রুটিন মাফিক ১০-১২ ঘণ্টা পড়ালেখা করে প্রথমবারেই সহকারী জজ আল আমিন

আল আমিন সরকার
আল আমিন সরকার  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের ১৭তম (বিজেএস) নিয়োগ পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী (৪৮ ব্যাচ) এ কে এম আল আমিন সরকার। তিনি গাইবান্ধা জেলার ঝিনিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্থানীয় স্কুল-কলেজ থেকে শেষ করেন। এরপর আইনের প্রতি ভালো লাগা থেকে ২০১৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও বিচার বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন পেরিয়ে প্রথম পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন তিনি। শিক্ষা জীবন শেষের শুরুতেই এমন সাফল্যের পেছনের গল্প তুলে ধরতে আল আমিন সরকার মুখোমুখি হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। তার কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধি—ফারুক হোসাইন। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার প্রস্তুতির শুরুটা কেমন ছিল? কবে থেকে নিয়মিত পড়াশোনা শুরু করেছিলেন?
আল আমিন সরকার: সবকিছুর শুরুটা বেশ কঠিন। প্রস্তুতির গোড়ার দিকে নতুন লাইফ, নতুন রুটিনে খাপ খাওয়ানো চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু একটু কষ্ট করে মানিয়ে নিলে সামনের রাস্তা মসৃণ। স্নাতক (সম্মান) ৩য় বর্ষ পর্যন্ত ফাঁকিবাজ ছিলাম। বিজেএসের জন্য নিয়মিত পড়া শুরু করি তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল ভাইভা দিয়েই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রতিদিন গড়ে কত ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন এবং কোন পদ্ধতিতে প্রস্তুতি নিতেন?
আল আমিন সরকার: প্রতিদিন কতটুকু পড়বো সেটা টেবিলে বসে রুটিন করে ফেলতাম। প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ ঘণ্টা করে পড়তাম । তবে শুরুর দিকে পড়াশোনায় ফোকাস ধরে রাখা সহজ ছিল না। এজন্য ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখে ‌‌‘Pomodoro Method’ টা বাছাই করি। এই পদ্ধতিতে ২৫ মিনিট পড়ে ৫ মিনিট বিরতি বা ৫০ মিনিট পড়ে ১০ মিনিট বিরতি নিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছি। তবে অভ্যস্ত হয়ে গেলে পরবর্তীতে টানা দীর্ঘ সময় পড়াও সহজ হয়ে যায়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সহকারী জজ হওয়ার জন্য কোন কোন বিষয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন?
আল আমিন সরকার: কোনো বড় লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে সেইটাকে ছোট ছোট কিছু ধাপে ভাগ করতে হয়। এই জার্নিটাও সেরকম। আমি প্রথমে গ্যাপগুলো খোঁজার চেষ্টা করেছি। এরপর সেটাকে টার্গেট করে যথাসময়ে সেটা শেষ করার ওপর সবসময় গুরুত্ব দিয়েছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিতে কী পার্থক্য ছিল?
আল আমিন সরকার: লিখিতের প্রস্তুতিই মূলত ভাইভার প্রস্তুতি। তবে ভাইভায় কোর্টের ব্যবহারিক কিছু ব্যাপার থেকে প্রশ্ন করে। সেগুলো জানতে হয়। পাশাপাশি পত্রিকা থেকে সমসাময়িক রাজনীতি, অর্থনীতি এবং গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ইস্যুগুলো জানতে হয়। ভাইভায় জ্ঞানের পরিধি যাচাইয়ের চেয়ে পরীক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব, পরিস্থিতি সামাল দেয়ার দক্ষতা ইত্যাদি যাচাই করা হয়। ভাইভা প্রস্তুতিতে এই বিষয়গুলোতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রস্তুতির সময় কীভাবে মানসিক চাপ সামলেছেন এবং মোটিভেশন ধরে রেখেছেন? কখনও পিছু হটতে ইচ্ছে করেনি?
আল আমিন সরকার: প্রস্তুতির সময় আমি পরিকল্পিতভাবে পড়াশোনা করেছি। সময়সূচি তৈরি করে ছোট ছোট লক্ষ্য পূরণের মাধ্যমে এগিয়েছি। এই বিজেএস আমার প্রথম পরীক্ষা ছিল বলে সবসময় একটা মানসিক চাপ কাজ করতো। এইটা সামলানোর জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করেছি। যখন ভাবতাম আল্লাহ যা পরিকল্পনা করে রেখেছেন তাই হবে, তখন অনেকটা ভারমুক্ত লাগত। তবে এটা একটা লম্বা জার্নি, বন্ধুর পথ। মাঝে মাঝে হতাশা এসেছে, কিন্তু আমি নিজেকে নিজের লক্ষ্য মনে করিয়ে দিয়েছি—কেন আমি এটা করতে চাই। যেহেতু বিজেএস-এ এইটা ফার্স্ট অ্যাটেম্পট ছিল, তাই পড়ার সময় আলাদা একটা উদ্দীপনা কাজ করতো। এই যাত্রায় আমার পরিবার, কাছের বন্ধু এবং সিনিয়রদের সাপোর্ট অনেক সহায়তা করেছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সহকারী জজ নিয়োগ পরীক্ষার পুরো যাত্রায় তিক্ত/মধুর কোন স্মৃতি এই মুহূর্তে মনে পড়ছে? 
আল আমিন সরকার: বিজেএসের এই জার্নিতে সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত ছিল লিখিত পরীক্ষার দশদিন। টানা ১০টা পরীক্ষা দেয়ার জন্য শারীরিক এবং মানসিকভাবে শক্তি ধরে রাখা খুবই কঠিন। লিখিত পরীক্ষা শেষ করে খুব করে দোয়া করতাম আর যেন লিখিত পরীক্ষা দেয়া না লাগে। আর ফলাফল পাওয়ার মুহূর্ত টা সবচেয়ে মধুর ছিল। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ভবিষ্যতে যারা সহকারী জজ হতে চান, তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকবে?
আল আমিন সরকার: প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোয় নামমাত্র পড়াশোনা করে সফল হওয়ার নজির নেই। সফল হতে হলে পর্যাপ্ত পড়াশুনা করতে হবে এবং সেটা করতে হবে স্মার্ট পদ্ধতিতে। কী কী পড়বেন সেটা জানার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কী কী পড়বেন না। আগের প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করে গুছানো প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বিজেএসে ভালো করতে আইন এবং জেনারেল দুই অংশের মধ্যে ব্যালেন্স করা জরুরি। শুধু আইনে বা শুধু জেনারেলে ভালো করেও অনেকে জজ হয়েছে। কিন্তু প্রস্তুতির ক্ষেত্রে দুইটার মধ্যে ব্যালেন্স রাখতে পারলে সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence