জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্র রাজনীতি

মো. নিজাম উদ্দিন
মো. নিজাম উদ্দিন  © সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রভাব ছাত্র রাজনীতিতেই সবচেয়ে বেশি পড়বে। তরুণদের রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে এবং বাড়বে -এটা একটা ভালো সংবাদ। তরুণরা রাজনীতি নিয়ে ভাবে না, তরুণদের রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ নেই -এই ধরনের অভিযোগের এক চূড়ান্ত পর্বে তরুণরাই সবচেয়ে বড় ভূমিকাটা রেখেছে।জীবন দিয়েছে। চোখ, হাত, পা হারিয়েছে। নিখোঁজ হয়েছে। কেউ কেউ গণকবরে নিখোঁজ লাশের মিছিলে! গর্ব আর অহংকার করার মতো একটি প্রজন্ম এদেশের আলো বাতাসে বড় হয়েছে, এই জাতির জানা বুঝার অগোচরেই!

লড়াইয়ে অংশ নেয়া তরুণদের স্বপ্ন পূরণের রাজনৈতিক এজেন্ডা ছাড়া আগামী দিনের রাজনীতিতে কেউ টিকে থাকতে পারবে না। প্রত্যাশা পূরণের রাজনীতির ব্যবস্থা না হলে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের পরিণতি খুব ভয়াবহ হবে। হ্যাঁ, খুব খারাপ হবে। 

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে জনগণের রাজনৈতিক দল বলতে ছাত্রসংগঠন গুলোকেই বুঝায়।ছাত্ররাই একমাত্র বিভক্তির সব দেয়াল ভেঙ্গে এক কাতারে দাঁড়িয়ে যেতে পারে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান সেই নজীর স্থাপন করেছে।

ছাত্র রাজনীতি থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ এবং দখলের সংস্কৃতিকে বিদায় জানিয়ে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার সময় এখনই। বাংলাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থান রাষ্ট্র মেরামতের যে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এমন সুযোগ কোনো জাতির জীবনে খুব কমই আসে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান অভ্যুত্থান পরের বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রভাব রাষ্ট্র এবং সব দলের উপরই পড়বে। পলিটিক্সকে রাষ্ট্র এবং সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার একটা মাধ্যম হিসেবে দাঁড় করাতে না পারলে যে কোনো রাজনীতিই এখন এখানে শেষ হয়ে যাবে।বিশেষ করে ছাত্ররাজনীতির গুণগত পরিবর্তন লাগবেই। ছাত্ররা পড়াশোনার পাশাপাশি দেশ গঠনের কাজে কীভাবে যুক্ত হতে পারে আগামী দিনে ছাত্র রাজনীতির ভিত্তি হতে হবে এগুলো। নতুন চিন্তা, নতুন পলিসি, নতুন রাজনীতি বিনির্মাণ তরুণদের কাজ।সেটা রাষ্ট্র, সরকার এবং দলে সবখানে। 

ছাত্ররাজনীতি হতে হবে ছাত্রদের সমস্যা সমাধানের জন্য। ছাত্ররাজনীতি থেকে লুটপাট, দখল, সন্ত্রাস এবং মাদককে সমূলে বিদায় জানাতে হবে।জাতির বৃহত্তর স্বার্থে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মতো বুক টান দিয়ে যেকোনো ধরনের ফ্যাসিবাদকে চ্যালেঞ্জ করার হিম্মত থাকতে হবে।  কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে নতুন হল ও ভবন,মানসম্মত ক্লাস রুমের ব্যবস্থা, শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি নিয়ে ছাত্র সংগঠনকে কথা বলতে হবে। নতুন শিক্ষা নীতি, অধিক কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সময়োপযোগী কারিকুলাম নিয়ে ছাত্র সংগঠন গুলোকে কথা বলতে হবে। ক্যান্টিনে স্বল্প মূল্য স্বাস্থ্য সম্মত  খাবারের নিশ্চয়তা নিয়ে ভাবতে হবে ছাত্র সংগঠন গুলোকে।

শিক্ষাঙ্গনে গেস্ট রুম কালচার,রেগিং কালচার,গণরুম বিলুপ্তি করে মানসম্মত আবাসিক সুবিধা এবং জোর করে মিছিলে নেওয়ার ছাত্র রাজনীতির করব রচনা করতে হবে। 

কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে ছাত্র নেতারা শিক্ষার্থী,শিক্ষক এবং ক্যাম্পাসের মধ্যে ভালো কাজের প্রতিযোগিতায় থাকবে। ছাত্র সংসদের মাধ্যমে উঠে আসা নেতৃত্ব ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। একটি ন্যায় ভিত্তিক সমাজ হঠাৎ আকাশ থেকে পড়বে না,ধারাবাহিক চর্চার মাধ্যমেই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে। স্বচ্ছ এবং পরিচ্ছন্ন রাজনীতি ছাড়া রাষ্ট্র মেরামতের কোনো উদ্যোগই কাজে আসবে না। এর জন্য প্রয়োজন এমন একদল রাজনৈতিক কর্মী যাদের কাছে ক্ষমতা এবং রাষ্ট্রের সম্পদ একটি পবিত্র আমানত।

দলের, রাষ্ট্রের এবং সরকারের পলিসি নিয়ে ছাত্র সংগঠন গুলোর মধ্যে পলিসি ডিবেট হওয়া প্রয়োজন। ভিন্নমত সহ্য করার রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ একমাত্র ছাত্রসংগঠন গুলোই করতে পারে। অসহায়, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ছাত্র জীবনকে সুন্দর করার ছাত্র রাজনীতি করতে হবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কমিয়ে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়ানোর ছাত্র রাজনীতি করতে হবে। ছাত্র সংগঠন গুলো ন্যাশনাল সিকিউরিটির অনেক বড় অংশ। একেকটা ছাত্র সংগঠন একেকটা সামরিক বাহিনীর মতো। জাতির প্রয়োজনে নিঃস্বার্থ ভাবে জীবন বিলিয়ে দেওয়ার হিম্মত ছাত্র সমাজ যুগে যুগেই রেখেছে।জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ এবং আহতদের তালিকায় তরুণ শিক্ষার্থীরাই বেশি। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির গতিপথ কেমন হবে? তা,নিয়ে অবশ্যই নতুন করে ভাবতে হবে।নতুন চিন্তা, নতুন পলিসি,নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি ছাড়া নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ অসম্ভব!

লেখক: সহ-সভাপতি, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ


সর্বশেষ সংবাদ