গরমের দিনে ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তি দেবে ‘নেচারস কুল ড্রিংক’ তরমুজ
- তানজিদ শুভ্র
- প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৪ AM , আপডেট: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:৫৯ PM
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক তরমুজ বিক্রেতার মুখ থেকে ছুটে আসা ‘ওই কী রে? কী রে? মধু, মধু’-ডাক এক নিমিষেই ভাইরাল হয়ে পড়ে। মোহাম্মদ রনি, একজন সাধারণ তরমুজ বিক্রেতা, যার স্বতঃস্ফূর্ত ঢঙের আহ্বান জুগিয়েছে হাসি, শেয়ার আর শোরগোল। তবে তরমুজের গল্প শুধু ভাইরাল ভিডিওতেই আটকে নেই। এই লাল-সবুজ রসাল ফলটি গ্রীষ্মকালের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহুদিন ধরেই। কাঁধে গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ, কপালে ঘাম আর সেই ক্লান্ত দুপুরে যদি একফালি ঠান্ডা তরমুজের দেখা মেলে, তবে মুহূর্তেই যেন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। তরমুজ শুধু একটি ফল নয়, জীবন, স্বাস্থ্য আর অর্থনীতির এক রসালো উপাখ্যান।
তরমুজের উৎপত্তি আফ্রিকায়, তবে এখন এটি বিশ্বের প্রায় সব উষ্ণ ও গ্রীষ্মপ্রধান দেশে চাষ হয়। আমাদের দেশেও গ্রীষ্মের আগমনে গ্রামবাংলার মাঠজুড়ে সবুজ পাতার নিচে লুকিয়ে থাকা লালচে তরমুজ যেন মৌসুমি ঐশ্বর্যের প্রতীক হয়ে ওঠে। প্রতিবছর চৈত্র-বৈশাখে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে- খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, কুড়িগ্রাম ফলনের মৌসুমে জমজমাট হয়ে ওঠে তরমুজের মাঠ। একসময় যেখানে ধানই ছিল একমাত্র ফসল, এখন সেখানে তরমুজ এনে দিয়েছে অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য। কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম থাকলে, কৃষকের মুখে হাসি ফুটে।
তরমুজ মানেই গরমের দিনে ঠান্ডা এক ঢোঁক শান্তি। ৯২ শতাংশ পানি থাকা এ ফলটি শরীর ঠান্ডা রাখতে, পানিশূন্যতা রোধে এবং ক্লান্তি দূর করতে দারুণ কাজ করে। আছে ভিটামিন এ, সি, বি৬ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, লাইকোপিন আর পটাশিয়াম; সব মিলিয়ে একেবারে ‘নেচারস কুলড্রিংক’।
শুধু মুখরোচকই নয়, তরমুজ এক স্বাস্থ্যকর সঙ্গী। তরমুজে থাকা লাইকোপিন ও সিট্রুলিন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ভিটামিন এ ও সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখে। তরমুজে থাকা জলীয় অংশ শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। তরমুজে ক্যালোরি কম থাকায় বেশি খেলেও ওজন বাড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। ত্বক সতেজ রাখতে তরমুজের রসের জুড়ি নেই। এটি প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করে এবং ব্রণের প্রবণতা কমায়। এমনকি তরমুজের খোসাও স্কিন কেয়ার মাস্ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আরো পড়ুন: হৃদরোগ থেকে ত্বকের যত্ন—লেবু পানির বিস্ময়কর উপকারিতা
তবে তরমুজেরও রয়েছে কিছু মন্দ দিক। অতিরিক্ত তরমুজ খেলে হজমে সমস্যা, গ্যাস হতে পারে। প্রাকৃতিক চিনি থাকায় ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য খুব বেশি খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় কিছু অসাধু চাষি তরমুজে রং বা অন্যান্য রাসায়নিক ব্যবহার করেন, যা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। রাসায়নিক দিয়ে পাকানো তরমুজ বিপজ্জনক, বিশেষত রাস্তার পাশে অতিরিক্ত লালচে তরমুজ দেখলে সাবধান।
তরমুজ এখন আর শুধু লাল রঙের নয়। পাওয়া যাচ্ছে হলুদ তরমুজ, বীজবিহীন তরমুজ, এমনকি বক্স আকৃতির তরমুজও! বাজারে বিভিন্ন জাতের তরমুজের স্বাদ ও বৈশিষ্ট্যও ভিন্ন।
সরাসরি টুকরো করে ঠান্ডা করে কাটা তরমুজের টুকরো খাওয়ার মজাই আলাদা। এছাড়াও ব্লেন্ডারে তরমুজ, বরফ, আর সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে বানিয়ে নেওয়া যায় তরমুজের জুস। তরমুজ, পেঁপে, কলা, দই বা দুধ দিয়ে গ্রীষ্মের হেলদি স্মুদিও বানানো যায়। আর বাচ্চাদের জন্য চিনি ছাড়া তরমুজের আইসক্রিমও হতে পারে আরেক স্বাদের আহার।
তরমুজ শুধু গরমে শান্তি আনে না, এটি একাধারে স্বাস্থ্যের রক্ষক, ত্বকের বন্ধু, আর তৃষ্ণার অমীয় প্রতিকার। তাই এই গ্রীষ্মে বরফ ঠান্ডা তরমুজ খান, তবে সচেতন থেকে। কারণ প্রকৃত স্বাস্থ্য আসে সঠিক জানাশোনা ও পরিমিতির মধ্য দিয়ে।
লেখক, শিক্ষার্থী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।