ব্যবসায় প্রশাসনে অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং মেজর যুক্ত করার গুরুত্ব: সময়োপযোগী এক একাডেমিক পদক্ষেপ

প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির লোগো
প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির লোগো  © সংগৃহীত

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প দেশের অর্থনীতির অন্যতম মেরুদণ্ড। এই খাত দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ প্রদান করে এবং লক্ষ লক্ষ শ্রমিক, উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। যদিও এই খাত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তবুও এর জন্য প্রয়োজনীয় উচ্চমানের মানবসম্পদ তৈরিতে আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় এখনো কাঠামোগত অভাব রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়, ব্যবসায় প্রশাসন (বিবিএ এবং এমবিএ) প্রোগ্রামে অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিংকে একটি পূর্ণাঙ্গ মেজর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি শুধু সময়োপযোগী নয়, বরং দেশের গার্মেন্টস শিল্পকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখার জন্য একটি কৌশলগত একাডেমিক পদক্ষেপ।

অনেকেই মনে করেন মার্চেন্ডাইজিং হলো কেবল ক্রেতার কাছ থেকে অর্ডার গ্রহণ এবং তা উৎপাদন বিভাগে প্রেরণের কাজ। তবে বাস্তবে, একজন আধুনিক মার্চেন্ডাইজারের কাজ অনেক বেশি ব্যাপক এবং জটিল। তাকে জানতে হয় পণ্যের গুণগত মান যাচাই, সঠিক সোর্সিং কৌশল নির্ধারণ, উৎপাদন শিডিউল তৈরি, মূল্য নির্ধারণ, ক্রেতার নৈতিক ও পরিবেশগত মান রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক বাজারের চলমান প্রবণতা সম্পর্কে গভীর ধারণা রাখতে হয়। এগুলো দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদন করতে গেলে শুধু হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং কাঠামোবদ্ধ প্রশিক্ষণ।

অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং এমন একটি ক্ষেত্র যা ব্যবসা, উৎপাদন, সাপ্লাই চেইন এবং ফ্যাশন—এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ দিক একত্রিত করে। একজন দক্ষ মার্চেন্ডাইজারকে কেবল পণ্য সম্পর্কিত জ্ঞান নয়, ব্যবসায়িক বিশ্লেষণ, কৌশলগত চিন্তা, এবং নেতৃত্বগুণে পারদর্শী হতে হয়। বিবিএ বা এমবিএ প্রোগ্রামে মেজর হিসেবে মার্চেন্ডাইজিং গ্রহণ করলে শিক্ষার্থীরা মার্কেটিং, আন্তর্জাতিক ব্যবসা, অপারেশনস ম্যানেজমেন্ট এবং বিজনেস কমিউনিকেশনসহ বহুমাত্রিক বিষয় সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। ফলে তারা বাস্তব কর্মজীবনে আত্মবিশ্বাসী ও কার্যকর নেতৃত্ব প্রদান করতে সক্ষম হন।

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর, তফসিলে আরও যা আছে

বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী মার্চেন্ডাইজিং পেশায় আগ্রহী হলেও, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব তাদের জন্য বড় বাধা। ফলে তারা সীমিত সময়ের স্বল্পদৈর্ঘ্য কোর্স বা অনানুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ওপর নির্ভরশীল থাকেন, যা পূর্ণাঙ্গ দক্ষতা অর্জনে সহায়ক নয়। অন্যদিকে বিবিএ এবং এমবিএ পর্যায়ে মার্চেন্ডাইজিংকে মেজর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করলে, বিষয়টি সহজলভ্য হয়ে উঠবে। অর্থাৎ দেশের সব শ্রেণির শিক্ষার্থী, যাঁরাই উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন, কম খরচে ও কাঠামোবদ্ধ শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।

এতে শিক্ষার ক্ষেত্রে সমতা ও অন্তর্ভুক্তির ধারণা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আরো সুষম ও ব্যাপক হবে। এই শিক্ষার প্রসার থেকে শুধু শহরের শিক্ষার্থীরাই নয়, বরং গ্রামীন ও প্রত্যন্ত এলাকার মেধাবীরা ও উপকৃত হবেন। এর ফলে পেশাদার দক্ষতা সম্পন্ন Marchendiser-এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশজুড়ে মানবসম্পদের গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে।

অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিংয়ের মেজর হিসেবে অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও বড় উপকার বয়ে আনবে। দক্ষ ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত মার্চেন্ডাইজার তৈরি হলে তারা গার্মেন্টস শিল্পে উৎপাদনশীলতা বাড়াবে, খরচ কমাবে, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করবে। নতুন দক্ষতা ও আধুনিক ব্যবসায়িক কৌশল গৃহীত হলে রপ্তানি খাত আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে নতুন প্রবৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া এই খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে যা সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গেও যুক্ত। দক্ষ মানবসম্পদ শিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে এবং বাংলাদেশকে গার্মেন্টস সেক্টরে বিশ্বমানের ব্র্যান্ডে পরিণত করবে।

আরও পড়ুন: সাত কলেজ ভর্তিতে আসন নির্ধারণ, মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে যা আছে

বিবিএ এবং এমবিএ পর্যায়ে অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং মেজর হিসেবে থাকলে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার বিকাশের সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। তারা মার্চেন্ডাইজার হিসেবে শুরু করলেও, দ্রুত সোর্সিং স্পেশালিস্ট, ক্যাটাগরি ম্যানেজার, প্রোডাক্ট ডেভেলপার, সাপ্লাই চেইন অ্যানালিস্ট, বা সাসটেইনেবিলিটি অফিসার হিসেবে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারে। পাশাপাশি তারা ব্যবসায়িক কনসালটেন্ট হিসেবেও দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হন। শিল্পের জন্য এ ধরনের বহুমুখী ও দক্ষ পেশাজীবী পেয়ে কাজের মান বৃদ্ধি পায়, এবং তারা প্রতিষ্ঠানের কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে শিল্পের সামগ্রিক কর্মদক্ষতা ও প্রতিযোগিতা বাড়ে এবং নতুন বাজারে প্রবেশের পথ সুগম হয়।

বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে টেকসই উৎপাদন, দক্ষতা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম। একজন সফল মার্চেন্ডাইজারের মধ্যে এই গুণাবলী থাকা বাধ্যতামূলক। তবে এসব গুণ অর্জন কেবল হাতে-কলমে শেখা সম্ভব নয়, এর জন্য প্রয়োজন মানসম্পন্ন একাডেমিক প্রশিক্ষণ। তাই ব্যবসায় প্রশাসনের শিক্ষায় “অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং” কে মেজর হিসেবে অন্তর্ভুক্তি শুধু সময়োপযোগী নয়, এটি দেশের বৃহত্তম রপ্তানি খাতের জন্য একটি প্রয়োজনীয় কৌশলগত পদক্ষেপ।

এটি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে এবং দেশের অর্থনীতি ও শিল্প খাতকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। এ জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই মেজর দ্রুত চালু করার ওপর জোর দিতে হবে এবং শিল্প-শিক্ষার মধ্যকার সেতুবন্ধন দৃঢ় করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!