বেসরকারি চাকরির ব্যাপারে এ প্রজন্মের মনোভাবই বড় সমস্যা

শাহরিয়ার আরিফিন
শাহরিয়ার আরিফিন  © টিডিসি ফটো

শাহরিয়ার আরিফিন। বেসরকারি খাতে প্রায় দুই দশক ধরে কাজ করছেন। পড়েছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে। সে আলোকে বর্তমান প্রজন্মের জন্য ক্যারিয়ার বিষয়ক বেশকিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরছেন অনিক আহমেদ

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার পরিচয় এবং শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই…
শাহরিয়ার: আমার পুরো নাম শাহরিয়ার আরিফিন। বাসা রাজশাহী, বাবা-মায়ের কাজের সুবাদে বিভিন্ন এলাকায় থাকতে হয়েছে। আমি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করি যথাক্রমে নাটোরের সুগার মিলস স্কুল এবং সরকারি নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলেজ থেকে। এরপর ১৯৯৯ সালে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগে চতুর্থ ব্যাচে ভর্তি হই এবং ইউডা থেকে মাস্টার্স শেষ করি। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট থেকে মার্কেটিং ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স সম্পন্ন করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: পড়াশোনা কালীন সময়ে কোন ধরণের চাকরির ইচ্ছা ছিল?
শাহরিয়ার: প্রথম থেকেই মার্কেটিংয়ে জব করতে চাইতাম। কিন্তু প্রথম ভাইভাতে আমাকে যে পদে অফার করা হয়েছিল, তা মূলত সেলসে। কিন্তু আমি সেখানে যোগদান করিনি। আমার প্রথম জব ছিল ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসে, ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রোডাকশন ফার্মাসিস্ট হিসেবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে বেসরকারি চাকরিতে বড় প্রতিবন্ধকতা কি?
শাহরিয়ার: সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হলে নতুন করে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। তুমি যে দক্ষ, সেটা শক্ত হাতে কাজের মাধ্যমে দেখানো লাগে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ থাকলে সেখানে কিছুটা বৈষম্যে লক্ষ্য করা যায়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় লেভেল থেকে দক্ষ হিসেবে গড়ছে?
শাহরিয়ার: শিক্ষাব্যবস্থায় তো হুট করে পরিবর্তন সম্ভব না, কিন্তু নিজের পরিবর্তন সম্ভব। আমি যদি ক্যারিয়ার কেন্দ্রিক চিন্তা করি, তাহলে সবাই যেটা ভাবে আমাকে তার থেকে একধাপ এগিয়ে থাকতে হবে। সেটা করতে করতে নিজের উন্নয়ন জরুরি। নিজের উন্নয়ন বেসিক লেভেল থেকে শুরু করতে হয়। ইংলিশ স্পোকেন, রাইটিং, লিসেনিং, কম্পিউটারে এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট এগুলো খুব বেসিক বিষয়। এগুলোতে দক্ষতা খুব জরুরি। আরেকটি বিষয় অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ নির্দিষ্ট কিছু সার্কেল কেন্দ্রিক হয়। এ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মার্কেটিং এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল লেভেলে যেসব ফেলো আছে, তাদেরকে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়ে ইন্টারেকশন বাড়াতে হবে। এটা না করলে ওই বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীরা আগাবে না। কারণ ভাইভা বোর্ডে দেখা যাবে, আপনার প্রতিষ্ঠানের কেউ নাই। এসব মানুষের সাথে যোগাযোগ থাকলে তারা অন্তত আপনাকে রেসপেক্ট করবে বা স্পেস দিবে। এটা বিশ্ববিদ্যালয় লেভেল থেকে করা সম্ভব হলে বর্তমান প্রজন্মের ক্যারিয়ারের জন্য ভালো হবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ক্যারিয়ার গড়তে সহশিক্ষা কার্যক্রমের ভূমিকা কতটুকু?
শাহরিয়ার: অবশ্যই খুব দরকার। বর্তমান প্রজন্ম এদিকে বেশ এগিয়ে। তবে সমস্যা হলো অ্যাটিচিউড প্রবলেম। এটা সঠিক হয় না। তারা ফুললি গ্রুম-আপ না। কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে, বডি ল্যাংগুয়েজ বা স্যালুটেশন কেমন হবে এসব বিষয়ে জ্ঞান থাকলেও প্র্যাকটিস করে না। সবকিছুতে একটা ক্যাজুয়াল ভাব তৈরি করে। আমার দৃষ্টিতে তাদের পথচলায় এটা বিরাট প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু তারা সহশিক্ষা কার্যক্রমে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে ফার্মেসি সেক্টরের বর্তমান অবস্থা…
শাহরিয়ার: এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি সেক্টর। কোয়ালিটি প্রোডাক্টের মান নিশ্চিত করতে পারায় দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে আমাদের ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। সম্ভাবনা অনেক, যত বেশি ফ্ল্যারিশ করা হবে, সামনে তত বেশি সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং ভালো করার সুযোগ থাকবে। 

আরও পড়ুন : ঢাবিতে বঙ্গবন্ধুকে ডিগ্রি দেয়ার বিশেষ সমাবর্তন আগামী বছর

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফার্মেসীতে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে...
শাহরিয়ার: এটা নির্ভর করে কে কোন দিকে কাজ করতে চায়। মার্কেটিং, প্রোডাকশন, রিসার্চ প্রতিটা আলাদা। যেদিকে কাজ করতে চায়, সেদিকে কিছু ধারণা আগে থেকেই নিয়ে রাখতে হয়। কেউ মার্কেটিংয়ে কাজ করবে, তাহলে এখানে কী কাজ করতে হয়, তা জানা না থাকলে ভাইভা বোর্ডে উত্তর দেয়া কঠিন হয়ে যায়। যদিও এগুলো ভার্সিটিতে পড়ানো হয় না বাট ভাইবাতে এগুলো জিজ্ঞেস করা হয়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সার্বিকভাবে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের প্রতি পরামর্শ?
শাহরিয়ার: সঠিক শিষ্টাচার শিখতে হবে, এটা বাধ্যতামূলক। কলা পাতায় বিরিয়ানি নয়, প্লেটে পরিবেশন করা ভাত বেছে নিতে হবে। অনেক জানলেও ব্যবহার ভালো না। কিন্তু কম জানা তবে সঠিক আদব-কায়দা মেনে চললে সেটা গ্রহণযোগ্য। যদি সুন্দরভাবে কথা বলা, ব্যবহার করা, স্যালুটেশন না জানেন, তাহলে আপনি পিছিয়ে পড়বেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহের বিষয়ে শুনেছি। এ সম্পর্কে জানতে চাই।
শাহরিয়ার: এটা আমার ছোটবেলা থেকেই প্যাশন ছিল। বাবা ফটোগ্রাফি করতেন। তখন তো ফিল্মে ছবি তোলা হতো, সেজন্য সুযোগ কম ছিল। স্কুল-কলেজে পড়াশোনার চাপে হয়নি। ভার্সিটিতে এসেও চাপ ছিল, ক্যামেরা কেনার টাকা ছিল না। আমার স্ত্রী অর্থাৎ তৎকালীন প্রেমিকার মাধ্যমে একটি ক্যামেরা পেয়ে ছবি তোলা শুরু করি। চাকরিতে প্রবেশের কয়েক বছর পর ফটোগ্রাফির ওপর কোর্স করি। না খেলে যেমন মানুষ বাচতে পারে না, আমি প্রতিদিন ছবি না তুললে ভালো লাগে না।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence