এখনো বেনামেই রয়েছে নোবিপ্রবির মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নামবিহীন মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নামবিহীন মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য   © ফাইল ছবি

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য নির্মাণের পর থেকেই দাঁড়িয়ে আছে নামহীন। নামকরণের কথা দিয়েও ৮ বছর আগে নির্মিত এই স্থাপনাটি নামহীন রয়েছে। এছাড়াও এই ভাস্কর্যটির নামকরণে কালক্ষেপণ করে যাচ্ছেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম।

জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর সাইদুল হক এই ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তখন এটির সাময়িক নাম দেয়া হয়েছিল ‘স্বাধীনতা ভাস্কর্য’। সে সময়ের দেওয়া অস্থায়ী নামের ওপরেই এখনো দাঁড়িয়ে আছে এই মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য। উদ্বোধনের সময় উপাচার্য নাম ঠিক করার ব্যাপারে গুরুত্ব দেখালেও সেটি আর কাজে পরিণত হয়নি।

দেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে স্থাপন করা হয় বিভিন্ন ভাস্কর্য। ঠিক যেমনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অপরাজের বাংলা’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সংশপ্তক’ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বিজয় একাত্তর’, কিংবা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চেতনা ৭১’ প্রভৃতি উদ্দীপনা মূলক নামের ভাস্কর্য।

প্রায় সময় বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা পরিলক্ষিত হয়। তাদের অভিযোগ, এক অস্থায়ী নামেই ৮ বছরের অধিক সময় পড়ে আছে একটি মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য! অথচ বিভিন্ন সময় উপাচার্যরা দ্রুত সময়ের মধ্যে নামকরণ করার কথা বলেছেন। দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঘুরতে আসা সহপাঠী বন্ধুরা ভাস্কর্যটির নাম জানতে চাইলে তখন আমরা নাম বলতে পারি না। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে শিক্ষার্থীদের নিকট নাম আহবান করা হয়। সেসময় এটির নামকরণের জন্য কয়েকটি নাম সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু নাম সংগ্রহের দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো অগ্রগতি নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। 

এ বিষয়ে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক আফসানা মৌসুমি জানান, শিক্ষার্থীদের থেকে নাম সংগ্রহ করে এটির জন্য কমিটি করা হয়েছে। উক্ত কমিটির মাধ্যমে নাম সিলেক্ট করে উপাচার্যের কাছে প্রস্তাবনা চিঠি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে কেন নাম দেওয়া হয়নি এবিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলো স্থাপনা রয়েছে যেগুলোকে প্রকল্পের তালিকা অনুযায়ী যেভাবে নির্মাণ করা হয়েছে সেভাবেই নামকরণ করা হয়েছে। যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ১, একাডেমিক ভবন ২ সহ আরও কিছু স্থাপনা রয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোর কোন নাম নেই। শিক্ষার্থীরা বাস নামকরণের বিষয়ে প্রস্তাবনা করলে নাম দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রপরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে অনেক আগে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে করোনাকালীন ছুটিতে এবিষয়ে আর আলোচনা হয়নি। তবে আমি বিষয়টি নিয়ে খুব শিগগিরই কথা বলব।

এই বিষয়ে নোবিপ্রবির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলমের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ক্যাম্পাসে লকডাউন চলার কারণে সরাসরি না পেয়ে দুই দিন থেকে মুঠোফোনে চেষ্টা করেও উপাচার্যের সাথে কোন যোগাযোগ করা যায়নি। উপাচার্য বরাবর শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবকৃত নাম সমূহ সম্বলিত চিঠি গেলেও কেন স্থায়ী নাম দিতে বিলম্বিত হচ্ছে? এমন ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে মন্তব্য জানতে চেয়ে কোন বার্তার উত্তর পাওয়া যায় নি এবং পরবর্তীতে ফোনকলও রিসিভ করেন নি।


সর্বশেষ সংবাদ