শিক্ষক নিয়োগে সাইকো-ইথিক্যাল ফ্যাক্টর: সুস্থ প্রজন্ম গড়তে এক প্রভাবক
- তাহমিদ তাজওয়ার
- প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৩, ০৬:৪৬ PM , আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩, ০৬:৪৬ PM
প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সাইকো-ইথিক্যাল ফ্যাক্টরের বিবেচনা অত্যন্ত জরুরি। এর দ্বারা প্রার্থীর মনঃনৈতিক অবস্থার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়ে উঠে। শিক্ষকতা পেশাটি সামাজিক, নৈতিক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অন্যতম গ্রহণযোগ্য, সৎ এবং ক্ষেত্রবিশেষে সবচাইতে সম্মানজনক পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এই পেশায় যে শুধুমাত্র গৎবাঁধা সিলেবাসে পাঠ্যক্রমানুসারে শিক্ষার আলো একজন শিক্ষক বিচ্ছুরণ করেন; এমন না, বরং সিলেবাসের বাইরে গিয়ে জীবনের নানাদিকের বিষয়গুলো সম্পর্কে একজন শিক্ষার্থীর দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়ন, বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ, ভালো-মন্দের বোধ তৈরি এবং আদর্শের স্ফূরণ ঘটাতে সহায়তা করে থাকেন। ফলস্বরূপ একটি আদর্শ জাতি গঠন থেকে শুরু করে সুস্থ সমাজ ব্যবস্থার বীজ বপন হয়ে থাকে। আর এসব বিভিন্ন ক্ষেত্রের পূর্ণ বিকাশ সাধনে শিক্ষকের মানসিকতা, মূল্যবোধ, চারিত্রিক ও নৈতিক দিকগুলো বড় ভূমিকা পালন করে। যদি এই দিকগুলোর কোনো প্রকার বিচ্যূতি থেকে থাকে, তো শিক্ষার উদ্দেশ্য শুরুতেই বিফলে চলে যাবার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
শিক্ষার উদ্দেশ্যকে যদি ব্যবচ্ছেদ করা হয়, তবে সেখানে বস্তুনিষ্ঠ শিক্ষার চাইতে মানবিক এবং আদর্শিক শিক্ষাই একটি সুস্থ, সুন্দর এবং সফল জাতি গঠনে অধিক ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করবে। আর শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত এটাই।
আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা সরকারের নেই: শিক্ষামন্ত্রী
সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘিরে চাওড় হয় নানাপ্রকার ন্যাক্কারজনক ঘটনা এবং খবর। বিশেষ করে শিক্ষকের সাথে নারী শিক্ষার্থীর কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ পায় বিভিন্নসময়। সমাজ ব্যবস্থার দিকে লক্ষ্য রাখলে দেখা যাবে প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও এরূপ ঘটনা ঘটছে। যা শিক্ষাঙ্গনের মতো পবিত্র জায়গায় ঘৃণাকর এবং মানহানিকর অবস্থার সৃষ্টি করছে। এর দরুন লজ্জিত হতে হচ্ছে সচেতন অভিভাবক এবং আদর্শ শিক্ষকবৃন্দকে। সমাজের মূল্যবোধর অঙ্কুরোদগম হয় যে শ্রেণির হাতে ধরে, খোদ সে শ্রেণির পক্ষ থেকে এহেন কাজ সম্পাদন হওয়া জাতির জন্য বড় একটা ধাক্কা। চিড় ধরে যায় বিশ্বাস ও ভরসার জায়গাতে।
'ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থা এবং পারস্পরিক সম্মতি থাকলে যেকোনো কিছু সম্ভব'- এরকম চিন্তা চেতনার নগ্নরূপ দেখতে পাচ্ছি আমরা। যা আসন্ন ঘুণে ধরা সমাজের কাঠামোকে নির্লজ্জভাবে প্রকাশ করছে। এরূপ অবস্থার উত্তরণে প্রয়োজন সঠিক মূল্যবোধ, আদর্শে, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির বহুল চর্চা। যা ঢাল হিসেবে কাজ করবে সম্মতিসূচক যেকোনো কাজের বৈধতা এবং ভোগবাদী চিন্তা-চেতনার প্রসারকে রুখতে। পাশাপাশি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে প্রয়োজন মানসিক দক্ষতা এবং নৈতিকা ও মূল্যবোধ পরীক্ষার সংযোজন ঘটানো। এর ফলে ভাইভা বোর্ডে নিয়োগ কমিটিতে থাকা দায়িত্বরত লোকজন কমপক্ষে একজন ব্যক্তির সাইকোলজিক্যাল কন্ডিশান তথা মানসিক অবস্থার চিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে পারবে যে আবেদনকারী মানসিকভাবে কতটুকু যোগ্যতাসম্পন্ন?
তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে সুস্থ সুন্দর আদর্শের প্রসারে কতটুকু ভূমিকা পালন করতে পারবে? শিক্ষার্থীরা উক্ত ব্যক্তির দ্বারা ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত হতে পারবে কি না? এ ধরণের পরীক্ষা সাধারণত বাংলাদেশ আর্মিতে ISSB নিয়োগের ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে। সময়ের দাবিতে এখন এটি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলেও শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় সংযোজিত হবার চাহিদা সৃষ্টি করেছে। কেন না, শুধুমাত্র পাঠ্য-পুস্তক নির্ভর জ্ঞান যেমন ব্যাবহারিক শিক্ষার পূর্ণতা দিতে পারে না, ওমনিভাবে আদর্শ এবং মূল্যবোধের ঘাটতি সম্পন্ন একজন শিক্ষক তাঁর শিক্ষকতা পেশার মূল্যায়ন যথাযথভাবে করতে ব্যর্থ হোন। আর সঠিক আদর্শ এবং মূল্যবোধই একটি দেশ, সমাজ ও জাতি গঠনের ভিত্তি। ভিত্তি যদি নড়বড়ে হয়ে যায় কোনোভাবে, তবে পতনের আওয়াজ শুনতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। এক নৈতিকতা, মূল্যবোধহীন প্রজন্ম কুড়ে কুড়ে খাবে গোটা সমাজব্যবস্থাকে।