তদবির ও বেড সংকটে জর্জরিত বিএমইউ হাসপাতালের আইসিইউ সেবা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

তদবিরের চাপ আর আইসিইউ বেডের সংকট—এই দুই চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রতিদিনই জর্জরিত শাহবাগে অবস্থিত বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) হাসপাতাল। প্রায় ১ হাজার ৭৯২টি শয্যা থাকলেও প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হন ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ জন রোগী। এর বিপরীতে সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য নির্ধারিত আইসিইউ বেডের সংখ্যা মাত্র ৩২টি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, হাসপাতালে আইসিইউ বেডের সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত। প্রতিদিন অসংখ্য সংকটাপন্ন রোগী আসে, কিন্তু এত কম বেডে সবার সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না।’

তিনি আরও জানান, অনেক সময় আইসিইউ বেড নিয়ে উচ্চপর্যায়ের তদবিরের চাপও থাকে। ‘ভিসি, প্রো-ভিসি, প্রক্টরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি ও কর্মকর্তা আইসিইউ বেড বরাদ্দের জন্য তদবির করেন। এর ফলে সাধারণ রোগীরা অনেক সময় বঞ্চিত হন কিংবা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও বেড পান না। এতে করে রোগী ও স্বজনরা হয়রানির শিকার হন।’

আরও পড়ুন: রাজধানীর ৬৩ শতাংশ স্কুলে নেই যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি

হাসপাতালসূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে মোট শয্যার সংখ্যা ১ হাজার ৭৯২টি। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার৬০০ জন রোগী ভর্তি হন এবং বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন প্রায় ১১,০০০ থেকে ১২,০০০ জন। এই বিপুল সংখ্যক রোগীর চাপে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হলেও এখানে আইসিইউ বেডের সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত। বর্তমানে দুটি ইউনিটে মাত্র ৩২টি আইসিইউ বেড রয়েছে—এর মধ্যে আইসিইউ-১ এ ১১টি এবং আইসিইউ-২ এ ২১টি বেড। রোগীর তুলনায় আইসিইউ বেড অপ্রতুল হওয়ায় জরুরি চিকিৎসার জন্য বেড পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

সূত্র আরও জানায়, সাধারণ রোগীরা আইসিইউ সেবার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে হাসপাতালের ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের কাছ থেকেই তথ্য পান। এরপর চিকিৎসকরা প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীর স্বজনদের আবেদন করতে বলেন। এই আবেদনের ভিত্তিতে নির্ধারিত বোর্ড বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। হাসপাতালে রোগীদের ভর্তির পর বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাদের দেখভালের দায়িত্ব থাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওপর। তবে আইসিইউ ইউনিটে রোগী রাখার ক্ষেত্রে কিছু বাস্তব সমস্যা দেখা দেয়।

প্রধান সমস্যা হলো—যদি কোনো রোগী আরোগ্য লাভ না করে, আবার মারা না যায়, তখন তাকে আইসিইউ থেকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে একটি বেড দখল হয়ে থাকে যা অন্য জরুরি রোগীর জন্য সমস্যা তৈরি করে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসিইউ ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি বিশেষ পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করেছে। যখন খুব জরুরি অবস্থায় বেড প্রয়োজন হয় তখন এই কমিটি ও একটি বোর্ড যৌথভাবে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই অনুযায়ী রোগী স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 

আরও পড়ুন: বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হলেও যোগ দিচ্ছেন না ঢাবি ছাত্র হাবিব, হবেন উদ্যোক্তা

তদবিরের বেপারে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীনকে জিজ্ঞাস করলে তিনি  বলেন, আইসিইউ বেড বরাদ্দ নিয়ে মাঝে মাঝে বিভিন্ন দপ্তর থেকে সুপারিশ বা তদবির আসে—যেমন উপাচার্য, প্রো-ভিসি কিংবা প্রক্টরসহ অনেকে ফোন বা বার্তা দিয়ে তদবির করেন। এসব তদবির থাকবে, আমরাও তদবির আছে। তবে আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার ক্রিটিক্যাল রোগীদের।

তিনি আরও জানান, অতি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ কমিটি ও বোর্ড যৌথভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যাতে কোনো পক্ষই অবহেলিত না হয় এবং সঠিক রোগী সঠিক সেবা পায়।


সর্বশেষ সংবাদ