বেসরকারি মেডিকেল: নবায়নের শর্ত পূরণ না হলে বন্ধ হতে পারে পাঠদান

মেডিকেল শিক্ষার্থী
মেডিকেল শিক্ষার্থী  © ফাইল ফটো

দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মান নিয়ন্ত্রণে নবায়নের শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে কঠোর হচ্ছে সরকার। এজন্য মেডিকেল কলেজ পরিচালনা বিধিমালায় বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হতে পারে। এসব শর্ত পূরণ না করলে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ মেডিকেল কলেজ বন্ধের সুপারিশ করার কথাও ভাবা হচ্ছে।

জানা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট সময় পর পর অনুমোদন নিতে হয়। এজন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করতে হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে অধিদপ্তরের একটি দল মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষ একটি প্রতিবেদন তৈরি করে তা জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনের আলোকেই সংশ্লিষ্ট মেডিকেল কলেজ নবায়নের অনুমোদন দেওয়া হয়।

‘আমরা নবায়নের শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে কঠোর হচ্ছি। পড়ালেখার মান কিংবা অবকাঠামো নিয়ে কোনো আপোষ করা হবে না। তবে মেডিকেল কলেজগুলোকে শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে সময় বেধে দেওয়া হবে। যেখানে শিক্ষক সংকট রয়েছে; সেখানে শিক্ষক ঘাটতি পূরণের ক্ষেত্রে ৬ মাস সময় দেওয়া হবে। এছাড়া যাদের নিজস্ব জায়গায় হাসপাতাল কিংবা হোস্টেল সুবিধা নেই, তারা কতদিনের মধ্যে এই কাঠামো তৈরি করতে পারবেন সে বিষয়ে আমাদের লিখিত দিতে হবে। এরপর আমরা নবায়ন দিতে বিএমডিসিতে সুপারিশ করবো’— অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৭২টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ মেডিকেল কলেজ নতুন করে নবায়নের জন্য আবেদন করেছে। ইতোমধ্যে ২৫টি মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আগামী ৩০ জুনের অবশিষ্ট মেডিকেল কলেজগুলো পরিদর্শনের কার্যক্রম শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন মাতুব্বর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা মেডিকেল কলেজগুলো পরিদর্শন করছি। জুলাইয়ের শুরুর দিকে পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। প্রতিবেদনে মেডিকেল কলেজগুলোর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হবে। যারা শর্ত পূরণ করবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।’

মেডিকেল শিক্ষার্থী

জানা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো নবায়নের ক্ষেত্রে ৫০টি সূচকে মূল্যায়ন করা হতে পারে। সবগুলো সূচক যথাযথভাবে পূরণ হলে ১০০ নম্বর দেওয়া হবে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ নম্বর পেলে শর্ত দিয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজকে পরিচালনার জন্য নতুন করে নবায়ন দিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) সুপারিশ করবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।

৫০ থেকে ৭০  শতাংশ নম্বর পাওয়া মেডিকেল কলেজগুলোতে শর্ত পূরণ করে পুনরায় আবেদন করতে হবে। নম্বর ৫০ শতাংশের নিচে হলে মেডিকেল কলেজগুলোকে নবায়নের সুপারিশ করা হবে না। আর ২৫ শতাংশের কম নম্বর পেলে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ মেডিকেল কলেজ বন্ধের সুপারিশ করবে অধিদপ্তর।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে, মেডিকেল কলেজের নবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিজস্ব জমি ও ফ্লোরস্পেস আছে কি না, শ্রেণিকক্ষ, মিউজিয়াম, ল্যাবের পরিসর ও পর্যাপ্ত সরঞ্জাম থাকা, সার্ভিস রুল, অর্গানোগ্রাম, তিন মাস অন্তর গভর্নিং বডির সভা, কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স স্কিম কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং মেডিকেল কলেজগুলোতে পৃথকভাবে শিক্ষার্থীদের হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে কি না সেটিও দেখা হবে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৪০ শতাংশ শিক্ষক পোস্ট গ্রাজুয়েশন (ফ্যাকাল্টি পর্যায়ের) সম্পন্নকারী আছে কি না সেটিও দেখা হবে। এমবিবিএসের যে সকল বিষয়ে বোর্ড হয় সে সকল বিষয়ের ক্ষেত্রে একজন করে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক আছে কি না তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। এই শর্তগুলো পূরণ না হলে নবায়নের সুপারিশ করা হবে না।

অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর

স্বাস্থ্য শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিচালনার শর্তগুলো মানা হচ্ছে না। এজন্য চিকিৎসা শিক্ষায় নীরব সর্বনাশ ঘটছে। বিগত কয়েক বছর ধরে বেশ কিছু মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভর্তি স্থগিতসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিলেও নানাভাবে অবৈধ কার্যক্রম বৈধ করে নেওয়া হচ্ছে। এগুলো বন্ধে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ নবায়নের শর্ত আরও কঠোর করা দরকার।

সার্বিক বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা নবায়নের শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে কঠোর হচ্ছি। পড়ালেখার মান কিংবা অবকাঠামো নিয়ে কোনো আপোষ করা হবে না। তবে মেডিকেল কলেজগুলোকে শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে সময় বেধে দেওয়া হবে। যেখানে শিক্ষক সংকট রয়েছে; সেখানে শিক্ষক ঘাটতি পূরণের ক্ষেত্রে ৬ মাস সময় দেওয়া হবে। এছাড়া যাদের নিজস্ব জায়গায় হাসপাতাল কিংবা হোস্টেল সুবিধা নেই, তারা কতদিনের মধ্যে এই কাঠামো দাড় করাতে পারবেন সে বিষয়ে আমাদের লিখিত দিতে হবে। এরপর আমরা নবায়ন দিতে বিএমডিসিতে সুপারিশ করবো।’


সর্বশেষ সংবাদ