মেডিকেল ভর্তিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন বিদেশিরা, আয় কমার শঙ্কা সরকারের
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৫৬ PM , আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৫, ১১:০৬ AM
প্রতি বছর বিদেশি শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি হয়। এর ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসে। এ মুদ্রা দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এর ব্যতিক্রম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মেডিকেল কলেজের অ্যাক্রিডিটেশন প্রক্রিয়া চালু না হওয়ায় ভর্তিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বিদেশি শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রতি শিক্ষাবর্ষে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তির আবেদন করেন। সরকারি মেডিকেলে বৃত্তি নিয়ে পড়ালেখার সুযোগ থাকলেও বেসরকারি মেডিকেলে পড়তে প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়। প্রতি বছর প্রায় ৫০০ বিদেশি শিক্ষার্থী দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় পড়ালেখা করেন। এতে সরকার প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আয় করে।
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এ পর্যন্ত মাত্র ১০০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী মেডিকেলে ভর্তির আবেদন করেছেন। আবেদনের এ সংখ্যা পাঁচ শতাধিকের বেশি হবে না বলে মনে করছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। আবেদনকৃতদের মধ্যে ২২১ জন সরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাবেন। সে হিসেবে ২৫০ জনের কিছু বেশি শিক্ষার্থী বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাবেন। ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের থেকে সরকারের আয় প্রায় অর্ধেক যেতে পারে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন মাতুব্বর দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘অ্যাক্রেডিটেশন আইন পাস হয়েছে। এখন একটি কমিটি গঠন করতে হবে। এরপর কাউন্সিলের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। যে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে সেটি আমরা কাটিয়ে উঠব।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের যৌথ টাস্কফোর্সের সুপারিশ অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মধ্যে সব দেশের একটি অ্যাক্রেডিটেশনের মধ্যে আসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেসব দেশ এর আওতায় আসবে না, সে দেশের কোনো চিকিৎসক বা টেকনিক্যাল হেলথ পারসন অন্য দেশে স্বীকৃত হবেন না বা তাদের শিক্ষার্থীরা অন্য দেশে গিয়ে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করতে পারবেন না।
দেশে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইন পাস হলেও এটির কাঠামো তৈরি হয়নি। এমনকি কমিটিও গঠন হয়নি। ফলে স্বীকৃতি না পাওয়ার শঙ্কায় দেশের মেডিকেলে ভর্তির আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বিদেশি শিক্ষার্থীরা।
২০২৩ সালের মধ্যে সব দেশের একটি অ্যাক্রেডিটেশনের মধ্যে আসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেসব দেশ এর আওতায় আসবে না, সে দেশের কোনো চিকিৎসক বা টেকনিক্যাল হেলথ পারসন অন্য দেশে স্বীকৃত হবেন না বা তাদের শিক্ষার্থীরা অন্য দেশে গিয়ে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করতে পারবেন না।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। গত বছরের ১৪ জুন ‘বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন বিল, ২০২৩’ সংসদে তোলা হয়। পরে তা আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়া সাপেক্ষে ১৮ সেপ্টেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
‘বাংলাদেশ চিকিৎসা শিক্ষা অ্যাক্রেডিটেশন আইন, ২০২৩’-এ বলা হয়েছে, আইনের অধীনে একটি অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল থাকবে। সে কাউন্সিলই অ্যাক্রেডিটেশনের বিষয়গুলো দেখভাল করবে এবং নীতিমালা প্রণয়ন করবে। এই কাউন্সিল হবে ১৯ সদস্যের। এর জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে অ্যাক্রেডিটেশনের মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে।
তবে আইনের গেজেট প্রকাশের দীর্ঘদিন হলেও এখনো কমিটিই গঠন করতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, অ্যাক্রেডিটেশন কেবল বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নয়; দেশের শিক্ষার্থীদের জন্যও জরুরি। এটির কার্যক্রম শুরু না হলে দেশের মেডিকেল থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীরা মুখ ফিরিয়ে নেবে। দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে সরকার বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে সরকার।
আরো পড়ুন: প্রকৌশল গুচ্ছে ভর্তি: কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কতটি আসন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সবচেয়ে বড় বাধা ছিল আইন। সম্প্রতি আইন পাস হয়েছে। আইন পাস হলেও কর্তাব্যক্তিরা ভবন নির্মাণের কথা বলছেন। ভবন নির্মাণ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এর আগে কমিটি গঠন করা জরুরি। কমিটি গঠন হলেও কার্যক্রম শুরু করা যাবে। তখন শিক্ষার্থীরাও আশ্বস্ত হতে পারবেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি মাত্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে গিয়ে এ বিষয়ে খোঁজ নেব। কোথায় দুর্বলতা রয়েছে সেটি জানার পর দ্রুত অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে।’