জনবল সংকটে স্থবির জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, বন্ধ স্যালাইন কারখানা
- আশরাফ আন নূর
- প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩৪ PM , আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৬ PM

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটির মূল দায়িত্ব জনস্বাস্থ্য রক্ষায় পরীক্ষাগারভিত্তিক গবেষণা, ওষুধ ও স্যালাইন উৎপাদন, প্রশিক্ষণ এবং মান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা। বর্তমানে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি জনবল সংকটে স্থবির হয়ে রয়েছে।
আজ বুধবার (১৬ এপ্রিল) জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিদর্শনে গেলে প্রতিষ্ঠানটির খাবার স্যালাইন কারখানা বন্ধসহ জনবল সংকটের বিষয়টি জানা যায়।
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. মমিনুর রহমান বলেন, ‘আমাদের যে খাবার স্যালাইন উৎপাদনের কারখানাটি আছে, সেটি দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ অবস্থায় রয়েছে। এটি পুনরায় চালু করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ তা জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে রয়েছে জনবলের তীব্র সংকট।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানটির কাজের গতিশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতীতে যে-সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সেগুলো ধাপে ধাপে পুনরায় চালু করা হয়েছে।’
ড. রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে জনবল সংকট রয়েছে। ফলে কার্যক্রম পরিচালনায় একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। এ সংকট দূর করা গেলে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা আরও বাড়বে।’
পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা সম্পর্কে তিনি জানান, ‘আমাদের এখানে চারটি ল্যাবরেটরি রয়েছে। এখানে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, পণ্য ও বিভিন্ন জিনিসের স্যাম্পলের মান পরীক্ষা করা হয়। খাদ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে এই ল্যাবগুলোর কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘যদি কেউ ভেজাল খাদ্য নিয়ে পরীক্ষার জন্য আসে, আমরা এখানে সেই নমুনা পরীক্ষা করি। প্রতিদিনই ভোক্তারা এবং বিভিন্ন সংস্থা পরীক্ষার জন্য নমুনা নিয়ে আসে।’
ড. মমিনুর রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে একটি অ্যাকাডেমিক সেকশনও রয়েছে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এর মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য খাতে দক্ষ জনবল তৈরি হচ্ছে।’
তিনি প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এখানে লজিস্টিক সাপোর্ট তুলনামূলকভাবে কম। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের মেশিনারিজ ও যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে যা আমাদের অনেক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে।’
পরিচালক বলেন, বর্তমানে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে মোট ১০টি বিভাগ এবং প্রায় ৩৫০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫২ সালে। প্রথমে এটি ‘সম্মিলিত জনস্বাস্থ্য ল্যাবরেটরি’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে, ১৯৫৩ সালে এর নাম পরিবর্তন করে ‘জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট’ রাখা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি জনস্বাস্থ্য খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ও শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত। প্রতিষ্ঠানটির অধীনে প্রায় এক হাজার গবেষক ও শিক্ষাবিদ কাজ করছেন।
মহাখালীতে ৪৭.৮ একর জমির উপর অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটি স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা প্রদান করে। এখানে রয়েছে বিভিন্ন ইউনিট ও ল্যাবরেটরি—যেমন ভাইরোলজি, ব্যাকটিরিওলজি, এপিডেমিওলজি, এবং ল্যাবরেটরি ডায়াগনস্টিক ইউনিট। স্বাস্থ্যসেবার নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়নের জন্য ইনস্টিটিউটটিতে ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড উৎপাদন ইউনিট, সিএপিডি (Continuing Ambulatory Peritoneal Dialysis) ফ্লুইড ইউনিট, ব্লাড ব্যাগ প্রোডাকশন ইউনিট এবং অ্যান্টি সেরা প্রোডাকশন ইউনিট চালু রয়েছে।
এছাড়া এখানে পাস্তুর কাম ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট (পিসিভিআই) ইউনিট, ডায়াগনস্টিক রিএজেন্ট উৎপাদন ইউনিট এবং গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার (কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরি) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। টিটেনাস, ডিপথেরিয়া টক্সয়েড ও ডিপিটি উৎপাদনের জন্য পৃথক ইউনিট রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি জনস্বাস্থ্য পরীক্ষাগার এবং জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা পরীক্ষাগার পরিচালনার মাধ্যমে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি অ্যাকাডেমিক উইং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যখাতে গবেষণা ও প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের সুযোগ করে দিচ্ছে।