ইহুদীদের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা নিয়ে কীভাবে বড় ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হব?

ড. কামরুল হাসান মামুন
ড. কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ফটো

কয়েকদিন আগে পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি লেখা পড়ে বিস্মিত হয়েছিলাম। এতটাই বিস্মিত হয়েছিলাম যে কোন কিছু তখন লিখতে পারিনি। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ যে মুন্সিগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান ক্লাস নিচ্ছিলেন সিনিয়র বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডল।

ক্লাসের এক পর্যায়ে প্রসঙ্গক্রমে শিক্ষার্থীরা দাবী করছিল যে কোরআন থেকে বিজ্ঞান উৎপত্তি হয়েছে এবং সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী হযরত মোহাম্মদ (সঃ)। এর জবাবে শিক্ষক হৃদয় মন্ডল তার ছাত্রদের বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন ধর্ম আর বিজ্ঞান আলাদা জিনিস। কোন ধর্ম থেকেই বিজ্ঞানের উৎপত্তি হয়নি বা বিজ্ঞান থেকে ধর্মের উৎপত্তি হয়নি। ধর্ম হলো বিশ্বাস আর বিজ্ঞান হলো প্রমাণিত বাস্তবতা।

আর বর্তমান যুগের ৯০% বিজ্ঞানী ইহুদি, খ্রিস্টান। তারাতো কোরান পড়েনা। আচ্ছা বলুনতো এর মধ্যে কোন সমস্যা দেখছেন? এই কথাতো হৃদয় বণিক আজ নতুন বলেননি। এই কথাতো অহরহ অনেকেই নানা সময় আড্ডায়, ক্লাসে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন। কখনো কারো কোন সমস্যাতো হয়নি।

কিন্তু এর মাঝে একটি নতুন ঘটনা ঘটে। দশম শ্রেণীর সেই ক্লাসের কোন এক ছাত্র গোপনে হৃদয় বণিকের এই বক্তব্য রেকর্ড করে। চিন্তা করে দেখুন কেমন মানের ছাত্র আমরা এখন পয়দা করছি। ইচ্ছে করে শিক্ষককে প্রশ্ন করা হয় এবং উদ্যেশপ্রণোদিত ভাবে সেই প্রশ্নের উত্তর রেকর্ড করা হয়। আমাদের ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্কের মান তথা শিক্ষার মান কোন পর্যায়ে নেমেছে কেবল এই ঘটনাটিই উৎকৃষ্ট প্রমান হতে পারে। একজন বিজ্ঞানের শিক্ষক ঠিক যেমন উত্তর দেওয়ার কথা শিক্ষক হৃদয় বণিক ঠিক সেই উত্তরটিই দিয়েছিলেন সেদিন। এইটা আমাদের সৌভাগ্য যে এইরকম বিশ্বমানের উত্তর দেওয়ার মত শিক্ষক এখনো সেই অজপাড়াগাঁয়ে আছে। অথচ এই ভালো উত্তরের জন্য তার বিচারের দাবিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তারই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে। সবচেয়ে দুৰ্ভাগ্যজনক হলো এ ঘটনায় শিক্ষক হৃদয় মন্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: সন্তানদের সময় দিতে চাকরি ছাড়লেন বিসিএস ক্যাডার মা

কি লজ্জার! অথচ সারা দেশের বিজ্ঞানের শিক্ষকরা কোথায়? অনেক বড় বড় বিজ্ঞানের শিক্ষক আছে কিন্তু মুখে তালা। এর সুদূরপ্রসারী কি ফল আমাদের ভোগ করতে হবে তা বুঝতে পারছেন? আরেক শিক্ষক শুনেছি শিক্ষকতার চাকুরীটিই ছেড়ে দিয়েছেন। কেন? তিনিও বিজ্ঞান পড়ান। সেখানে কথা উঠেছে মানুষের উদ্ভব কেন এক কোষী প্রাণী থেকে হবে? কোরানেতো তা লেখা নাই। ওই শিক্ষককে বলা হয়েছিল আপনি ভুল জেনেছেন। তিনি ছাত্রদের বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু একই সাথে ধর্ম অবমাননার ভয়ও পেয়েছিলেন। পরে চাকুরীটাই ছেড়ে দিলেন। ভেবেছিলেন একটু ভালো খেয়ে ভয়ে বাঁচার চেয়ে একটু কম খেয়ে স্বস্তিতে থাকা শ্রেয়।

মাঝে মাঝে ভাবি এই দেশটা কোন দিকে যাচ্ছে? কয়েকদিন আগে দেখলাম পর্দাশীল নারীরা দাবি করেছে পরিচয়পত্রে ছবির বদলে বায়োমেট্রিকের ব্যবহার চান। আচ্ছা এই বায়োমেট্রিক আবিষ্কার করল কারা? বিধর্মীরা যদি ঐটা আবিষ্কার না করতো তাহলে কি দাবি জানাতেন? মানুষের নাম এবং চেহারা হলো একটা মানুষের পরিচয়। সারা বিশ্বের পাসপোর্টে মানুষের ছবি দিয়ে ইডেন্টিফাই করা হয়। উনারা যখন হজ করতে বিদেশে যাবেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন তখন কি করবেন? তাই বলিকি একটা কাজ করেন।

আরও পড়ুন: রমজানে ক্লাসের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে: শিক্ষামন্ত্রী

এই দেশে বিজ্ঞান একদম নিষিদ্ধ করে দিন। তাহলেইতো লেটা চুটে যায়। স্কুলের বাচ্চাদের মাথায় তখন আর কোন প্রশ্ন ঘুরপাক খাবে না। যা শেখানো হবে তাই তোতা পাখির মত মুখস্ত করবে। আমাদেরকে বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি হতে হলে আমাদেরকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে হবে আর উচ্চশিক্ষায় আমাদেরকে ইহুদী খৃস্টানদের লেখা বই পুস্তক পড়তে হবে। ইহুদি নাসারাদের লেখা বই না পড়ে কেউ বড় ডাক্তার, বড় ইঞ্জিনীয়ার, বড় বিজ্ঞানী হতে পারবেনা। এদের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা মনের মধ্যে পোষণ করে এইসব পড়ে কিভাবে আমরা বড় ডাক্তার, বড় ইঞ্জিনীয়ার, বড় বিজ্ঞানী হব? এইজন্যই আমাদের বড় ডাক্তার, বড় ইঞ্জিনীয়ার, বড় বিজ্ঞানী নাই।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence