ঘরমুখো মানুষের চাপে ইফতারে আগে সড়কে যানজট
- রাকিবুল হাসান তামিম
- প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৫:৪২ PM , আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৫:৫৮ PM
‘সকালে অফিসে যাওয়ার সময়ও তীব্র যানজট ঠেলে যেতে হয়েছে৷ নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে অফিসে ঢুকেছি। এখন ঘরে ফেরার সময়ও একই অবস্থা। একদিকে যানজট অপরদিকে বাসেও জায়গা পাচ্ছিনা। রোজার প্রথম দুই কর্মদিবসেই অফিসে যেতে ও ঘরে ফিরতে প্রচন্ড ঝামেলায় পড়তে হয়েছে।’— রাজধানীর ফার্মগেট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঘরে ফিরতে বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা আওলাদ হোসেন নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা এভাবেই বলছিলেন ভোগান্তির কথা।
বুধবার (২৯ মার্চ) ষষ্ঠ রোজায় অর্থাৎ তৃতীয় কর্মদিবসে সকালে ও বিকেলে এমন ভোগান্তি কমবেশি পোহাতে হয়েছে রাজধানীর মানুষজনকে। অবশ্য এই যানজটের চিত্র শুধু আগারগাঁও, বিজয় স্মরনী বা ফার্মগেটের নয় বরং রাজধানীর অধিকাংশ মূল সড়কেই সকালে ও বিকালে যানজটে স্থবির ছিল গাড়ির চাকা। ভুক্তভোগী, অফিসগামী ও সাধারণ যাত্রীদের মুখে উঠে এসেছে এমন তথ্য। তবে ইফতারে আগে ঘরে ফেরা মানুষের চাপ বেশি থাকায় এমন যানজট হচ্ছে বলেও মনে করছেন মানুষজন।
হাসিবুল ইসলাম নামের আরেক চাকুরীজীবী বলেন, মতিঝিলের একটি আইটি ফার্মে চাকরি করি। সকালে মিরপুর ৬০ ফিট পাকা মসজিদ এলাকার বাসা থেকে বের হয়েই রিকশায় উঠেছি। সেখান থেকেই যানজট শুরু হয়েছে। সেখান থেকে আগাঁরগাও এসে বাসে উঠলেও সামনের উড়োজাহাজ সিগন্যাল পর্যন্ত আসতেই সময় লেগেছে আধাঘন্টা। রোজা রেখে এমন যানজট সহ্য করা কষ্টকর। ইফতারের আগে সবার ঘরে ফেরার তাড়ার কারণেই সড়কে এমন বাড়তি চাপ মনে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর শেরে বাংলা নগর, আগারগাঁও, বিজয় স্মনণী, জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী, বনানী, মহাখালী, গুলশান-১ সড়ক, বাড্ডা, প্রগতি স্মরণীর দুই লেন, রামপুরা, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এলাকায় তীব্র যানজট ছিলো। রমনার সার্কিট হাউজ রোড, কাকরাইলের সড়কেও ছিলো বাড়তি যানবাহনের চাপ। যে চাপ সামলাতে অনেকক্ষণ একেকটি সিগন্যাল বন্ধ রাখতে হয়েছে ট্রাফিক কর্মকর্তাদের।
রাজধানী জুড়ে যানজটের বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ বলছে, এবার রোজায় অফিসের সময় বদলেছে, রাস্তায় চাপও বেড়েছে। যে কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, তবে গত রমজানের তুলনায় এবার সড়কে চাপ কমই।
ডিএমপি’র ট্রাফিক তেজগাঁও ডিভিশনের তেজগাঁও এলাকার সহকারি পুলিশ কমিশনার স্নেহাশিষ বলেন, গতকাল বেশ ঝামেলাই ছিল। আজ সে তুলনায় বেশ ভাল। গাড়ী বেশিক্ষণ অপেক্ষায় রাখছি না। সিগন্যাল মেইনটেইন করতে যতোটুকু লাগে ততসময়ই রাখা হচ্ছে। হাতিরঝিল থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত সড়কও আগের তুলনায় বেটার।
অপরদিকে , পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে যানজট নিরসনে ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন এসব নির্দেশনার তথ্য জানান।
নির্দেশনাসমূহ হচ্ছে-
১. ঢাকা মহানগরীতে দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের অভ্যন্তরে কোনো বাসই সড়কে বাস রেখে বা থামিয়ে যাত্রী ওঠাবে না। যাত্রীরা টার্মিনালের ভেতরে থাকা অবস্থায় বাসের আসন গ্রহণ করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট বাসের প্রতিনিধিদের এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
২. ঢাকা মহানগরীতে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাসগুলো টার্মিনাল সংলগ্ন প্রধান সড়কের অংশ দখল করে দাঁড়াবেনা।
৩. ভ্রমণকালে ঢাকা মহানগরের প্রবেশ ও বাহির পথের গণপরিবহনগুলো শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে যেন কোনো অযাচিত যানজটের সৃষ্টি না হয়।
৪. আন্তঃজেলা পরিবহনের যাত্রীগণ বা গমন প্রত্যাশীদের প্রধান সড়কে এসে অপেক্ষ৷ বা দাঁড়িয়ে না থেকে টার্মিনালের ভেতরে অবস্থান করার জন্য আহবান করা হলো।
৫. ঢাকা মহানগরী থেকে দূরপাল্লার রুটপারমিটবিহীন বা অননুমোদিত রুটে কোন বাস চলাচল করবে না। বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে এ বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলবেন এবং কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করবেন।
৬. ঢাকা মহানগরী থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার যানবাহনগুলোকে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন থেকে নিবৃত থাকতে হবে।
৭. বাসের ভেতর যাত্রীদের অপরিচিত কারো কাছ থেকে কিছু না খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হলো।
৮. কোনো যানবাহনেই ছাদের ওপর অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না।
৯. সংশ্লিষ্ট যাত্রীদের অবশ্যই যানবাহনের টিকিট বহন করতে হবে।
১০. যাত্রীদের মালামাল নিজ হেফাজতে সাবধানে রাখতে হবে।
১১. যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে বাসের চালকরা এমন কোনো অসম প্রতিযোগীতায় অংশ নেবে না যেন সড়কের শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটে ও জীবনহানীর সম্ভবনা থাকে।
১২. সকালে অফিসে গমনাগমনকারী প্রত্যেককে পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে বাসা থেকে রওনা হতে হবে।
১৩. ইফতার সন্নিকটে বাসায় রওনা না দিয়ে পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে বাসার উদ্দেশে রওনা দেয়া।
১৪. স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের ক্ষেত্রে রিকশা, সিএনজি ও বাস ইত্যাদি বাহন ব্যবহার না করে পায়ে হেঁটে চলাচল করা৷
১৫. টার্মিনাল ভিত্তিক কাউন্টারগুলোতে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন করতে হবে।
এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ নগরবাসীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার কথাও উল্লেখ করে।