ভেজাল ওষুধের ছড়াছড়ি, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বক্তব্য কী?
- আশরাফ আন নূর
- প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫, ০৯:২৮ PM , আপডেট: ২৬ মে ২০২৫, ০৮:৩১ PM

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্পে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করছে। দেশীয় চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ ছাড়াও ১৬০টির বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। যার ফলে আয় হচ্ছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ ওষুধ কোম্পানি মানসম্মত ওষুধ সরবরাহ করে। তবে বাকি ১০ শতাংশ কোম্পানি ভেজালের সাথে জড়িত। অথচ এই সম্ভাবনাময় খাতেই ভেজাল ও নকল ওষুধের কারণে জনস্বাস্থ্য হয়ে পড়েছে চরম ঝুঁকিতে।
রাজধানীর কয়েকটি ফার্মেসি ঘুরে ভেজাল ওষুধ নিয়ে কথা বললে দোকান মালিকরা জানান, দেশে বর্তমানে শতাধিক ওষুধ কোম্পানি সক্রিয় রয়েছে। এক্ষেত্রে স্বল্পপরিচিত ও ছোট আকারের ওষুধ কোম্পানিগুলোর মাধ্যমেই ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বাজারে ছড়ায় বেশি।
তবে ওষুধ ব্যবসায়ীরা একমত, সামগ্রিকভাবে ভেজাল ওষুধের পরিমাণ এখনো তুলনামূলকভাবে খুবই কম। একজন অভিজ্ঞ দোকানি বলেন, ‘আমরা ওষুধ কেনার সময় কোম্পানির বিশ্বাসযোগ্যতা ও গুণগত মান যাচাই করি। সাপ্লায়ারের পরিচয়, ব্র্যান্ড ভ্যালু, ওষুধের মোড়ক, ব্যাচ নম্বর—সব কিছু খতিয়ে দেখেই ওষুধ সংগ্রহ করি। গ্রাহকের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা সতর্ক থাকি।’
আরও পড়ুন: অনিয়ম, বণ্টন ও নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিয়ে যা জানাল খাদ্য অধিদপ্তর
এ সময় ফার্মেসিতে উপস্থিত এক ক্রেতা মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ভেজাল ওষুধ আছে—এটা আমরা শুনি ঠিকই, কিন্তু চেনা খুব কঠিন। আসল আর নকল ওষুধে পার্থক্য বুঝে ওঠা সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভেজাল ওষুধের প্রকোপ শহরের তুলনায় প্রান্তিক ও গ্রামীণ এলাকাগুলোতে অনেক বেশি। কারণ সেখানে মানুষ অনেকটাই অসচেতন। তারা যাচাই-বাছাই না করেই হাটবাজার বা সাধারণ দোকান থেকে ওষুধ কিনে ফেলে যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এসব এলাকায় ভেজাল ওষুধ অনায়াসেই ছড়িয়ে পড়ছে এবং সেটা দিন দিন বাড়ছে।’
ভেজাল ওষুধ নিয়ে কথা বলতে ওষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. আকতার হোসেনের নিকট গেলে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ ওষুধ কোম্পানি মানসম্মত ওষুধ সরবরাহ করে। তবে বাকি ১০ শতাংশ কোম্পানি ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত যা জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ৩০০টি ওষুধ কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে স্কয়ার, বেক্সিমকো, ইনসেপ্টা, সেনডোজ, এরিস্টো ফার্মা, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল ও পপুলারের মতো কোম্পানিগুলো বৃহৎ ও প্রতিষ্ঠিত এবং তারা সাধারণত ভালো মানের ওষুধ সরবরাহ করে থাকে। তবে মানুষ যদি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন না হয়, তাহলে শুধু প্রশাসনিক তদারকিতেই যথেষ্ট ফল পাওয়া যাবে না।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘ভেজাল ওষুধ উৎপাদনের বিষয়টি শুধু কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা এলাকায় সীমাবদ্ধ নয়—এটি গাজীপুর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের মতো এলাকাতেও ঘটছে। তবে যারা এ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাদের অনেকেই প্রতিষ্ঠিত ও সুপরিচিত কোম্পানি। কল্পনাও করা যায় না, তারা এমন কাজ করতে পারে। তবে সংখ্যা হিসেবে তারা খুব বেশি নয়। তবে ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা চাই না জনস্বাস্থ্য নিয়ে কেউ ব্যবসা করুক। এই বিষয়ে আমাদের অবস্থান কঠোর এবং ভবিষ্যতেও তা বজায় থাকবে।
আরও পড়ুন: দুই বছরে সারা দেশে ভর্তুকি দিয়ে যত পণ্য বিক্রি করল টিসিবি
ওষুধ অধিদপ্তরসূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করা কঠিন। মন্ত্রণালয় নতুন নতুন হাসপাতাল নির্মাণে ও বিপুল সংখ্যক ডাক্তার ও কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে আগ্রহী—যা অবশ্যই প্রয়োজনীয়। কিন্তু একইসঙ্গে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ, বাজার তদারকি এবং ভেজাল প্রতিরোধে আরও বেশি মনোযোগী হওয়া দরকার। অধিদপ্তর সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এই ধরনের অনিয়ম রোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে অনেক ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই ধরনের অপরাধ দমনে শুধু প্রশাসনের নয়, সমাজের সব শ্রেণির মানুষের সম্মিলিত সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতাও জরুরি।
সূত্র আরও জানায়, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। ওষুধের ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলগুলোকে আরও শক্তিশালী ও সুশৃঙ্খল করা হবে। পাশাপাশি কার্যকর মনিটরিং সিস্টেম গড়ে তোলা হবে।