প্রাথমিক শিক্ষাই শিশুদের হাসি ও স্বপ্নকে অটুট রাখবে

সাইফুল ইসলাম তালুকদার
সাইফুল ইসলাম তালুকদার  © ফাইল ছবি

আজ (১৭ মার্চ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস ২০২৪ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হচ্ছে। দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করতে নানান প্রস্তুতি নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান। এ বছর দিবসটির নির্ধারিত প্রতিপাদ্য: 'বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে আনব হাসি সবার ঘরে'। 

প্রতিপাদ্যকে বিশ্লেষণ করলে যেটা পাই তাহল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে ধরতে হবে এবং সেই স্বপ্ন ধরতে পারলেই সবার ঘরে হাসি ফুটবে।  সেই জন্যই শুরুতেই জানতে হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আসলে কি ছিলো? মোটাদাগে 'সোনার বাংলা' বলা হলেও এই সোনার বাংলার ব্যাপকতা সত্যিই ব্যাপক। সময়ের সাথে তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে রূপান্তরিত হয়ে হয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ। 

মানুষকে ভালোবাসা এবং মানুষের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়াই ছিল বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্ন। শৈশবেই তার মাঝে এ ভালোবাসার বুনন হয়। যে ছেলেটি দরিদ্র, রোদ-বৃষ্টিতে কষ্ট পাচ্ছে, তাকে নিজের ছাতাটি দিয়ে দিতেন তিনি। টাকার অভাবে বই কিনতে না পারা ছেলেটিকে দিয়ে দিতেন নিজের বইপত্র। এমনকি একদিন ছেঁড়া কাপড় পরা এক ছেলেকে নিজের পরনের জামাটি খুলে দিয়ে নিজে চাদরখানা পরেই বাড়ি ফিরেছিলেন। কারণ দুঃখী মানুষের কষ্ট তার হৃদয় র্স্পশ করত।

পাকিস্তানে ৯ মাস কারাবরণ শেষে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়ার প্রথম ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, “নতুন করে গড়ে উঠবে এই বাংলা,বাংলার মানুষ হাসবে বাংলার মানুষ খেলবে বাংলার মানুষ মুক্ত হয়ে বাস করবে বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাবে এই আমার সাধনা এই আমার জীবনের কাম্য আমি যেন এই কথা চিন্তা করেই মরতে পারি এই আশীর্বাদ এই দোয়া আপনার আমাকে করবেন।”

বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক ক্ষমতায় আসার পর শিশুসহ দেশের সব নাগরিকের অধিকার দেওয়া হয় বাংলাদেশের সংবিধানে। শিশুর অগ্রগতির বিধান প্রণয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় সংবিধানের ২৮(৪) অনুচ্ছেদে। রাষ্ট্রপরিচালনার নীতিতে শিশুর জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাসহ মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা, সুযোগের সমতা, অধিকার ও কর্তব্যের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণ করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের মুখে হাসি ফুটাতে এবং শিক্ষাকে আনন্দদায়ক করতে পরিমার্জিত হয়েছে শিক্ষাক্রম। পরিমার্জিত হয়েছে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা। প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কৌশল হয়েছে আধুনিক ও স্মার্ট।  নাম দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য মৌলিক প্রশিক্ষণ-বিটিপিটি। এই বিটিপিটি বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করছে দেশের ৬৭ টি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (পিটিআই) এর প্রশিক্ষকবৃন্দ (ইন্সট্রাক্টর)।  জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বিত প্রয়াসেই পরিচালিত হচ্ছে শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ।  দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকরাই গড়ে তুলবে এমন এক শিক্ষা পরিবেশ যেখানে শিশুদের জন্য হবে আনন্দদায়ক ও সৃজনশীল শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থাকবে। শিশুদের মুখে হাসি থাকবে। বিদ্যালয়ে আসতে ভয় পাবে না বরং আসার জন্য প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। শিশুদের পরীক্ষা ভীতি থাকবে না। মূল্যায়ন হবে নানান ধাপে।  কে কতটা পাঠ্যবই মূখস্ত করতে পারলা তা থাকবে না বরং কে কতটা খেলাধুলায় অংশ নিলো,একে অপরকে কতটা সহযোগিতা করলো,কে কতটা মানবিক হয়ে উঠলো তার পরিমাপকই মূল্যায়ন। 

শিশু এখন ৪ বছর হলেই বিদ্যালয়ে আসা শুরু করবে। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হলো বিদ্যালয় ভীতি দূর করে বিদ্যালয়ের শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। শিশুরা আনন্দের সাথে শিখবে, পড়বে, নাচবে, গাইবে। শিশুরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে ধরে আগামীর ভিত রচনা করবে। মুখে হাসি বুকে বল নিয়ে বড় হবে।  শিশুদের আনন্দদায়ক শিক্ষা দিতে দরকার আনন্দদায়ক ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক। স্বপ্নবান একঝাঁক মানুষ গড়ার কারিগর। আর সেই মানুষ গড়ার কারিগর তৈরি করতেই দেশের প্রাইমারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (পিটিআই) গুলো কাজ করে যাচ্ছে নব উদ্যমে, নব প্রয়াসে। যাদের পেছনে অতন্দ্র প্রহরীর মতো আছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদ্য যোগদানকৃত মাননীয় প্রতিমন্ত্রী এবং প্রাথমিক শিক্ষা  অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পুরো প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে আনবে এবং শিশুদের হাসি ও স্বপ্নকে অটুট রাখবে প্রাথমিক শিক্ষাই। 

লেখক: ইন্সট্রাক্টর (জেনারেল), কুমিল্লা পিটিআই।


সর্বশেষ সংবাদ