এআই দিয়ে সিআরএম জগতে বিপ্লব এনেছে দুই বাংলাদেশি তরুণ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১১ PM , আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৭ PM

প্রথম এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা)-চালিত সিআরএম (গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা) প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে অক্টোলেন। তারা আজ ঘোষণা দিয়েছে যে তাদের সিড রাউন্ডে ২.৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ এসেছে। এই স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা দুইজন তরুণ—ওয়ান চৌধুরী এবং মো. আব্দুল হালিম রাফি। তারা এআই-চালিত প্ল্যাটফর্ম দিয়ে সেলসফোর্স ও অন্যান্য পুরোনো সিআরএম প্রোভাইডারদের চ্যালেঞ্জ করছেন।
এই রাউন্ডে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছেন হাবস্পট ও ড্রিফট-এর প্রাথমিক বিনিয়োগকারী ব্রায়ান শিন, কুলভীর ট্যাগার, সিন্ডি বি (ক্যাপিটালএক্স) এবং ডেভ মেসিনা (পাইওনিয়ার ফান্ড)। এছাড়াও অংশ নিয়েছে ওয়াই-কমবিনেটর, লান জুয়েজাও (বেসিস সেট ভেঞ্চারস) এবং জেনারেল ক্যাটালিস্ট অ্যাপেক্স।
এই বিনিয়োগের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের মাধ্যমে টিম সম্প্রসারণ এবং প্রযুক্তিগত অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করা হবে, যাতে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়।
সিআরএম ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনছে অক্টোলেন
বর্তমানে প্রচলিত সিআরএম-গুলো আসলে তথ্য রাখার ডাটাবেসে পরিণত হয়েছে, যেখানে সেলস টিমগুলোকে প্রতিটি কাস্টমার ইন্টারঅ্যাকশনের পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডেটা ম্যানুয়ালি আপডেট করতে হয়। বেশিরভাগ বিক্রয় প্রতিনিধিরাই এসব সিস্টেম ব্যবহার করতে অপছন্দ করেন। কারণ তারা কাজ কমানো তো দূরের কথা, বরং আরও বাড়িয়ে তোলে।
অক্টোলেন এই সমস্যার সমাধান এনেছে। তারা সিআরএম-কে একটি প্যাসিভ “সিস্টেম অব রেকর্ড” থেকে একটি বুদ্ধিমান “সিস্টেম অব অ্যাকশনস”-এ রূপান্তর করেছে, যা ভবিষ্যদ্বাণী করে এবং বিক্রয় বন্ধ করার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নিজেই নিয়ে ফেলে। সকালবেলা যখন প্রতিনিধি অক্টোলেনে লগ ইন করেন, তখন তারা আগেই সম্পন্ন করা কাজের একটি তালিকা দেখতে পান। পরবর্তীতে কী করণীয় তাও বলে দেয় এটি। এর ফলে বিক্রয় কাজে বেশি সময় ব্যয় করা সম্ভব হয়।
বিনিয়োগকারীদের প্রশংসা
বিনিয়োগকারী সিন্ডি বি বলেন, “অক্টোলেন-এর টুইটারে রোজকার আপডেট দেখেই আমি আগ্রহী হই এবং এক রবিবার ওদের সান ফ্রান্সিসকো অফিসে যাই। আধ ঘণ্টার মধ্যেই আমি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেই—তাদের যাত্রা, লক্ষ্য, আর প্রোডাক্ট দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় যে তারা বাজারে দারুণ সাড়া পাচ্ছে। আজকের এআই-চালিত সিআরএম হওয়া উচিত ‘সিস্টেম অব অ্যাকশনস’, শুধু রেকর্ডের নয়। তারা যা করছে, তাতে আমি আত্মবিশ্বাসী।”
কুলভীর ট্যাগার বলেন, “যেটা আমাকে সবচেয়ে মুগ্ধ করেছে তা হলো, অক্টোলেন টিমের গ্রাহক-কেন্দ্রিক মনোভাব ও অবিশ্বাস্য গতি। তারা প্রতিনিয়ত ব্যবহারকারীদের মতামতের ভিত্তিতে আপডেট আনছে। রিটেনশন-কেই তারা আসল মাপকাঠি হিসেবে ধরে, আর এই ক্যাটাগরিতে তারা একেবারে নতুন চিন্তাধারা এনেছে।”
দুই বন্ধুর স্বপ্ন থেকে শুরু অক্টোলেন
অক্টোলেন-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ওনে চৌধুরী এবং মো. আব্দুল হালিম রাফি স্কুল জীবন থেকেই ছিলেন বন্ধু। নিজেরাই ইউটিউব দেখে কোডিং শেখেন। একদিন ওয়ান চৌধুরী সান ফ্রান্সিসকোতে সেলসফোর্স টাওয়ার দেখে বন্ধুর কাছে জানতে চান এটির ব্যাপারে। বন্ধু বলেন, “এটা একটা সিআরএম কোম্পানি, যেটাকে সবাই অপছন্দ করে।” তখনই ওয়ানের মনে প্রশ্ন জাগে—‘যদি সবাই ঘৃণা করে, তাহলে এদের এত বড় অফিস কেন?’
গবেষণায় তিনি দেখেন, এক সময় সেলসফোর্স ছিল ভীষণ আধুনিক ও বিপ্লবী, কিন্তু এখন আর এআই যুগে টিকে থাকার মতো আধুনিক নয়। তখনই রাফিকে ফোন করে বলেন—একটি সম্পূর্ণ নতুন এআই-চালিত সিআরএম বানাবো, যেটা বিক্রয় প্রতিনিধিদেরকে ম্যানুয়ালি ডেটা আপডেট করা থেকে মুক্তি দেবে। এই চিন্তা থেকেই অক্টোলেন-এর জন্ম। ওয়ান তখন ডিউক ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছিলেন। তিনি তখন পড়াশোনা থেকে ড্রপ আউট দেন এবং এ উদ্যোগের পেছনে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন।
দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে অক্টোলেন
এ বছর শুরু হওয়া অক্টোলেন-এর বর্তমানে ২০০ জন সক্রিয় গ্রাহক রয়েছে এবং আরও ৫,০০০ জন অপেক্ষমাণ। এদের বেশিরভাগই সেলসফোর্স বা হাবস্পট থেকে অক্টোলেনে স্থানান্তরিত হয়েছেন।
রিটেল এআই (Retell AI)-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইভি ওয়াং বলেন, “সাধারণত সিআরএম আমাদের গতি কমিয়ে দেয়। কিন্তু অক্টোলেন সেই গতি ফিরিয়ে দিয়েছে। বিল্ট-ইন ক্যালেন্ডার ব্যবহারে দ্রুত মিটিং নির্ধারণ হয়। আমরা ৫–৬টি টুলের কাজ একা অক্টোলেনেই পাচ্ছি, ফলে প্রতিমাসে হাজার হাজার ডলার সাশ্রয় হচ্ছে এবং দ্রুত ডিল ক্লোজ হচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, অক্টোলেন হচ্ছে প্রথম এআই-নেটিভ, সেলফ-ড্রাইভিং সিআরএম, যা নিজে থেকেই ডেটা আপডেট করে এবং বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করে। এতে বিক্রয় প্রতিনিধিদের প্রশাসনিক ঝামেলা কমে এবং তারা প্রকৃত বিক্রয়ে আরও বেশি সময় দিতে পারে। ওয়াই-কমবিনেটর, জেনারেল ক্যাটালিস্ট অ্যাপেক্স এবং অনেক নামকরা অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরদের সহায়তায় অক্টোলেন দ্রুতই সেলসফোর্স ও হাবস্পট-এর বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।