ে খুশি সেন্টুও। তিনি একটি ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ফারাজ করিম চৌধুরী তাকে ৫৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। তিনি তা বুঝে পেয়েছেন। এরপর তিনি বলেন এই টাকা দিয়ে মেশিন কিনে নিবেন।

অর্থবিত্তহীন সেন্টুর নিজস্ব জায়গা-জমি বলতে কিছুই নেই। গত সাত বছর ধরে রিকশা চালান, স্ত্রী চম্পাকে নিয়ে থাকেন কলাবাগান এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে। দুই মেয়ে এক ছেলেসহ তিন সন্তানের সবাই বিয়ের পর আলাদা হয়ে গেছেন। তাই রোজগারের সঙ্গে সঙ্গে জীবন বাঁচাতে অক্সিজেন আর ওষুধ কিনতে রিকশা নিয়ে তাকেই রাস্তায় নামতে হচ্ছে। কিন্তু এখন আর অসুস্থ শরীর কুলচ্ছে না।


সর্বশেষ সংবাদ