৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির ইতিবাচক ধারা চালু হয়েছে
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের নাছির উদ্দীন নাছির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। এর আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেছেন। ছাত্ররাজনীতি ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে। গল্প-আলাপে পাঠকদের জন্য তার চুম্বক অংশ তুলে ধরছেন—ওয়ালিদ হোসেন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল ছাত্রসংগঠন একসাথে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচার পতন আন্দোলন করেছে। বর্তমান ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্যের জায়গায় ফাটল ধরেছে বলে আপনি মনে করেন?
নাছির উদ্দীন নাছির: ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে যে ঐতিহাসিক ঐক্য তৈরি হয়েছে, ছাত্ররাজনীতির পাঁচ দশকে এমন ঘটনা ঘটেনি। এই ঐক্যকে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ফাটল ধরানোর জন্য আমরা দেখেছি বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাস এগুলোতে এক ধরনের প্রচারণা, মানববন্ধন করেছে একটি পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি, যারা ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত হয়েছে। দুঃখজনকভাবে সত্যি আরেকটি শ্রেণি আছে যারা সাড়ে ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে গোপন তৎপরতার মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি কায়েম করেছে। তারা বিভিন্ন ক্যাম্পাসগুলোতে এমন মানববন্ধন করেছে। পরবর্তীতে মানববন্ধন যারা করেছে তারা গোপন সংগঠনের বিভিন্ন পদে পদায়িত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম রাজু ভাস্কর্যে এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছিলেন ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার জন্য। আমরা একই ঘটনা দেখেছি জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে এক ধরণের হাইপ যারা তুলে এবং যারা ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট করতে চাই তাদের সাথে আমাদের এক ধরনের মতভেদ তৈরি হয়েছে। যারা ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে মানববন্ধন করতে পারে সেরকম একটি সংগঠন যদি ছাত্ররাজনীতির মূলধারায় আমন্ত্রণ বা কাজ করেন তাহলে সেটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। একইসাথে তার ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী একটি দুটি ছাত্রসংগঠনের সাথে আমাদের মতভেদ তৈরি হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশের সংস্কার কমিশন হয়েছে। সংস্কার কমিশনে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে শুধুমাত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের পুরো ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি একটি ছাত্রসংগঠন হতে পারে না। বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সাথে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দেখা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিনজন ছাত্রনেতা। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মের নেতৃবৃন্দের সাথে আমাদের মৌলিক কোন বিরোধ নেই। আমরা তাদের ভুলগুলো বলেছি তারা তাদের ভুলগুলো আইডেন্টিফাই করেছে। সুতরাং আগামী যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে প্রয়োজনে আমরা নিশ্চয়ই তাদের সাথে বসবো। কিন্তু যারা গোপন তৎপরতার মাধ্যমে রাজনীতি করতে চাই তাদের জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের সন্দেহ রয়েছে। এবং এই সন্দেহ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক মনে করে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিগত সময়ে যে ছাত্ররাজনীতি চলেছে সেটা শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণকর ছিল না। ৪ মাস পরেও কোন ছাত্রসংগঠন ছাত্ররাজনীতির সংস্কারে রূপরেখা দেয়নি। এই বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখছেন?
নাছির উদ্দীন নাছির: গত ১৫ বছর ধরে যে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছিল, যেটি ইতোমধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ হয়েছে। সেই সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ গত ১৫ বছর ধরে যে দখলদারিত্ব ও নেতিবাচক রাজনীতি করেছে তার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সকল ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের এবং ছাত্রসমাজের মধ্যে যে অভূতপূর্ব ঐক্য তৈরি হয়েছে সেই ঐক্যের ধারাবাহিকতায় আমরা বলতে চাই বাংলাদেশে ইতিবাচক ছাত্ররাজনীতি চলমান রয়েছে। বাংলাদেশে গত সাড়ে চার মাসে কোন ক্যাম্পাসে জোর করে মিছিলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে সেটিও আসলে হ্রাস হচ্ছে। আমরা মনে করি গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী অনেকগুলো বিষয় পরিবর্তন না হলেও বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির একটি ইতিবাচক ধারা তৈরি হয়েছে।
ছাত্রদল মনে করে একুশ শতক উপযোগী মেধাভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি বিনির্মাণে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রাধান্য পাই এমন ছাত্ররাজনীতির আমরা কায়েম করতে চাই। যেখানে অতীতে খুনি সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা জোর করে শিক্ষার্থীদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিত। এখন সময় এসেছে শিক্ষার্থীরা তাদের সিদ্ধান্ত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ওপর চাপিয়ে দিবে। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল পরিচালিত হবে, এবং সেই পথেই পরিচালিত হচ্ছে। শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ছাত্ররাজনীতি, দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে শিক্ষার্থীদের যে আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল সেই রাজনীতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শুরু করতে চাই এবং সেখানে সাধারণ ছাত্রদের ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে অংশীদারিত্ব করতে চাই।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিএনপির বা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী ছাত্রদল ছাত্ররাজনীতি সংস্কারের রূপরেখা দিলে তার মূলনীতিগুলো কি হবে?
নাছির উদ্দীন নাছির: ২০২৩ সালের ২৩ জুলাই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে শুধু গুম-খুন করেনি, শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করেনি। বরং রাষ্ট্রের প্রতিটি বিভাগকে এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তার বিপরীতে জনগণ যদি আমাদের দলকে ভোট দেয় তাহলে আমাদের দল রাষ্ট্রের ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি অরগানকে ক্ষত শুকিয়া ভালো অবস্থায় নিয়ে আসতে পারে সেইজন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। এই দফার বিষয়ে জনগণের ভিন্নমত থাকতে পারে সেটি পর্যালোচনা করার জন্য যোগাযোগের বিভিন্ন নাম্বার দিয়েছি। ৩১ দফার বিষয়ে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মতামত দিচ্ছে। সুতরাং আমাদের দফাগুলো যেভাবে প্রণীত হয়েছে যাচাইবাছাই আগেই করা হয়েছে এখন সেটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জনগণ যদি প্রস্তাবনা দেয় সেটিও ৩১ দফাতে সন্নিবেশিত থাকবে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বর্তমান বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির ধারাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
নাছির উদ্দীন নাছির: ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে একটি ইতিবাচক রাজনীতি চলছে। গত ৪ মাসের বেশি সময় ধরে ছাত্ররাজনীতির ইতিবাচক ধারা চলমান রয়েছে। আমাদের দল ইতোমধ্যে এটাকে স্বাগত জানিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরে জনগণের সরকার যারা আসবে তারা চলমান রাখবে বলে আমরা এই প্রত্যাশা রাখছি।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ছাত্রদলের কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। আপনারা শাস্তিস্বরূপ বহিষ্কার ও করেছেন। অপরাধ প্রবণতা রোধে বহিষ্কার কী একমাত্র সমাধান?
নাছির উদ্দীন নাছির: ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী আমাদের সাড়ে তিনশোর অধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছি। পাঁচশত এর অধিক নেতাকর্মীকে শোকজ করেছি। দলের পক্ষ থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আমরা মনে করি ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নামে এক ধরনের প্রোপাগান্ডা তৈরি হয়েছে। সেই প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নামে বেনামে বিভিন্ন নিউজ তৈরি করা হচ্ছ। সেই নিউজগুলোকে একসাথে করে এক ধরনের আবহ তৈরি করা হচ্ছে। এ ধরনের প্রোপাগান্ডার বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। আমরা এটা বলছি না আমাদের নেতাকর্মীরা ভুল করছে না।
ছাত্রদল বড় একটি ছাত্র সংগঠন। অবশ্যই কিছু নেতাকর্মী ভুল করছে। এর বিপরীতে আমি কি ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি সেটি আসলে সব থেকে বড় ফ্যাক্ট। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গত চার মাসে যে ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে আমাদের নিজ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এরকম ঘটনা গত পাঁচ দশকে ঘটেনি। আবরার হত্যাকাণ্ড, আবু বকর ও বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড, জাহাঙ্গীরনগর ও সিলেটের এমসি কলেজে ধর্ষণ ইত্যাদি ছাত্রলীগের কর্মীরা যে ধরণের কাজ করেছে তার বিপরীতে আমরা দেখেছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা নিয়েছে। বহিষ্কার হয়েছে অনেক পরে। আমরা দেখেছি জামায়াত ইসলামী আমিরের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে তার দলের সন্ত্রাসীরা ঐ ব্যক্তিকে উঠিয়ে নিয়ে মারধর করেছে। এমন ঘটনার জন্য কোন প্রতিক্রিয়া আমরা দেখিনি।
ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ভাঙচুর করেছে, হল দখল করেছে, মারামারি করেছে দেখাতে পারবেন একজনকে বহিষ্কার করেছে? একজনকেও বহিষ্কার করেনি। সুতরাং ছাত্রদল শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে জিরো টলারেন্স পলিসির মধ্যে রয়েছি। কোনো নেতাকর্মী সামান্য দোষ করলে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। সেই তথ্যগুলো তাকে যে আমরা বহিষ্কার করছি, শোকজ করছি এ তথ্যগুলো গণমাধ্যমে সঠিকভাবে উঠে আসছে না। এটি এক ধরনের আমাদের জন্য বিব্রতকর ও দুঃখজনক ঘটনা। আমরা মনে করছি ইতোমধ্যে আমাদের নেতাকর্মীরা সচেতন রয়েছে। এখন শৃঙ্খলা বিষয়ে নিজের সব বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রেই একটি সংস্কার প্রত্যাশা করেছিল সাধারণ জনগণ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৪ মাসের বেশি সময় দায়িত্বে আছে, দেশে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে কি সংস্কার করা সম্ভব বিষয়টি আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন ?
নাছির উদ্দীন নাছির: সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। দুনিয়া কাঁপানো ৫ আগস্টের ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থান তার পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে। অনেকগুলি সংস্কার কমিশন হয়েছিল, সেই সংস্কার কমিশনের অনেকগুলোর রিপোর্ট অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে পেশ করেছে। এখন নিশ্চয়ই যাচাই বাছাই চলছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত দিয়েছে, ছাত্র প্রতিনিধি তাদের মতামত দিয়েছে। আমরা মনে করছি যে সরকার এগুলো যাচাই বাছাই করে জনগণের নিকট উপস্থাপন করে সেক্ষেত্রে ইমপ্লিমেন্ট করবে। সংস্কারের ইমপ্লিমেন্ট হলে আমরা জনগণ আসলে টের পাবো যে সংস্কার প্রক্রিয়া হয়েছে। তার আগে সংস্কার যদি কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে সেটি কেউ বুঝতে পারবে না।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন বা বাম সংগঠনগুলো নির্দিষ্ট সময় পরে তাদের কর্মীদের জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন পাঠচক্রের আয়োজন করে। বৃহৎ সংগঠন হিসেবে ছাত্রদলের কর্মীদের জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য এমন কোন কর্মসূচি গ্রহণ করবে?
নাছির উদ্দীন নাছির: এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইতোমধ্যে এটার কাজ আমাদের শুরু হয়েছে। ছাত্রদল কেন্দ্রীয়ভাবে একটি রিসার্চ টিম করেছ এবং আইনি কাঠামো দেখাশোনা করার জন্য আরেকটি টিম করেছে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি ছাত্রদলের সাংগঠনিক ইউনিট যেন পাঠচক্র করা যায় সেজন্য আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট এটি শুরু করেছে।
বিগত সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশের রাজনীতির যে সীমাবদ্ধতা ছিল বিশেষ করে ছাত্ররাজনীতি যে কলুষিত ছিল, খুনি সংগঠন ছাত্রলীগ ছাত্ররাজনীতির যে ধারা তৈরি করেছিল তার বিপরীতে এখন যে আস্থাশীল পরিবেশ তৈরি হয়েছে সেখানে আমরা বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজের পাশাপাশি শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের নেতাকর্মীরা পাখির বাসা বেধে দিয়েছে, কক্সবাজার ছাত্রদল পুরো সি-বিচ পরিষ্কার করেছে। বিভিন্ন প্রোগ্রাম পরবর্তী সময়ে রাস্তাগুলো যে অপরিষ্কার হয়ে যায় সে রাস্তাগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক যে অবস্থা সে অবস্থাতে একটি ইতিবাচক রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষার্থীবান্ধব কারিকুলাম বেইজড যে পলিটিক্স সেটির কাজ শুরু হয়েছে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সোশ্যাল মিডিয়ার সমালোচনা হচ্ছে ছাত্রদল বাম সংগঠনের প্রেসক্রিপশনে চলছে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
নাছির উদ্দীন নাছির: এই ধরনের অভিযোগ ছাত্রদলের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডার অংশ। কারো প্রেসক্রিপশনে আমরা কখনোই কাজ করিনি। ছাত্রদল শিক্ষা, ঐক্য, প্রগতির পতাকা ধারণ করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনোভাব বুঝে ছাত্রদল কাজ করে। ভবিষ্যতে কাজ করে যাবে। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য, গণতান্ত্রিক ধারাকে উন্নত করার জন্য এবং দেশের মালিকানা দেশের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ছাত্রদল সর্বোচ্চ সচেষ্ট রয়েছে। আমাদের কাজের পরিধির মধ্যে যে-সকল ছাত্রসংগঠন কাজ করতে চাই ছাত্রদল সবসময় তাদের স্বাগত জানিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও স্বাগত জানাবে।
বাংলাদেশে গত সাড়ে ১৫ বছরে খুনি হাসিনা যে ফ্যাসিবাদ তৈরি করেছিল। সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের জোর করে মিছিলে নেওয়া, গেস্টরুম নির্যাতন, মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা, খুন, গুম, ছিনতাই, রাহাজানি, চুরি যে অপরাধের রাজনীতি কায়েম করেছিল তার বিপরীতে ছাত্রদল একুশ শতক উপযোগী শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রাধান্য রেখে তাদের পাশে থাকতে চাই। ছাত্রদল প্রত্যেকটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের অংশীদার করতে চাই। আমরা কারো প্রেসক্রিপশনে কোনোদিন চলি নাই, বা আমাদের প্রেসক্রিপশনে অন্য কোন ছাত্রসংগঠন চালাতে চাই না। ছাত্রদল বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রেসক্রিপশনে চলতে চাই।