বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে অটোমাইগ্রেশন বন্ধ চান শিক্ষার্থীরা
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৩, ০৭:৪৭ PM , আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৩, ০৮:১১ PM
সিরাজগঞ্জে অবস্থিত বেসরকারি খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন সিনথিয়া রহমান (ছদ্মনাম) নামে এক শিক্ষার্থী। তবে বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব বেশি হওয়ায় এই মেডিকেলে ভর্তি হতে চান না তিনি। ভর্তি না হলে শূন্য ঘোষণা হবে তার সিট। পরবর্তীতে আর ভর্তির সুযোগ পাবেন না তিনি।
সিনথিয়া জানান, প্রথম মাইগ্রেশনে বরিশালের একটি মেডিকেল কলেজ এসেছিল। এটি তার বাড়ি থেকে কাছেই। তবে অটোমাইগ্রেশনের কারণে পরবর্তীতে তার খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ এসেছে। তিনি খাজা ইউনুস আলীতে ভর্তি হতে চান না। বরিশালের মেডিকেল কলেজেই পড়তে চান। এই অবস্থায় সিনথিয়ার দাবি তাকে পূর্বের মেডিকেলে কলেজে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হোক।
শুধু সিনথিয়াই নন; বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে অটোমাইগ্রেশনের কারণে নিজ বাড়ি থেকে অনেক দূরের মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন অনেকে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ ভর্তি হওয়া নিয়ে দ্বিধার মধ্যে রয়েছেন। এই অবস্থায় বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রে অটোমাইগ্রেশন প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
মাইগ্রেশনের কারণে যার যে মেডিকেল কলেজ এসেছে তাকে সেখানেই ভর্তি হতে হবে। ভর্তি না হলে ওই আসন ফাঁকা বলে বিবেচিত হবে। সেখানে অন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন— অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা), স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের স্পষ্ট করে বলা ছিল, অভিভাবকদের সাথে পরামর্শ করে মেডিকেল কলেজ পছন্দক্রম দিতে। তবে অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের ইচ্ছেমতো পছন্দক্রম দিয়েছেন। মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া অমোমেটিক হওয়ার কারণে তারা যে কলেজ পেয়েছেন সেই কলেজেই তাকে ভর্তি হতে হবে। আগের কলেজে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো: জামাল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মাইগ্রেশনের কারণে যার যে মেডিকেল কলেজ এসেছে তাকে সেখানেই ভর্তি হতে হবে। ভর্তি না হলে ওই আসন ফাঁকা বলে বিবেচিত হবে। সেখানে অন্য শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
জানা গেছে, গত ৬ জুন থেকে বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির আবেদন শুরু হয়। পরে ১০ জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তির আবেদন করতে পেরেছেন। প্রথম দফায় ভর্তির জন্য নির্বাচিতদের এসএমএস পাঠানো শুরু হয় ১৩ জুন। পরবর্তীতে গত ২৭ জুন ভর্তির জন্য নির্বাচিতদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
এরপর বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে প্রায় ৬৫০টি আসন ফাঁকা হয়। এই আসনগুলোতে মাইগ্রেশন এবং অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। মাইগ্রেশনের কারণে উপরের দিকে ফাঁকা হওয়া আসনগুলোতে শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পান। এতে অনেকেই নিজ বাড়ি থেকে অনেক দূরের মেডিকেল কলেজে সুযোগ পেয়েছেন।
সবাই নিজের পছন্দের কলেজে পড়তে চায়। এত টাকা খরচ করে নিজের পছন্দের মেডিকেলে পড়তে না পারলে এত টাকা ব্যয় করার কোনো মানেই হয়। অটোমাইগ্রেশন বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী মেডিকেল কলেজ বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি—ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি হতে অনেক টাকা নেওয়া হয়। এত টাকা দিয়ে নিজ বাড়ি থেকে দূরের প্রতিষ্ঠানে কেন পড়তে হবে। টাকা দিয়েই যখন পড়ব নিজের পছন্দের মেডিকেলে পড়ব। এই অবস্থায় অটোমাইগ্রেশন বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের পছন্দের মেডিকেলে পড়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি করেছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলাম। প্রথম এবং দ্বিতীয় দফার মাইগ্রেশন শেষে আমার নিজ বাড়ির পাশের একটি মেডিকেল কলেজে আসে। তবে তৃতীয় মাইগ্রেশন শেষে আমার বাড়ি থেকে অনেক দূরে ঢাকার একটি মেডিকেল কলেজ এসেছে। আমি ঢাকায় যেতে চাই না।
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, সবাই নিজের পছন্দের কলেজে পড়তে চায়। এত টাকা খরচ করে নিজের পছন্দের মেডিকেলে পড়তে না পারলে এত টাকা ব্যয় করার কোনো মানেই হয়। অটোমাইগ্রেশন বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী মেডিকেল কলেজ বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল বলেন, কীভাবে পছন্দক্রম দিতে হবে তা ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে উল্লেখ ছিল। আমরা শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে লাখ লাখ টাকা খরচ করে পত্রিকায় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেই। অথচ শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞপ্তি ভালোভাবে পড়েও দেখে না।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে অটোমেশন প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের। এটি চাইলেই বাতিল করা যাবে না। কেননা মাইগ্রেশনের কারণে একজনের বরাদ্দকৃত আসনে আরেকজন ট্রান্সফার হয়েছে। যে ট্রান্সফার হয়েছে সে কোথায় যাবে? কাজেই অটোমাইগ্রেশন বন্ধের দাবি অযৌক্তিক।