ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হবে অভিভাবকসূলভ

রবিউল ইসলাম নোমান
রবিউল ইসলাম নোমান  © টিডিসি ফটো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) থেকে বাংলা বিষয়ে স্নাতক ও  স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন রবিউল ইসলাম নোমান। বর্তমানে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা, টঙ্গীর বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শিক্ষক পেশার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল নাঈম-

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে কেন নিলেন?

রবিউল নোমান: সত্যি বলতে ভয়ানক এক লোভের বশবর্তী হয়ে শিক্ষকতা পেশায় আসা। একটু খোলাসা করে বলতে গেলে বলবো মানুষের হৃদয়ে একটু জায়গা করে নেয়ার বাসনাতে শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবসে আপনার প্রিয় শিক্ষক সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন।

রবিউল নোমান: আমার অন্যতম প্রিয় শিক্ষক ছিলেই সাইফুল আরিফ স্যার। নিয়মনীতিতে যথেষ্ট কড়াকড়ি করতেন তবে সেটা যৌক্তিকভাবে। ছাত্রাবাসে তিনি কোন নিয়ম করার আগে পর্যালোচনা করে নিতেন আসলে সেই নিয়ম কতটা বাস্তবায়নযোগ্য। সব সময় নিজের মধ্যে স্যারের ছায়া দেখতে চাই। হতে চাই আব্দুস সালাম হুজুরের মতো যার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কোন দিন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকিনি কিংবা ক্লাস থেকে পালাইনি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার মতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?

রবিউল নোমান: ছাত্রশিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই মনেপড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শামসুজ্জোহা স্যারের কথা।  ১৯৬৯ গণঅভ্যুত্থানের সময়ে ছাত্ররা যখন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে তখন পুলিশ গুলি চালাতে আসলে ছাত্রদের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেন। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হবে আন্তরিকতায় ভরপুর, ভারসাম্যপূর্ণ এবং অভিভাবকসূলভ। শিক্ষকদের তুলনা ফুলবাগানের সাথেই মানানসই হবে। একটি ফুলবাগানের ফুল যেমন মিষ্টি ঘ্রাণে মাতোয়ারা করে, তেমনি তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত ফুল বিমোহিত করে আবার কোন ফুলের ঘ্রাণ না থাকলেও রঙের বাহার হৃদয় রঙিন করে দেয়। আমাদের কোন কোন শিক্ষক নারকেলের মত উপরে শক্ত, মাথায় পড়লে মাথা ভেঙ্গে যাবে কিন্তু যে বা যারা গাছে চড়তে জানে তারা ঠিকই তাদের থেকে রসদ সরবরাহ করতে পারে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষক জীবনের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি মেলবন্ধন আসলে কতদূর?

রবিউল নোমান: শিক্ষকতায় মাত্র তিন বছর, প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসেবের খাতা মেলানোর সময় এখনো আসেনি। ব্যক্তিগতভাবে দুটো ডায়েরি ম্যান্টেইন করি, একটাতে ছাত্রদের ডিটেইলস পরিচয়, তার পছন্দ, অপছন্দ সমস্যা-সম্ভাবনা লিখে রাখি। আরেকটাতে বিদায়ী ছাত্র, যারা আমার কাছে ছিলো তাদের মন্তব্য লিখে রাখি। যখন কোন কারণে হতাশ হই, মন ভারি হয়ে আসে তখন সেগুলো পড়ি। এটা মন ভালো করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট মনে হয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে আপনার স্বপ্ন কী, প্রাপ্তি কতখানি?

রবিউল নোমান: আমরা শিক্ষকেরা আসলে দোকানদার। বিভিন্ন বাজার থেকে জ্ঞান হোলসেল রেটে সংগ্রহ করে ছাত্রদের কাছে খুচরো দামে বেচি। ব্যক্তিগত স্বপ্ন নিয়ে কখনো আলাপ করি না। তারপরেও বলতে হয় আমি আসলে আমার কয়েকজন শিক্ষাগুরুর মতো হতে চাই যারা ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন আদর্শবান, একাডেমিকভাবে সফল এবং  ছাত্রদের কাছে ফেরেশতা তুল্য। প্রাপ্তি বলতে তেমন কিছু নেই, এখনো নাগাল খুঁজে ফিরি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘The teachers we need for the education we want : The global imperative to reverse the teacher shortage’ অর্থাৎ, ‘কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা পেতে যেমন শিক্ষক চাই: শিক্ষক সংকট ঠেকাতে বৈশ্বিক উদ্যোগ।’ প্রতিপাদ্যটি কি সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক? আপনার মন্তব্য কি?

রবিউল নোমান: আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট লেগেই আছে। নানাবিধ কারণে এ সংকট মোকাবেলা করা শুধু প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।  যদি সংকট নিরসনে বিশ্ব বিখ্যাত আর্থিক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আসে তবে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা গুণে ও মানে বিশ্বসেরা হয়ে উঠবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশের শিক্ষকরা বেতন-মর্যাদায় পিছিয়ে আছে বলে শোনা যায়-সেটা কতটুকু প্রাসঙ্গিক? এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?

রবিউল নোমান: আমার মনেহয় না শিক্ষকদের টাকা-পয়সা নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা আছে। হ্যাঁ তবে এটা সত্য যে সম্মানজনক একটা জীবন পরিচালনার জন্য যেটুকু অর্থসংস্থান দরকার ততটুকু সবসময় পাওয়া যায় না।  আজ একজন স্যারের মুখে তার প্রিয় একজন শিক্ষক সম্পর্কে শুনতেছিলাম। সেই শিক্ষক ছাত্রদের জন্য সবসময় ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। ক্লাস, আলাদা ক্লাস নিতে নিতে হাপিয়ে উঠতেন কিন্তু একজোড়া স্যান্ডেল বাদ দিয়ে চামড়ার জুতো কেনার মতো পয়সা হয়ে উঠতো না। তিনি তাঁর অতিরিক্ত ক্লাসের বিনিময়ে কোন পয়সা নিতেন না বরং ছাত্রদের বাসায় ডেকে নিয়ে পড়াতে ভালোবাসতেন এবং খাওয়াতেন। কোন প্রকার উপহার গ্রহণ করা ছিল তার রীতিবিরুদ্ধ। এখন কেউ কেউ তার মতো মহান শিক্ষক হতে চাইলেও সবাই হয়ে উঠতে পারবেন না। শিক্ষকদের সব সময় অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের চিন্তায় মগ্ন থাকতে বাধ্য হতে হলে শিক্ষার আলো খুব একটা জ্বলে না, কেমন যেন ফিকে হয়ে আসে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

রবিউল নোমান: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্যও শুভ কামনা রইলো।


সর্বশেষ সংবাদ