এসএসসি পরীক্ষায় হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে ভালো ফলাফল করার উপায়
- নাজমুল হাসান গোলজার
- প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৭ PM , আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৭ PM

আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। শিক্ষা জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি সমীক্ষা সামনে সমাগত। এ পরীক্ষার ফলাফল ভবিষ্যতের শিক্ষা ও ক্যারিয়ারের ভিত্তি তৈরি করে। অনেক সময় দেখা যায়, সময়ের অভাবে অনেক পরীক্ষার্থী সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে না যার ফলে পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল করতে ব্যর্থ কিন্তু অল্প সময়ের সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশল ব্যবহার করে ভালো ফলাফল করা সম্ভব। পরীক্ষার পূর্ব কাজ হল বারবার পাঠ অনুশীলন করা, আত্মবিশ্বাসী হওয়া, চিন্তা মুক্ত থাকা ও নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল থাকা। হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে কিছু লিখছি,পড়ে মনে রাখবে, ভালো ফলাফলে কিছুটা হলেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
নম্বর বিভাজন
পরীক্ষা সৃজনশীল অংশে প্রশ্ন থাকবে মোট ১১ টি। এখানে বিভাগ থাকবে দুটি: ক- বিভাগ ও খ -বিভাগ। ক-বিভাগে যে প্রশ্নগুলো আসে তা হলো আবশ্যক প্রশ্ন যা তোমাকে উত্তর দিতেই হবে যদি তুমি ৭০ নম্বর বা পূর্ণ নম্বরের উত্তর দিতে চাও। আর যদি তুমি ‘ক’ বিভাগ বাদ দিয়ে উত্তর করতে চাও তাহলে তোমাকে ৫ টি প্রশ্ন উত্তর করতে হবে সেক্ষেত্রে তুমি ৫০ নম্বরের সুযোগ পাবে। ‘ক’ বিভাগে আর্থিক বিবরণী অধ্যায়টি অন্তর্ভুক্ত। এ অধ্যায় হতে দুটি প্রশ্ন থাকবে দুটি প্রশ্নেরই উত্তর দিতে হবে বিকল্প কোন অপশন নেই। যারা হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে এ+ পাওয়ার প্রত্যাশা করো অবশ্যই দশম অধ্যায় হতে আবশ্যিক দুটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিবে। এর জন্য প্রতিনিয়ত চর্চায় রাখবে অধ্যায়টি।
খ-বিভাগ দশম অধ্যায় অর্থাৎ আর্থিক বিবরণীর অধ্যায় বাদ দিয়ে টেক্স বইয়ের অবশিষ্ট অধ্যায়গুলো হতে মোট ৯টি প্রশ্ন হতে ৫টি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সুযোগ পাবে। ‘খ’ বিভাগে ভালো করার জন্য ২,৩,৪,৬,৭,৮ ও ৯ অধ্যায় বেশি বেশি চর্চা করবে। ৫টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে। আর যারা দুর্বল বা হিসাববিজ্ঞান নিয়ে ভয় পাও তাদের জন্য ২,৩,৬ও ৯ অধ্যায় বারবার চর্চা করবে। আশা করি ভয়কে জয় করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।
নৈর্ব্যক্তিক অংশে ৩০ টি প্রশ্ন থেকে ৩০ টির উত্তর দিতে হবে। সৃজনশীল প্রশ্ন থেকে এমন ম্যাথ বাছাই করবে যেন ২০ মিনিটের মধ্যে প্রতিটি প্রশ্নের (ক+খ+গ) সঠিক উত্তর দিতে পারো। নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই পড়ে যেটি নিশ্চিত পারবে সেটি সঙ্গে সঙ্গে সঠিক উত্তর দিতে চেষ্টা করবে। সময়ের প্রতি খেয়াল রেখে তাড়াহুড়া না করে প্রতিটি প্রশ্ন ভালোমতো পড়ে সঠিক উত্তর দেবার চেষ্টা করবে। প্রশ্নের কমিক নম্বর ও উক্ত প্রশ্নের সঠিক উত্তরের জন্য যথাযথ বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কিনা অথবা প্রশ্ন যে কোন একটি বাদ দিয়ে পরবর্তী প্রশ্ন হতে উত্তর দেওয়া এমন ভুল যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বৃত্ত ভরাট শেষ হলে গণনা করে দেখবে ৩০টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছ কিনা। একই প্রশ্নের ডাবল বৃত্ত ভরাট করবে না।
সময়ের সদ্ব্যবহার
যেকোনো পরীক্ষায় ভালো করার পূর্ব শর্ত হচ্ছে সে বিষয়ে যথাযথ মনোযোগ দিয়ে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া। হিসাববিজ্ঞানের জন্য তার ব্যতিক্রম নয়। সব অধ্যায়ের ম্যাথ সমূহ বারবার রিভিশন দাও, সময় কি কাজে লাগাও,বেশি বেশি চর্চা করে জ্ঞানের ভান্ডার করো সমৃদ্ধ। এতে ম্যাথগুলোর উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়বে।
যথাযথ ছকে ম্যাথ করার অভ্যাস
ছক ম্যাথের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। হিসাববিজ্ঞানে যতটুকু সময় দিচ্ছ তার পুরোটাই কাজে লাগাবে ম্যাথগুলো যথা নিয়মে ছক কেটে খাতায় উপস্থাপন করবে। বাসায় প্রতিদিন ছক কেটে ম্যাথ অনুশীলন করতে ছকের পেছনে নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখতে হবে। এতে ভালো অভ্যাসে পরিণত হবে বিরক্ত ভাব আসবে না, পরীক্ষায় বিশাল ছক কেটে ম্যাথ করতে গিয়ে সময় নিয়ে হিমশিম খেতে হবে না। পর্যাপ্ত অনুশীলনের মাধ্যমেই অন্যদের তুলনায় নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবে।
লেখার গতি ও হিসাববিজ্ঞানে ভালো জ্ঞান থাকা
হিসাববিজ্ঞানে এ+ পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে পরিপূর্ণ সঠিক উত্তর দিতে হবে। হিসাববিজ্ঞানের পরিপূর্ণ ও সঠিক উত্তর দিতে হলে দুটি জিনিস দরকার একটি হলো হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকা অপরটি হল হাতের লেখার গতি থাকা। হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে ভালো জ্ঞান আছে কিন্তু হাতের লেখার গতি নেই তাহলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিপূর্ণ উত্তর দেওয়া সম্ভব না আবার হাতের লেখার গতি আছে কিন্তু হিসাববিজ্ঞান বালো জ্ঞান নেই তাহলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিপূর্ণ উত্তর দেওয়া সম্ভব না। সুতরাং হিসাববিজ্ঞানে এ+ পাওয়ার ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে খেয়াল রাখা জরুরি।
নিজের উপর আস্থা রাখা
হচ্ছে না, হবে না এ সমস্ত ধারণা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।নিজের উপর আস্থা রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। বারবার অনুশীলন করে আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে হবে। পরীক্ষার উত্তরপত্রেও আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে।
কখনো কিছু ছেড়ে আসবে না
পরীক্ষায় খালি খাতা জমা দিয়ে আসার চাইতে কিছু লিখে আসা অনেক অনেক ভালো। হারাবার তো কিছু নেই, তাই না? খালি খাতা দিলে নিশ্চিত শূন্য পাবে। তার চাইতে কিছু তো লিখে আসতে পারো। পরীক্ষার দিন যেখানে ভাবছিলে ফেল করবে রেজাল্টের দিন বাস্তবে তা বিপরীত চিত্র অর্থাৎ পাস। তখন নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করবে। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেট বলেছেন একবার পরীক্ষায় কয়েকটা বিষয়ে আমি ফেল করেছিলাম কিন্তু আমার বন্ধু সব বিষয়েই পাস করে। এখন সে মাইক্রোসফটের একজন ইঞ্জিনিয়ার আর আমি মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা। তাই পাস ফেলের কথা চিন্তা না করে যতটুকু পারো উত্তর করে আসো।
লেখক, সহকারি অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, তেঁতুলঝোড়া কলেজ, সাভার