প্রাথমিকে ৭ ও মাধ্যমিকে ৩ জনে ঝরে পড়ে একজন শিক্ষার্থী

  © সংগৃহীত

নিজেকে প্রতিষ্ঠিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টার সূচনা হয় মূলত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে। তবে অনেক শিক্ষার্থী এই অবস্থা থেকেই ঝরে পড়েন। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রাথমিক পর্যায় থেকে প্রতি ৭ জনে একজন শিশু শিক্ষার্থী ছিটকে পড়ছে। এছাড়া মাধ্যমিক থেকে প্রতি ৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে একজন শিক্ষার্থী পড়ালেখা ছেড়ে দিচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) গণসাক্ষরতা অভিযানের আয়োজনে শিক্ষায় ন্যায্যতাভিত্তিক বাজেট: তৃণমূলের চাহিদা ও প্রত্যাশা শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মালালা ফান্ড ও ইওএল-এএসএ অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে শিক্ষাখাতে বাজেট, বাজেট ব্যবস্থাপনা, নারী ও নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানদের শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ার কারণ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষা কারিকুলাম পর্যালোচনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন অতিথি, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা।

এ সময় আলোচনায় উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২২ সালে প্রাথমিক থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার ছিল ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ছিল ৩৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

220f35c7-ac9b-4fa1-8946-356dec29b0ac গণ সাক্ষরতা অভিযানের গবেষণা

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রাথমিকে ছেলেদের পড়ালেখা ছেড়ে দেওয়ার হার মেয়েদের তুলনায় বেশি হলেও মাধ্যমিকে মেয়েদের শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়ার হার বেশি।

তবে গণ সাক্ষরতা অভিযানের তুলে ধরা তথ্যমতে, গত এক যুগে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের হার অনেকটাই কমেছে। ২০১০ সালে প্রাথমিকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার ছিল ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ছিল ৫৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। এরপর থেকে প্রতি ৫ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এই হার ক্রমান্বয়ে কমেছে।

গত একযুগে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার কমলেও উদ্বেগ কমেনি। শিক্ষার যাবতীয় সুযোগ, পড়াশোনার খরচ নিশ্চিত না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও পরিপূর্ণ শিক্ষা অর্জন ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

গণ সাক্ষরতা অভিযানের মত বিনিময় সভায় উপস্থিত অতিথিরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় বাজেট কমের কারণে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়ছে বলে জানান। এছাড়া অর্থাভাবে নারী শিক্ষার্থীরা বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে বলেও অভিমত তাদের। তাই উপবৃত্তির পরিমাণ ১৫০টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০টাকা করার পাশাপাশি শিক্ষায় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও বাজেট বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

বক্তারা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন বাড়াতে হবে। এছাড়া শিক্ষকদের যথাযথ ট্রেইনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে করে সমাজের সবথেকে যোগ্য মানুষটি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। নারী শিক্ষার প্রতি দৃষ্টি আরোপ করে তারা বলেন, নারীদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনতে সমাজের প্রথা, দৃষ্টিভঙ্গি ও সামাজিক বাধা দূর করতে হবে। আলাদা শিক্ষা পদ্ধতি থেকে সরে এসে সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নেরও দাবি জানান তারা।

139095_181 গণ সাক্ষরতা অভিযানের মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন ড. কামাল অবদুল নাসের

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল অবদুল নাসের চৌধুরী শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। এ বিষয়ে সরকার কাজ করবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, শুধু সরকার একা কাজ করলে সমস্যার সমাধান হবে না। এ জন্য শিক্ষক, অভিভাবক, সমাজের বিত্তবান ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্লাবে উৎসাহিত করতে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া সৃজনশীল শিক্ষা ও নারী শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। 

শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের কাজ শুধু শিক্ষা দান নয়। শিক্ষার্থীর পরিবার ও আর্থিক অবস্থার কি অবস্থা তা দেখাও তার কাজ। একজন শিক্ষার্থী কেন পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়ছে সেটা খুঁজে বের করাও শিক্ষকের দায়িত্ব।

এ সময় নতুন কারিকুলামের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, মানুষ পরিবর্তন গ্রহণ করতে চাই না, ভয় পায়। তাই মানুষকে বোঝাতে হবে। মানুষকে অবহিত করার জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। বাজেটসহ শিক্ষায় যে কোনো সমস্যা নিরসনে সাধ্যমতো কাজ করে যাবার কথাও জানান তিনি।

এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপার্সন ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোছা. নূরজাহান খাতুন।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন  ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিক্ষা বাজেট উপস্থাপন করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এবং এর আগে স্বাগত সম্ভাষণ দেন উপ-পরিচালক তপন কুমার দাশ।

সভায় সুবিধাবঞ্চিত শিশু, তাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনের সদস্য, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। নিজেদের প্রচেষ্টা ও বিভিন্ন বেসরকারি এনজিও’র সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীরা তাদের দীর্ঘ সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। এ সময় উপবৃত্তি বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষায় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও সকল শিশুকে শিক্ষার আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।


সর্বশেষ সংবাদ