একইদিনে ভ্যালেন্টাইন-বসন্ত, টিএসসি-বইমেলায় বসবে আনন্দের হাট
- আফরিন সুলতানা শোভা
- প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:২১ AM , আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০১:১৯ PM
বসন্ত মানেই পূর্ণতা, বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। পাতা ঝরা দিন মনে করিয়ে দিচ্ছে, বসন্ত এসে গেছে। এসেছে বাঙালির ঋতুরাজ। সারা বছর ধরে বসন্ত প্রেমিকরা অপেক্ষায় থাকেন কবে আসবে পহেলা ফাল্গুন। উৎসব প্রিয় বাঙালি এদিনে নব আনন্দে মেতে ওঠে। তাইতো দিকে দিকে চলছে বর্ণিল আয়োজন।
ঋতুরাজের আগমনী দিনে আজ আনন্দের হাট বসবে রাজধানীসহ সারাদেশের সচেতন অগ্রসর তরুণ-তরুণীদের মনে। তাদের যেন আজ কোথাও আর হারিয়ে যেতে নেই মানা।
বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে, খোঁপায় গাঁদা, পলাশসহ নানা রঙের ফুল গুঁজে তরুণীরা বেরিয়ে পড়বেন শাহবাগ, চারুকলা চত্বর, টিএসসি, পাবলিক লাইব্রেরি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বাঙালির সাংস্কৃতিক উৎসব অমর একুশে বইমেলা পর্যন্ত।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ১৪ ফেব্রুয়ারি আর পহেলা ফাল্গুন মিলে এ উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বড় এ দুই উৎসব যেন একে অপরের হাত ধরাধরি করে আসছে ধরণীতে। পরে তা যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি আর বইমেলায় এসে মিলে যায়। এ উচ্ছ্বাস শুধু তরুণ-তরুণী নয়, সবার মনেই রঙ ছড়ায় কম-বেশি। প্রতি বছর এসব এলাকায় জন সাধারণের উপস্থিতি অন্তত সেটিই বলে দিচ্ছে।
ছেলেরা লাল-হলুদ, বাসন্তী রঙা পাঞ্জাবি আর ফতুয়ায় নতুন করে নিজেদের সাজিয়ে নেমে আসবে পথে। প্রেমের ঋতু বসন্তে প্রেমিক মন আনমনে গেয়ে উঠবে- শোন গো দখিনা হাওয়া/প্রেম করেছি আমি...।
এদিকে, বসন্তের আগমনে শীত কিছুটা কমেছে। খসে পড়েছে কুয়াশার ঘোমটা। পলাশ-শিমুলও ফুটছে নিশ্চয়ই কোথাও। চারিদিকে ফুলের শোভা। অশান্ত বাতাস। বসন্তের আগমনে কোকিলের কুহুতানে মুখরিত হবে শুধু শ্যামল সবুজ প্রান্তর নয়, এই শহরও।
আর শুকনো পাতারা ঝরে গিয়ে জন্ম নেবে কচি নতুন পাতার। সেই পত্রপল্লবে, ঘাসে ঘাসে, নদীর কিনারে, কুঞ্জ-বীথিকা আর ওই পাহাড়ে অরণ্যে বসন্ত দেবে নবযৌবনের ডাক।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি হতে চান খাইরুল-পার্থ-রাজ্জাক
সেই সাথে প্রকৃতির অগণিত ফোটা ফুলের পাঁপড়ির মতো শব্দের বাগানে ফুটে অসংখ্য নতুন বই। বাঙালির মননশীলতার কাননে মুক্তচিন্তার ঝংকার যেকোন অশুভ শক্তির বিরুদ্বে উচ্ছারিত হয় বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে। ফাগুন তথা বসন্তকাল এলেই গ্রাম থেকে নগর-আবহমান বাংলার সর্বত্রই শুরু হয়ে মেলার মৌসুম। পুরো বসন্তকালে সারা দেশে বসবে লোকজ মেলা।
বসন্ত মানেই কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা। তাই তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি সব বয়সী মানুষ ঘরের বাইরে আসবেন। অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিণত হবে বাসন্তী রঙের বাগানে। রমনা পার্ক, জাতীয় সংসদ, চন্দ্রিমা উদ্যান, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেন, চারুকলার পেছনের সবুজ প্রাঙ্গণে ঘুরতে বেরুবে রাজধানীবাসী। আজ ঘরকুণো মানুষটিও হয়তো ঘর ছেড়ে বের হবেন। পলাশ-শিমুলের রঙে রাঙিয়ে নেবেন মন।
বসন্ত শুধু অশোক-পলাশ-শিমুলেই উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায় না, আমাদের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তের উপরও রং ছড়ায়। এই বসন্তে বাঙালির দ্রোহ প্রেম আর দেশপ্রেমের অনন্য নজির রয়েছে।
কেননা আমাদের ভাষা- স্বাধীনতা সংগ্রাম এই বসন্তে শুরু হয়েছিল। ১৯৫২ সালের ৮ ফাল্গুন ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা ‘বাংলা’র জন্য রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, সফিকসহ নাম না জানা আরও অনেকে। সে আত্মত্যাগ আজ বিশ্বস্বীকৃত। একুশের পলাশরাঙা দিনের সঙ্গে তারুণ্যের সাহসী উচ্ছ্বাস আর বাঁধভাঙা আবেগের জোয়ারও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে।
প্রতিবছর বসন্তেই আমরা হৃদয়ের শতত আবেগ নিয়ে ভাষা শহীদদের স্মৃতির স্মরণে আমরা গেয়ে উঠি অমর সে গান- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভূলিতে পারি.....? তাই বসন্ত উৎসব শুধু একটা উৎসব নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য।