মাস্টার্স শেষ হওয়ার আগেই সহকারী জজ হলেন সুবাস, জানালেন অনুপ্রেরণার গল্প
- মারুফ হোসেন মিশন
- প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০৮ PM , আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩৯ PM

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) ১৭তম পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলে সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন সুবাস চন্দ্র পাল। মেধাতালিকায় ১২তম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন তিনি। সুবাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী। তিনি তার মাস্টার্স (এলএলএম) শেষ হওয়ার আগেই জজ নিয়োগের পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। পরীক্ষায় তার প্রস্তুতি ও সাফল্য নিয়ে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মুখোমুখি হয়েছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মারুফ হোসেন মিশন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে আপনার কেমন লাগছে? আপনার অনুভূতি জানতে চাই।সুবাস চন্দ্র পাল: জীবনের প্রথম চাকুরির পরীক্ষায় পাশ করার অনুভূতি খুবই রোমান্টিক এবং লোভনীয়। মা-বাবা, শিক্ষক, দাদা, বন্ধুরা এবং আশেপাশের সবাই অনেক অনেক খুশি হয়েছেন। এতেই আমি খুশি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার পরিবারে কে কে আছেন?
সুবাস চন্দ্র পাল: আমার বাবা, মা এবং বড় দাদা আছেন। আমার বাবার নাম মঙ্গল চন্দ্র পাল ও মায়ের নাম প্রভাতি রানী পাল। বাবা-মা মৃৎশিল্পের কাজ করেন। বড় দাদা তাপস কুমার পাল গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত গল্প শুনতে চাই।
সুবাস চন্দ্র পাল: আমার বাসা রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার কানাইপাড়া গ্রামে। আমি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পাশ করেছি ঝলমলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এরপর লস্করপুর ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হই এবং সেখান থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। তারপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে চান্স পেয়েছিলাম। এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: উচ্চশিক্ষায় আইন নিয়ে পড়াশোনা শেষ না করেই সহকারী জজ হয়ে গেলেন। এ যাত্রাটা কেমন ছিল? আপনার অনুভূতি জানতে চাই
সুবাস চন্দ্র পাল: উচ্চশিক্ষায় আইন নিয়ে পড়াশোনা শেষ না করেই সহকারী জজ হয়েছি কিন্তু আমার যাত্রাটা সাধারণ ছিল না। পোশাক দেখে তার মূল্যধারণা করা গেলেও পোশাকের ভিতরের মানুষকে বুঝতে পারাটা অনেক কঠিন। আমার জীবনটাও ঠিক তেমনি ছিল। আমি আমার কষ্টের বিষয়গুলো কাউকেই শেয়ার করতাম না বা শেয়ার করিনি। যা হোক জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে ভীষণ ভালো লাগছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য আইনের পাশাপাশি আর কোন কোন বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
সুবাস চন্দ্র পাল: বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য আইনের পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিত এবং সাধারণ জ্ঞান বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এছাড়া নিয়মিত সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস তৈরি করা উচিত। যা পরীক্ষাসহ ভাইভাতে কাজে দেবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যারা আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী তাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
সুবাস চন্দ্র পাল: যাদের লক্ষ্য জজ বা অ্যাডভোকেট হওয়া, শুধু তারাই আইন বিষয়ে পড়তে পারেন কিন্তু আইন পড়ে বিসিএস দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে অযথা ৪ বছর নষ্ট করার প্রয়োজন নেই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আইন নিয়ে পড়ার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভালো না কি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়?
সুবাস চন্দ্র পাল: আইন নিয়ে পড়ার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভালো বলে আমি মনে করি। কারণ সাধারণত পাবলিকে চান্স পেয়ে প্রাইভেটে আইন পড়ে এমন সংখ্যা খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। তবে লক্ষ্য যদি আইন পড়া হয় এবং কোনো কারণে পাবলিকে চান্স না পেলে বা সেশনজটের কবলে না পড়তে চাইলে প্রাইভেটই ভালো অপশন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কোন কোন বিষয়গুলো বেশি ফোকাস করলে নতুন যারা বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখে তাদের পথটা সহজ হবে?
সুবাস চন্দ্র পাল: স্বপ্ন দেখতে হবে এবং সে স্বপ্নপূরণের জন্য আকাঙ্ক্ষা তৈরি করতে হবে। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করতে হবে। অবশ্যই আইনের বেয়ার অ্যাক্টগুলো খুবই ভালোভাবে পড়তে হবে। পাশাপাশি সহায়ক বই পড়লে ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষায় ভালো করার জন্য কোন বর্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
সুবাস চন্দ্র পাল: আমি বিজেএস প্রস্তুত্তি শুরু করেছিলাম দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে কিন্তু ভাইভার আগেই শুরু করেছিলাম। আমি মনে করি প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে অ্যাকাডেমিক পড়ালেখা করা উচিত। কারণ অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট ভালো না থাকলে মনোবল কমে যায়।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিজেএস পরীক্ষায় অ্যাকাডেমিক রেজাল্টের গুরুত্ব কতটুকু?
সুবাস চন্দ্র পাল: বিজেএস পরীক্ষায় অ্যাকাডেমিক রেজাল্টের প্রত্যক্ষ গুরুত্ব নেই কিন্তু পরোক্ষ গুরুত্ব আছে। যেমন, রেজাল্ট ভালো করতে গেলে অবশ্যই আইন ভালো করে পড়তে হবে এবং ভালো করে পড়লে সে পড়াগুলো বিজেএস পরীক্ষায়ও কাজে আসবে। তাছাড়া ভাইভাতে একটা প্রিজাম্পশন অবশ্যই তৈরি হয়। যদিও রিটেনের রেজাল্টই মেইন তারপরেও কনফিডেন্স হাই করার জন্য অ্যাকাডেমিক রেজাল্টের গুরুত্ব রয়েছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: জজ নিয়োগ পরীক্ষায় আপনি সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। দেশের প্রতি আপনার অনেক বেশি দায়িত্ব। নিয়োগ পাওয়ার পর দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাই। কোনো বিশেষ পরিকল্পনা আছে কি না?
সুবাস চন্দ্র পাল: দেশ নিয়ে আমার অনেক পরিকল্পনা আছে কিন্তু সহকারী জজ হয়ে তো সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। তাই এই পর্যায়ে যতটা সম্ভব ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করব। আমার কাছ থেকে সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়। আমাদের বিচার ব্যবস্থায় লক্ষ লক্ষ মামলা নিষ্পত্তিহীনভাবে ঝুলে আছে। আমি এসব মামলাজট নিরসনের চেষ্টা করব। আমার উপর অর্পিত দায়িত্বের প্রতি দায়বদ্ধ থাকব৷ আসলে জুডিশিয়ারিকে আমি মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি। তাই জুডিশিয়ারির জন্য ভালো হয় এমন কিছুই করব। সর্বোপরি, আমার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশকে ভালোবাসতে চাই।