৩২ বছরের শিক্ষকতা জীবনে একদিনও ছুটি নেইনি

মো. ওহিদুর রহমান
মো. ওহিদুর রহমান  © টিডিসি ফটো

মো. ওহিদুর রহমান বাংলাদেশ স্কাউটের একজন পরিচিত মুখ ও নিবেদিত প্রাণ। তিনি বাংলাদেশ স্কাউটের লিডারের দায়িত্ব পালন করছেন। যার হাত ধরে বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমী ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৮৬ জন শিক্ষার্থী পেয়েছেন বাংলাদেশ স্কাউটের সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড। যা রাজশাহী অঞ্চলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। ওহিদুরের স্কাউটিং জীবনের পথচলা নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তার কথাগুলো শুনেছেন তাওফিকুল ইসলাম হিমেল

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি বাংলাদেশ স্কাউটের একজন নিবেদিত প্রাণ। স্কাউটিংয়ের সঙ্গে আপনার পথচলার শুরুটা কীভাবে ছিলো?
মো. ওহিদুর রহমান: আমি মূলত ১৯৬৫ সালে ৩য় শ্রেনীতে অধ্যায়নরত অবস্থায় বগুড়া শাজাহানপুরের ডেমাজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে কাবিং শুরু করি। এরপর ১৯৬৮ সালে ডেমাজানি উচ্চবিদ্যালয়ে স্কাউটিং শুরু করি।

১৯৭১ সালে আমি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিলেও মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করি। যেমন- অস্ত্র বহন করা, খাবার সরবরাহ করা ইত্যাদি। আমার বড় ভাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। সেই সুবাদে আমিও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে বিভিন্নভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এরপর ১৯৭৩ সালে এসএসসি ও ১৯৭৫ সালে এইচএসসি এবং ১৯৮০ সালে বিএসসি পাশ করি। এরপর কিছুদিন একটি ব্যবসার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করি।

আরও পড়ুন: জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে সারাদেশে শ্রেষ্ঠ ঢাকা কলেজ রোভার স্কাউট গ্রুপ

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কর্মজীবনে আপনি মূলত একজন শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষক হিসেবে আপনার পথচলা কেমন ছিল?
মো. ওহিদুর রহমান: ১৯৮৬ সালের ২৫ জানুয়ারি বগুড়া জেলার সনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পল্লী উন্নয়ন একাডেমী ল্যাব স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। এখানে আমার ৩৫ বছরের শিক্ষকতা জীবন।

তার মধ্যে আমি ৩২ বছরের শিক্ষকতা জীবনে শিক্ষকদের জন্য সংরক্ষিত কোনো ছুটি ভোগ করিনি। বাকি ৩টি বছরে ১০ দিনের ছুটি নিয়েছিলাম। এরপর ২০২১ সালে শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে যাই। তবুও বর্তমানে আমি বাংলাদেশ স্কাউটের ট্রেনিং টিমের সদস্য হিসেবে  সম্পৃক্ত রয়েছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষার্থীরা বলেন আপনার স্কাউটিং জীবন সফলতায় পরিপূর্ণ। আপনার স্কাউটিং জীবনের অর্জনগুলো শুনতে চাই
মো. ওহিদুর রহমান: ১৯৮৮ সালে বয়স্ক নেতা হিসেবে বেসিক প্রশিক্ষণ নিয়ে স্কাউটিংয়ে যোগদান করি। ১৯৮৯ সালে স্কাউটিংয়ের এডভান্স কোর্স শেষ করি। ১৯৯৪ সালে স্কাউটিংয়ের উডব্যাচ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করি। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ স্কাউটের সহকারি লিডার ট্রেইনার হিসেবে আমি নিয়োগ প্রাপ্ত হই।

২০২০ সালে আমি বাংলাদেশ স্কাউটের লিডার ট্রেইনার হিসেবে নিযুক্ত হই। ২০০১ সালে আমি ন্যাশনাল সার্টিফিকেট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করি। ২০০৬ সালে আমি ম্যাডেল ওব মেরিট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করি। ২০১২ সালে বার-টু-দ্যা মেডেল অব মেরিট অর্জন করি। ২০১৭ সালে লং সার্ভিস ডেকোরেশন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করি। ২০২০ সালে লং সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড অর্জন করি।

এছাড়া বাংলাদেশ স্কাউট আমাকে ২০১৫ সালে ২৩তম বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরি জাপান এবং ২০১৮ সালে ভুটান ও ভারত ভ্রমনে পাঠান। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আমি বগুড়া জেলা স্কাউট লিডার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলাম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একজন স্কাউট কীভাবে বাংলাদেশ স্কাউটের সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড প্রেসিডেন্টস স্কাউট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করতে পারে?
মো. ওহিদুর রহমান: একজন স্কাউট শিক্ষার্থীর জন্য সর্বোচ্চ লক্ষ্য প্রেসিডেন্টস স্কাউট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করা। যা অর্জনের জন্য সদস্য স্তর থেকে প্রেসিডেন্টস স্কাউট স্তর পর্যন্ত সিলেবাস সম্পন্ন করলে পিএস প্রার্থী হিসেবে আবেদন করতে পারে।

আরও পড়ুন: ভাষা শহীদদের প্রতি ঢাবি রোভার স্কাউটের শ্রদ্ধা

এরপর উপজেলা, জেলা, অঞ্চল এবং জাতীয় পর্যায়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে পারলে বাংলাদেশ মহামান্য রাষ্ট্রপতি তদেরকে প্রেসিডেন্টস স্কাউট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেন। আমার প্রতিষ্ঠান পল্লী উন্নয়ন একাডেমী ল্যাব স্কুল এন্ড কলেজ  থেকে আমার হাত ধরে ২০০৭ সাল থেকে শুরু করে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৮৬ জন শিক্ষার্থী এই অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। যা রাজশাহী অঞ্চলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: একজন শিক্ষার্থীর ও দেশের জন্য স্কাউটিং কেনো গুরুত্বপূর্ণ?
মো. ওহিদুর রহমান: স্কাউট আন্দোলনকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ‘স্কাউটিং যুব সম্প্রদায়ের জন্য একটি স্বেচ্ছামূলক, অরাজনৈতিক, শিক্ষামূলক আন্দোলন, যা প্রবর্তক কর্তৃক ধারণকৃত উদ্দেশ্য, নীতিমালা এবং পদ্ধতির সাথে সঙ্গতি রেখে উৎপত্তি, জাতি-কুল অথবা ধর্মমত নির্বিশেষে সকলের জন্য উন্মুক্ত।

আমাদের দেশে বর্তমানে ভালো মানুষের অভাব ও যুবসমাজের অবক্ষয়রোধের জন্য সৎ ও আদর্শবান নাগরিক গড়ে তুলতে স্কাউটিংয়ের ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্যোগের সময় স্কাউটসরা সেচ্ছায় তাদের পাশে দাঁড়ান তাদের জন্য কাজ করেন। যা আমাদের দেশের জন্য অনেক গর্বের।


 
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার এই দীর্ঘ স্কাউটিং জীবনের সবচেয়ে স্মরনীয় ঘটনা কী?
মো. ওহিদুর রহমান: একবার ২০০৪ সালে গাজীপুর মৌচাকে ১ম জাতীয় সৃজনী স্কাউট ক্যাম্পে বৃষ্টিতে আমার তবুতে হাটু জল হয় তখন স্কাউটের তাবুতে বসবাসের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে একটি পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে মাচা তৈরি করে সেখানে অবস্থান করি। এটা আমার জীবনে সবসময় স্মরনীয় হয়ে থাকবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি বাংলাদেশ স্কাউট পরিবারের একজন দক্ষ ও সিনিয়র ব্যক্তিত্ব। পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার আছে কিনা
মো. ওহিদুর রহমান: আপনার সন্তানকে স্কাউটিংয়ে যুক্ত করুন। দেখবেন এর ফলে সে সৎ ও আদর্শবান হবে। খারাপ জিনিসগুলো থেকে দূরে থাকবে। বাসায় বিভিন্ন কাজে আপনাদের সহায়তা করবে। একজন আদর্শবান নাগরিক হবেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
মো. ওহিদুর রহমান: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্যেও অনেক শুভ কামনা রইলো।


সর্বশেষ সংবাদ