আশ্বাসেই আটকে আছে বশেমুরবিপ্রবির ফি পুনর্নির্ধারণ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলনের প্রায় ছয়মাস পার হলেও এখনও ফি পুনর্নির্ধারণ করেনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা জানান, এ বিষয়ে প্রশাসনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও বিষয়টিকে আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ রেখেছে প্রশাসন। ফলে ক্রমশই বাড়ছে তাদরে ওপর বাড়ছে বকেয়া ফি-এর বোঝা।

এনিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘দুইটা সেমিষ্টার শেষ; কিন্তু সেমিষ্টার ফি এখনো বাকি। নতুন সেমিস্টারের ভর্তি ফিও এখনো নেওয়া হয়নি। ফি কবে নির্ধারণ হবে বা কোন উপায়ে ফি পরিশোধ করতে হবে তার কোনো কিছুই এখনও জানি না আমরা।

‘‘আর ফি নির্ধারিত হলেও এতগুলো টাকা একবারে কীভাবে পরিশোধ করবো? প্রশাসন এ বিষয়ে বিকল্প কিছু ভাবছে কিনা সেটিও আমাদের অজানা।’’

তোফায়েল বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী হিসেবে মনে করি প্রশাসনের জন্য এই মুহুর্তে সবচেয়ে জরুরি ন্যায্য ফি নির্ধারণ করে বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য অতিদ্রুত একটি শিক্ষার্থীবান্ধব উপায় বের করা।’

এদিকে, শুধুমাত্র বর্তমান শিক্ষার্থীরাই নয় ফি নিয়ে ভোগান্তির মুখোমুখি হচ্ছেন সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরাও। স্নাতক সম্পন্নকারী একাধিক শিক্ষার্থী জানান চাকরি, বিদেশ গমনসহ বিভিন্ন কারণে সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে গেলে তাদেরকে পূর্বনির্ধারিত ফি অনুযায়ীই বিগত দুই সেমিস্টারের সকল অর্থ জমা দিতে হচ্ছে।

একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী অনিক চৌধুরী তপু বলেন, ‘২০১৯ সালে তৎকালীন ভিসিবিরোধী আন্দোলের পর দুইটি প্রশাসন দায়িত্বে এসেও ফি নির্ধারণের মত বিষয়টির সমাধান করতে পারেনি। ফির ছাড়পত্র না থাকায় পরিচিত অনেক স্নাতক সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির মুখোমুখি হতে দেখেছি। বিভিন্ন প্রয়োজনে সনদ ও প্রয়োজনীয় নথি উত্তোলন করার সময় তাদের পূর্ব নির্ধারিত সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে।

আরও পড়ুন: বশেমুরবিপ্রবিতে আন্দোলন: যেমন ফি চান শিক্ষার্থীরা

তপু আরও বলেন, ‘কয়েক সেমিস্টারের বকেয়া ফি যখন শিক্ষার্থীদের একসাথে দিতে হবে তখন বেশিরভাগেরই অর্থনৈতিক চাপের সৃষ্টি হতে পারে। তাই সর্বোপরি আশা করবো খুব শিগগিরই যেনো ফি সংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতের প্রাধান্য দিয়ে প্রশাসন যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। একইসাথে ফি প্রদানে যাতে কারো ওপর অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি না হয় সেই বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরেই সেমিস্টার ফি নির্ধারণ করা হবে। তিন সেমিস্টারের ফি একসাথে প্রদান করতে হবে কিনা এমন প্রশ্নের উতরে উপাচার্য বলেন, ‘এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এর আগে ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর শিক্ষা ও আবাসন সংশ্লিট বিভিন্ন ফি কমানোর দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে ২৯ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের সাথে মুক্ত আলোচনায় বসেন উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব।

মুক্ত আলোচনা সভায় বেশ কয়েকটি খাতে ফি কমানোর ঘোষণা দেন তিনি এবং আশ্বাস দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাথে আলোচনা করে বাজেট বৃদ্ধি সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী অন্যান্য ফি পুনর্নির্ধারণ করা হবে। তবে প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও সেই আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের পদত্যাগের প্রায় ১০ দিন পূর্বে রেজিস্ট্রার সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ১৪ দফা দাবি মেনে নেয়া হয় যার মধ্যে অন্যতম একটি দাবি ছিলো শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ফি কমানো। কিন্তু পরবর্তীতে ২০২১ এর ২৫ অক্টোবর ফি না কমিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে ২৬ অক্টোবর থেকে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা।


সর্বশেষ সংবাদ