আপনি ব্যাংকে কাজ করেন, বলুন তো—হোয়াট ইজ এলসি

৪১তম বিসিএসের সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. সোহেল রানা
৪১তম বিসিএসের সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. সোহেল রানা  © সংগৃহীত

৪১তম বিসিএসের সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মো. সোহেল রানা। গত ৯ মে পিএসসির সদস্য এস. এম. গোলাম ফারুকের ভাইভা বোর্ডে ভাইভা দেন তিনি। তার ভাইভা চলে ১৮ থেকে ২০ মিনিট। ৫ নম্বর সিরিয়ালে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের এ শিক্ষার্থী। তার পছন্দক্রম ছিল যথাক্রমে বিসিএস পুলিশ, প্রশাসন, শুল্ক ও আবগারি, কর, নিরীক্ষা ও হিসাব, আনসার।

মো. সোহেল রানা নিজের ভাইভা অভিজ্ঞতা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, তাঁকে বিষয়ভিত্তিক, নিজ জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কোনও প্রশ্ন করা হয়নি। শুরুতে তিনি অনুমতি নিয়ে রুমে প্রবেশ করে সালাম দেন।

চেয়ারম্যান স্যার: মো. সোহেল রানা এখন কি করছেন?

আমি: স্যার, আমি বর্তমানে অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার হিসেবে এক্সিম ব্যাংকে কর্মরত আছি।

চেয়ারম্যান স্যার: মাস্ক খুলে ফেলুন। আমরা আপনাকে দেখতে চাই। আচ্ছা, এক্সিম ব্যাংকের পূর্ণ নামটা কি বলুনতো?

আমি: স্যার, এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ লিমিটেড।

চেয়ারম্যান স্যার: ফার্স্ট এক্সটার্নালের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এরা কি শুধু এক্সপোর্ট ইমপোর্ট নিয়ে কাজ করে নাকি স্বাভাবিক ব্যাংকিং করে?’

এক্সটার্নাল ১: স্যার, নামগুলো শুধু ভিন্ন। কিন্তু সবাই স্বাভাবিক ব্যাংকিং-ই করে। আমি স্যারের সাথে শুধু সুর মিলিয়েছিলাম।

চেয়ারম্যান স্যার: আচ্ছা বলুনতো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেটি সংবিধানের কোথায় বলা আছে?

আমি: স্যার, ষষ্ঠ তফসিলে।

চেয়ারম্যান স্যার: সংবিধানে কোথায় স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার কথা আছে?

আমি: স্যার,৫৯ ও ৬০ নং অনুচ্ছেদে। 

চেয়ারম্যান স্যার: এই দুটি অনুচ্ছেদে কি বলা আছে পড়েছেন কখনো?

আমি: জি স্যার পড়েছি।

চেয়ারম্যান স্যার: বলুনতো শুনি।

আমি: স্যার, এক্স্যাটলি এই মুহুর্তে বলতে পারব না।

চেয়ারম্যান স্যার: আচ্ছা আপনিতো ব্যাংকে কাজ করেন... বলুন তো হোয়াট ইজ এলসি?

আমি: স্যার, বাংলায় বলি?

চেয়ারম্যান স্যার: ঠিক আছে বলুন।

আমি: স্যার, লেটার অব ক্রেডিটকে সংক্ষেপে এলসি বলা হয়। আমদানিকারকের পক্ষে এবং রপ্তানিকারকের অনুকূলে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রদান করে আমদানিকারকের ব্যাংক যে পত্র ইস্যু করে তাকে এলসি বলে।

চেয়ারম্যান স্যার: আচ্ছা গুড। আপনার প্রথম পছন্দ দেখছি বিসিএস পুলিশ?

আমি: জি স্যার।

চেয়ারম্যান স্যার: আচ্ছা বলুনতো পুলিশের প্রধান চ্যালেঞ্জ কি বলে আপনি মনে করেন?

আমি: স্যার, অপরাধ দমন, প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এই কারণে বর্তমানে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা কিংবা বিট পুলিশিং ব্যবস্থাকে প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ সমাজের নানা অসংগতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা পুলিশের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে আমার মনে হয়। (ইন্সট্যান্ট মাথায় এটাই এসেছিল)

চেয়ারম্যান স্যার: আচ্ছা আর কি কি চ্যালেঞ্জ আছে?

আমি: স্যার প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত হওয়া....এরপর স্যার কয়েকটা নিজে থেকেই বলে দিয়েছিলেন।

(এরপর চেয়ারম্যান স্যার এক্সটার্নাল-১ স্যারকে প্রশ্ন করার জন্য ইঙ্গিত করলেন)

এক্সটার্নাল ১: (ভালো করে দুইবার আমার শু থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যানিং করার পরে প্রশ্ন করা শুরু করলেন) আচ্ছা সোহেল রানা বলুনতো কাবুল থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি রোড করা হয়েছিল সেটির নাম কি?

আমি: কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বললাম, সরি স্যার এই মুহুর্তে মনে করতে পারছি না।

এক্সটার্নাল ১:  গ্রান্ড ট্টাঙ্ক রোড। (স্যার বলে দিয়েছিলেন) আচ্ছা এটি কে করেছিলেন বলতে পারবেন?

আমি: স্যার, শেরশাহ।

এক্সটার্নাল ১: উনি আর কি করেছিলেন বলতে পারেন? 

আমি: জি স্যার, উনি ডাক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। 

এক্সটার্নাল ১: কীভাবে?

আমি: স্যার, ঘোড়ার মাধ্যমে। 

এক্সটার্নাল ১: আচ্ছা বাংলাদেশের কয়েকটি স্থলবন্দরের নাম বলুন?

আমি: স্যার, বেলাপোল, হিলি, বাংলাবান্ধা, বিলোনিয়া, বুড়িমারী, সোনা মসজিদ... 

এক্সটার্নাল ১: মিয়ানমারের কাছের স্থলবন্দরটির নাম কি?

আমি: স্যার, টেকনাফ। 

এক্সটার্নাল ১: আচ্ছা মিয়ানমার থেকে আমরা কি কি আমদানি করি?

আমি: স্যার পেঁয়াজ, শুটকি, ছোলা, কফি...

এক্সটার্নাল ১: আর কি কি?

আমি: সরি স্যার এই মুহুর্তে আর মনে করতে পারছি না।

এক্সটার্নাল ১: বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ কি কি বলে আপনার মনে হয়?

আমি: স্যার আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদনের পরবর্তীতে মোটাদাগে তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা বলা হচ্ছে। এগুলো হলো- ভর্তুকি কমিয়ে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা ও বৈদেশিক মুদ্রার মজুদকে নির্দিষ্ট পরিমাণে উন্নীত করা।

এক্সটার্নাল ১: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায় কি কি?

আমি: স্যার, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। 

আরো পড়ুন: শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসাই শিক্ষকতায় আমার প্রাপ্তি

এক্সটার্নাল ১: কি কি বলুনতো শুনি।

আমি:ঢ় স্যার, রাজস্ব নীতি প্রণয়ন করা, মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা ও প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। 

এক্সটার্নাল ১: প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যা মূল্যস্ফীতিতে ভূমিকা রাখবে? 

আমি: স্যার, এ পদ্ধতিতে সরকার একটি পণ্যের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করে দেয় এবং ন্যায্য মূল্যে বিক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করেন যা সরাসরি মূল্যস্ফীতিতে ভূমিকা রাখে।

(এরপর এক্সটার্নাল-১ স্যার এক্সটার্নাল-২ স্যারকে প্রশ্ন করার জন্য ইঙ্গিত করলেন)

এক্সটার্নাল ২: মুদ্রানীতিতে কি কি থাকে?

আমি: স্যার, ব্যাংক রেট, রেপো রেট, রিভার্স রেপো রেট নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

এক্সটার্নাল ১: আচ্ছা বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ কত?

আমি: স্যার, ২ হাজার ৯৮৩ কোটি ডলার। (ওই দিন রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল যা প্রায় সবকটি পত্রিকাতেই নিউজটা পাবলিশ হয়েছিল। যার কারণে এটা সকালে পিএসসির সামনে থেকে পত্রিকা কিনে পড়ার সময়ি মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল)

এক্সটার্নাল ২: এ রিজার্ভের হিসাবটা কি আইএমএফ’র স্ট্যান্ডার্ড মেনে হয়েছে? 

আমি: স্যার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ ২ হাজার ৯৮৩ কোটি ডলার হলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসেবে রিজার্ভের ৬০০ কোটি ডলার ব্যবহার যোগ্য নয়। শর্ত মেনে রিজার্ভের পরিমাণ হবে দুই হাজার ৩৮৩ কোটি ডলার। 

এক্সটার্নাল ২: আচ্ছা আমাদের রিজার্ভের টাকা কোথায় কোথায় গিয়েছে জানেন কি?

আমি: স্যার, রিজার্ভ থেকে ২০ কোটি ডলার শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ ও যন্ত্রাংশ কিনতে সোনালী ব্যাংককে কিছু অর্থ দেওয়া হয়েছে। 

এক্সটার্নাল ২: আর কোথায় গেছে?

আমি: সরি স্যার আমার আর জানা নাই।

এক্সটার্নাল ২: শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মধ্যে কে আগে তাদের অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?

আমি: এটির উত্তর দিতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার রনিল বিক্রমাসিংহের কয়েকটি পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে আটকে যাই, এরপর সরি বলি।

এক্সটার্নাল ২: সবাই সবকিছু জানবে না এটাই স্বাভাবিক।

এরপর চেয়ারম্যান স্যার কাগজপত্র নেওয়ার জন্য ইঙ্গিত করলেন এবং মাস্কের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন ঠিক আছে আপনি এখন আসুন। আমি ধন্যবাদ ও সালাম দিয়ে বের হয়ে আসলাম। আমাকে বিষয়ভিত্তিক, নিজ জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কোন প্রশ্ন করেননি।


সর্বশেষ সংবাদ