পিঠা উৎসবে মুখোরিত ভোলা সরকারি কলেজ
- ভোলা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:০৬ PM , আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:৩৫ PM
বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে পিঠা-পুলি। যখনই শীতের আমেজ আসে তখনি পিঠা-পুলি, পায়েস কিংবা নাড়ুর কথা আমাদের মনে ভেসে ওঠে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও নগরায়নের ফলে এই পিঠা উৎসব বিলুপ্তির পথে। বাঙালির এই পিঠা উৎসবের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে ভোল সরকারি কলেজে বর্ণাঢ্য পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভোলা সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসের ছায়াবিথী চত্বর জুড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ পিঠা উৎসব। কলেজ কর্তৃপক্ষ এ উৎসবের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে হরেক রকমের পিঠার পসরা নিয়ে বিভিন্ন স্টল সাজান কলেজের শিক্ষার্থীরা।
পিঠা উৎসবে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান, ইতিহাস, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, প্রাণীবিদ্যা, গণিত, বাংলা, ইংরেজি বিভাগ ও উচ্চ মাধ্যমিক থেকে ২টি মোট ২০টি স্টল নিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন শিক্ষার্থীরা। চারদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ। স্টলে স্টলে সারি সারি পিঠার মনোমুগ্ধকর প্রদর্শন। কেউ বানিয়েছেন নবাবি সেমাই, কেউ বানিয়েছেন হৃদয় হরন, কেউবা বাহারি গোলাপ, বউপিঠা, জামাই পিঠা, পুলি পিঠা ও চন্দ্র পুলি, চিংড়ি পিঠা , মুরালী , সতির মোচড় , চিকেন ঝাল পিঠা, কাবাবী সেমাই, পাকন পিঠা, ঝিনুক পিঠা, পাটিসাপটাসহ নানা নামের ও বিভিন্ন রংয়ের মুখরোচক পিঠা স্থান পায় স্টলগুলোতে।
আরও পড়ুন: নেতা আসে নেতা যায়— খবরের শিরোনাম পাল্টায় না ছাত্রলীগের
স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন, ভোলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম জাকারিয়া। পরে পিঠা উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করে অধ্যক্ষ প্রফেসর গোলাম জাকারিয়া বলেন, পিঠা উৎসব বাঙালিদের হাজার বছরের সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে। প্রতিবছরের মতো এবারও ভোলা সরকারি কলেজ গ্রামের পিঠা-পুলির আমেজকে ফুটিয়ে তুলতে পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছে। এই উৎসবের কারণে আমরা আমাদের গ্রামের সেই পিঠা-পুলির ঘ্রাণ নিতে পারছি, স্বাদ নিতে পারছি।
তিনি আরও বলেন, এ উৎসবে বিলুপ্তি হওয়া সহ নতুন নতুন পিঠা নিয়ে স্টল সাজানো হয়েছে। নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ পিঠা খেতে এসেছেন। আমাদের এই উৎসবে যারা এসেছেন তাদের দাবীর পেক্ষিতে প্রতিবছরই এমন বর্ণাঢ্য আয়োজন হবে।
পিঠা উৎসব উপভোগ করতে আসা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী লিজা আক্তার বলেন, বিদেশী অনেক খাবার আমাদের দেশে জায়গা করে নিয়েছে। যার ফলে মায়েদের হাতের অনেক পিঠা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। প্রতিবছর পিঠা উসবের আয়োজন করা হলে নতুন প্রজন্ম দেশি পিঠায় পরিচিত হতে পারবে।
একই বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল হান্নান বলেন, পিঠা শুধু খাবার নয়, এর সাথে জড়িয়ে আছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ুক সবার প্রাণে।
আরও পড়ুন: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার
উৎসবের এই আমেজে ভোলা সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহবায়ক এ বি এম মজিবুর রহমান জানান, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে কলেজের শিক্ষার্থীরা এ উৎসবে অংশগ্রহণ করে। বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এই উৎসবের আয়োজন। উৎসবে শিক্ষার্থীদের তৈরী স্টলগুলো ছিল নানা বৈচিত্রের পিঠার সমারোহ। এছাড়াও উৎসবে পিঠা নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরুস্কার বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, পিঠা উৎসবের এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ভোলা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ পারভিন আখতার, অধ্যক্ষ দুলাল চন্দ্র ঘোষ, অধ্যক্ষ রুহুল আমিন জাহাঙ্গীর, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ উল্ল্যাহ স্বপন, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের মো. জামাল উদ্দিন, হোসনে আরা বেগম চিনু, ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. এরশাদ ইংরেজি বিভাগে শিক্ষিকা রোকেয়া রহমান প্রমুখ। পরে অতিথিরা পিঠা উৎসবের বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।