নেপালের রেমিট্যান্স যোদ্ধা বনাম বাংলাদেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা
- মোহাম্মদ হোসাইন
- প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৪:৩৪ PM , আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৪:৩৪ PM
গত ১৫ বছরে এ পর্যন্ত প্রায় ৭-৮ বার নেপাল সফর করেছি। কিন্তু এবার ছাড়া প্রত্যেকবারেই প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে গিয়েছি। এবার একাই একটি আন্তর্জাতিক জলবিদ্যুৎ সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে কোন রকম প্রোটোকল সুবিধা ছাড়াই যাই। ফলে ইমিগ্রেশেনের স্বাভাবিক নিয়ম অনুসরণ করে দেশে আসি।
তখন একটি বিষয় লক্ষ্য করলাম। ইমিগ্রেশনের ১০-১২টি কাউন্টারের মধ্যে অন্তত ৪টি কাউন্টার রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত আছে। অন্যসব কাউন্টারে ভিড় থাকলেও Foreign Employment কাউন্টারে কোন ভিড় বা ভোগান্তি নেই। তখন এই বিষয়টির সাথে আমাদের কাঠমুন্ডুসহ দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের সাথে মিল খুঁজে পাই।
আমি ১৫ দিন আগেও বিদ্যুৎ সচিব মহোদয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ-নেপাল যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে নেপাল যাই। তখন প্রতিনিধিদলের সম্মানে মান্যবর রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রিত ডিনারে তিনি অনেক খোলামেলা মত বিনিময় করেন। সেখানে তিনি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রতি নেপালের দৃস্টিভঙ্গী শেয়ার করেন।
আরও পড়ুন: যে কারণে মেধা পাচার বাড়ছে বাংলাদেশ থেকে
তিনি জানান যে, সেখানে বিদেশে চাকরি প্রত্যাশীদের সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় পাঠানো হয় এবং কোনরকম দালালের খপ্পরে পড়ার সুযোগ নাই। তাছাড়া যারা যায় তারাও মেয়াদ শেষে সবাই দেশে ফেরত আসতে হয় বিধায় নিয়োগকারী দেশসমূহ ও নেপাল থেকে লোক নিতে উৎসাহিত হচ্ছে। ফলে নেপালের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স একটি প্রধানতম খাত হিসেবে দিনদিন জোরালো হচ্ছে।
আর বিমানবন্দরে তাদের জন্য এক্সক্লুসিভ কাউন্টার রাখাই প্রমাণ করে নেপাল কতটুকু রেমিট্যান্স যোদ্ধাবান্ধব। অথচ আমাদের বিমানবন্দরে তার বিপরীত চিত্র ও তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শুনা যায়। আমার এক ভাতিজির স্বামী সেনাবাহিনীর মিশনে কর্মরত একজন কর্মকর্তা। সে স্বামীর কাছে বেড়িয়ে দেশে ফেরত আসার সময় ইমিগ্রেশনে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সাথে দুর্ব্যবহারের কথা শেয়ার করলো।
সে বললো সে লাইনের অনেক পেছনে ছিলো। কিন্তু কর্তব্যরত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে তাকে সামনে ডেকে এনে তার ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করলো। এতে সে ব্যক্তিগতভাবে সুবিধা পেলেও রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রতি দুর্ব্যবহার তাকে ব্যথিত করেছে।
আমরা এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে সিটিজেন চার্টার ও শুদ্ধাচার চর্চা চালু করলেও এর প্রকৃত প্রতিফলন ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে আমাদের বৈদেশিক আয়ের একটি বড় অংশ রেমিট্যান্স থেকে আসে বিধায় রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রতি আমাদের আরো যত্নবান হওয়া এখন সময়ের দাবি। [ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত]
লেখক: মহাপরিচালক, পাওয়ার সেল, বিদ্যুৎ বিভাগ