স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে: শিক্ষামন্ত্রী 

স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে: শিক্ষামন্ত্রী 
স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে: শিক্ষামন্ত্রী   © টিডিসি ফটো

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে একটা স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে; মহামারি আমাদের অনেক শিক্ষা দিয়ে গেছে। আমি মনে করি এটা আমাদের নিজদের ভিতরের দিকে, সমাজের দিকে দৃষ্টি দেয়ার যথোপযুক্ত সময়। 

মঙ্গলবার (১৬ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘এক্সেলারেটিং ব্রেডেড এডুকেশন ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা শিক্ষকদের জন্য এমন অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছি যেন তারা হাইটেক, লো-টেক এবং নো-টেক বা প্রযুক্তি সহায়তা ছাড়া শিক্ষকতা করতে পারেন। আমরা এখানে স্মার্ট শিক্ষা উন্নয়ন প্রতিবেশ নির্মাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সংযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবো বৈশ্বিক পরিসরে আদান-প্রদান ও শিক্ষা গ্রহণের জন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা একই সাথে  শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার জন্য সহজলভ্য, কার্যকর হয় এমন কৌশল আমাদের প্রণয়ন করতে হবে। 

বিভিন্ন খাতের অংশীজনদের নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ও এসপায়ার টু ইনোভেট (এটুআই’র) সহযোগিতায় আয়োজিত এ আন্তর্জাতিক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

অনুষ্ঠানে আলোচনার মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এডুকেশন, স্কিল অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের প্রধান তানিয়া মিলবার্গ এবং এটুআই-এর পলিসি উপদেষ্টা আনীর চৌধুরী। এসময় দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে কী ধরনের  উদ্যোগ নেয়া জরুরি তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান।

এসময় তানিয়া মিলবার্গ বলেন, আমাদের এক গবেষণায় দেখা গেছে বর্তমান আমাদের কাজের মাত্র ৩৪ শতাংশ প্রযুক্তি নির্ভর কিন্তু ২০২৭ সালে তা ৪৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। প্রযুক্তিগত নির্ভরতার সাথে সাথে শিক্ষাব্যবস্থাকেও স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থায় রূপ দেয়ার এ উদ্যোগে অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত। 

স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থায় ব্লেন্ডেড এডুকেশন বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের গুরুত্ব শীর্ষক প্যানেল আলোচনায়  আইসিটি বিভাগের সচিব মো. শামসুল আরেফিন বলেন, ব্লেন্ডেড এডুকেশন আমাদের দেশের প্রান্তিক এবং শহরের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার ডিজিটাল বৈষম্য দূর করবে। একজন শহরের বা উন্নত সুবিধা পাওয়া শিক্ষার্থী যে-ধরনের পড়াশোনা বা শিক্ষার সুযোগ পায় একইধরনের সুযোগ পাবে গ্রামে শিক্ষার্থীরাও। 

অনুষ্ঠানে ব্র‌্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, এটা দারুণ যে সরকারের শিক্ষামন্ত্রনালয় এই মাস্টার প্ল্যানটা নিয়েছে। এটাই আমাদের শিক্ষার জন্য পাথেয়। এটার থেকে আমাদের শিক্ষা বা জ্ঞান গুলো আমরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে শেয়ার করতে পারবো। মানুষ যতই দরিদ্র বা ক্ষুধার্ত থাকুক না কেন মানুষের মধ্যে শিক্ষা নেয়ার ক্ষুধা বেড়েছে।

শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নওফেল বলেন, কোভিড আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দিয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল তখন তিনি প্রায় শূন্য থেকে শুরু করেছিলেন। শিক্ষার্থীরা তাদের ভাইবোন বা কারো পরিত্যক্ত বই পড়তো। আমরা তাদের নতুন বই দিতে শুরু করেছি।

আমরা আমাদের স্থানীয় চাহিদা ও প্রয়োজন মতো প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা করে যাচ্ছি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, বিগত এক দশকে প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, কন্টেন্ট তৈরি, বিভিন্ন প্লাটফর্মের মাধ্যমে সারা দেশের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের কাজ করতে বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারেরা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিলো। কোভিডকালীন সময়ে পুরো বিশ্বের ন্যায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থাও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। 

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শারীরিক উপস্থিতিতে ক্লাস নেয়া অসম্ভব হয়ে যায়। এসময় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতীয়ভাবে অনলাইন, টেলিভিশন, রেডিওসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখা হয়। কোভিড পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে অনলাইন অফলাইন মিশ্রণে ব্লেন্ডেড শিক্ষার পদ্ধতির নীতি প্রণয়ন করে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নেতৃত্বে মোট ১৩টি মন্ত্রনালয় কাজ করছে ব্রেডেড শিক্ষা ও দক্ষতা মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে।

এছাড়াও এসময় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরীন আফরোজ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ, এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইংয়ের পরিচালক প্রফেসর ড. একিউএম শফিউল আজম, এবং ইডুকেশন ফোরডটজিরো বিভাগের বিশেষজ্ঞ ওস্তান লাতসিশিনসহ সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রফেসর ড. একিউএম শফিউল আজমের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মোঃ সামসুল আরেফিন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরীন আফরোজ প্রমুখ। 

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বার্ষিক সাধারণ সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বাংলাদেশ সরকারের ন্যাশনাল ব্রেডেড এডুকেশনাল মাস্টার প্ল্যান (২০১২-২০৩১) তুলে ধরেন। সেখানে বাংলাদেশে একটি এডুকেশন এক্সিলারেটর গঠনের ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ এবং বিভিন্ন বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে একটি এক্সিলারেটর গঠন করা হয়। এডুকেশন এক্সিলারেটর এর চারজন কো-চেয়ার হলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এনজিও প্রতিনিধি হিসেবে ব্ল্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারপার্সন রুবানা হক।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence