ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা থাকা ফ্রিল্যান্সিংয়ে বড় একটি অ্যাডভান্টেজ

প্রসেনজিত বিশ্বাসের শৈশব কাটে খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলায়। উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন কুয়েট আইটি পার্কের বিভিন্ন কার্যক্রমে। ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে নিজের দক্ষতা ও নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে তিনি ধাপে ধাপে এগিয়ে গেছেন সফলতার শিখরে। তার এই পথচলার অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সম্প্রতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রসেনজিত বিশ্বাস সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, মো. জাহিদ হাসান।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ফ্রিল্যান্সিং যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
প্রসেনজিত বিশ্বাস: আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি, তখন আমার একাডেমিক পড়াশোনা ভালো লাগছিল না। তখন আমি ভাবতাম, কীভাবে পড়াশোনার বাইরে কিছু করা যেতে পারে। সে সময়েই প্রথম ফ্রিল্যান্সিংয়ের ধারণা আসে। তবে সত্যিকার অর্থে আমি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি আমার বাবা হঠাৎ স্ট্রোক করার পর। পরিবারের আর্থিক চাপে পড়ার ফলে, আমাকে গুরুত্ব দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে হয়েছিল।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: প্রথমদিকে আপনার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল এবং আপনি কিভাবে তা মোকাবিলা করেছেন?
প্রসেনজিত বিশ্বাস: প্রথম দিকে, বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ভালো ক্লায়েন্ট পাওয়া। ট্র্যাডিশনাল মার্কেটপ্লেসগুলোতে ভালো কাজ পেতে খুবই কঠিন ছিল। আমি প্রথম দুই বছরে মাত্র ২ লাখ টাকার মতো ইনকাম করেছিলাম। তবে পরে আমি আপওয়ার্ক এবং লিংকডইনের মাধ্যমে ভালো ক্লায়েন্ট পাওয়া শুরু করি। লিংকডইনে নিজেকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে অনেক সময় এবং শ্রম দিয়েছি, তবে এখন সেটা আমার মূল মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি কী ধরনের মার্কেটিং সেবা প্রদান করেন এবং আপনার পছন্দের ক্ষেত্র কী?
প্রসেনজিত বিশ্বাস: আমি প্রথমে গ্রাফিক ডিজাইন দিয়ে শুরু করেছিলাম, তবে পরে ভিডিও এডিটিংও করেছি। তবে সবচেয়ে বেশি কাজ পেয়েছি ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষ করে লিংকডইনে মার্কেটিং এবং পারসোনাল ব্র্যান্ডিংয়ে। আমি কর্পোরেশনগুলোর এক্সিকিউটিভ ও ফাউন্ডারদের জন্য লিংকডইনে প্রোফাইল অপটিমাইজেশন, কনটেন্ট রাইটিং, টার্গেট অডিয়েন্স ফাইন্ডিং, এবং বিজনেস লিড জেনারেশন সেবা প্রদান করি। এটি একটি খুবই স্পেশালাইজড সার্ভিস এবং এর জন্য দক্ষতার পাশাপাশি গভীর বোঝাপড়াও প্রয়োজন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি কীভাবে ক্লায়েন্ট খুঁজে পান এবং কীভাবে তারা আপনাকে বিশ্বাস করে?
প্রসেনজিত বিশ্বাস: আমি মূলত লিংকডইনে থেকেই আমার ক্লায়েন্ট খুঁজে পাই। বর্তমানে প্রায় ৯০ শতাংশ ক্লায়েন্টই আসে রেফারেল থেকে। আমার একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে, যারা আমাকে রেফার করে। ক্লায়েন্টদের বিশ্বাস আসলে আমার কাজের দক্ষতা থেকে। যখন পূর্ববর্তী ক্লায়েন্টরা আমার কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে এবং আমাকে রিকমেন্ড করে, তখন নতুন ক্লায়েন্টদের কাছে বিশ্বাস অর্জিত হয়।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুন ফ্রিল্যান্স মার্কেটারদের জন্য কী ধরনের স্কিল বা টুলস শিখতে পরামর্শ দিবেন?
প্রসেনজিত বিশ্বাস: যারা ফ্রিল্যান্সিং করতে চান, তাদের জন্য বেসিক মার্কেটিং স্কিল থাকা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া, যারা রিমোট জব করতে চান বা লিংকডইনের মাধ্যমে কাজ পেতে চান, তাদের অবশ্যই লিংকডইনে দক্ষ হতে হবে। আমি ইংরেজি ভাষায় ভালো দক্ষতা অর্জন করাকে একটি বড় অ্যাডভান্টেজ মনে করি, কারণ এটি আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে কতটা আয় সম্ভব এবং আপনি কীভাবে আয় বাড়িয়েছেন?
প্রসেনজিত বিশ্বাস: ফ্রিল্যান্সিংয়ের আয় নির্ভর করে আপনার স্কিল এবং মার্কেটিং দক্ষতার ওপর। আমি যখন আমার কাজের যথাযথ মার্কেটিং শুরু করি, তখন থেকেই আমার আয় বেড়ে যায়। বিশেষ করে, আমি লিংকডইন থেকে বড় বড় প্রজেক্ট পেতে শুরু করি। তবে লিংকডিনে কাজ পেতে আমার দক্ষতা এবং ব্র্যান্ডিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশের লক্ষাধিক মানুষ এই সেক্টরে রয়েছেন, আপনি কীভাবে প্রতিযোগিতার মধ্যে আলাদা থাকেন?
প্রসেনজিত বিশ্বাস: আমি ট্র্যাডিশনাল মার্কেট প্লেসগুলোর উপর নির্ভর করি না, যা আমাকে প্রতিযোগিতা থেকে কিছুটা মুক্তি দেয়। আমার একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক আছে এবং আমি সেই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সঠিক ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করি। বর্তমানে আমি রিমোট জব করছি, যা আমাকে আরও উন্নতির সুযোগ দেয়।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফ্রিল্যান্সিংয়ের ভবিষ্যত সম্পর্কে আপনার কী মতামত?
প্রসেনজিত বিশ্বাস: আগামীতে অল্প দক্ষ মানুষদের জন্য কাজের সুযোগ কমে যাবে, কারণ অদক্ষদের কাজ হাতছাড়া হবে। তবে যারা নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে চলবে, তারা ভালো করবে। ইংরেজি দক্ষতা এবং ক্লায়েন্টের জন্য সঠিক কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফ্রিল্যান্সিংয়ে আপনি কখনো কোনো সমস্যা বা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন? কিভাবে তা কাটিয়ে উঠেছেন?
প্রসেনজিত বিশ্বাস: প্রথম দিকে আমি কাজ করতে পারতাম, তবে ভালো ক্লায়েন্ট পেতাম না, যা আমার জন্য বড় সমস্যা ছিল। তবে লিংকডিনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পর, সেই সমস্যা আর হয়নি। আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল নিজের কাজের প্রতি দৃষ্টি রাখা এবং প্রতিনিয়ত দক্ষতা বাড়ানো।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার পরবর্তী লক্ষ্য কী?
প্রসেনজিত বিশ্বাস: বর্তমানে আমি আমার টিম তৈরি করছি এবং এটিকে একটি বড় বিজনেসে পরিণত করার জন্য কাজ করছি। আমার একটি ব্রিটিশ ক্লায়েন্টকে পার্টনার হিসেবে নিয়ে এই বিজনেসকে বিশ্বব্যাপী প্রসারিত করার লক্ষ্য রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে প্যাশন থাকা জরুরি। যদি আপনি কোনো কাজে লেগে থাকতে পারেন এবং ক্রমাগত নিজের দক্ষতা উন্নত করতে চান, তবে আপনিও এই সেক্টরে সফল হতে পারবেন, তিনি যোগ করেন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার মাসিক আয় কীভাবে?
প্রসেনজিত বিশ্বাস: আমি বর্তমানে তিনটি রিমোট জব করছি এবং তা থেকেই আমার আয় হয়ে থাকে। তবে আয় সম্পর্কে সঠিক কিছু বলার নেই, তবে রিমোট জবের আয় অনেক বেশি হয়।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রসেনজিত বিশ্বাস: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।