অনশনরত শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতে কুয়েটে শিক্ষা উপদেষ্টা
- কুয়েট প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৮ AM , আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৮ AM

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) চলমান আন্দোলন ও অনশনরত শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতে ক্যাম্পাসে পৌঁছেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার। আজ বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল পৌনে ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে পৌঁছান উপদেষ্টা। এরপর তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘এই গরমে তোমরা যারা অনশন করছ এবং অনশনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থানের দৃঢ়তা তুলে ধরেছ, তোমাদের বলতে চাই, প্রক্রিয়া চলমান আছে। খুব শিগগির তদন্ত কমিটি আসবে। তারা তোমাদের সঙ্গে কথা বলবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি গতকালকে ফোনে তোমাদের অনশন থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছিলাম। তারপরও আমি রাতে ঘুমাতে পারিনি। তাই আমি সশরীর তোমাদের দেখতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আজকে তোমাদের আহ্বান নয়, অনুরোধ করছি, তোমরা অনশন থেকে সরে আসো।’
কিন্তু অনশনরত শিক্ষার্থীরা বলেন,ভিসির পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন থেকে সরে আসবেন না।
আরও পড়ুন: পারভেজ হত্যা: ঘটনার সেই ‘দুই বান্ধবীকে’ খুঁজছে বিশ্ববিদ্যালয়-পুলিশ
এর জবাবে উপদেষ্টা মহোদয় বলেন, ‘একটা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট থেকে এ পদক্ষেপকে অবৈধ ঘোষণা করা হলে আমাদের কিছু করার থাকবে না।’
ইইই ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল সৈকত উপদেষ্টা মহোদয়ের কাছে পুরো ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি আরও বলেন, ‘একজন হামলাকারীকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। আমরা কীভাবে বাইরে বের হব।’
এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা মহোদয় বলেন, তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
সৈকত আরও বলেন, ‘আমরা ৫ হাজার শিক্ষার্থীর সাইনসংবলিত স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টা বরাবর দিয়েছি। আমরা আলোচনায় বসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন আমাদের সঙ্গে আলোচনায় না বসে আমাদের মামলা, রাস্তায় ঘুমাতে বাধ্য করা ও বহিষ্কার করেছে।’
সিএসই ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী জামান উপল বলেন, ‘দুই মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে। আমরা এখন আর তদন্ত কমিটি চাই না। আমরা এখন বিচার চাই। আমার পানির পিপাসা পেয়েছে স্যার। আপনি মাসুদকে অপসারণ করেন। আমি পানি খাব।’
জামান উপল নামের আরও শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা অনশন থেকে সরে আসব না। আপনারা তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেন।’ এ সময় তিনি উপদেষ্টা মহোদয়কে প্রশ্ন করেন, বহিষ্কার লিস্ট কীভাবে ছাত্রদলের কাছে গেল?
আরও পড়ুন: সবচেয়ে বেশি বই পড়েন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতীয়রা, বাংলাদেশিদের পরিমাণ নগণ্য
নাজমুস সাকিব ইইই ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনশন থেকে সরে আসতে আমাদের অভিভাবকদের কল দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে।’
এর উত্তরে উপদেষ্টা মহোদয় বলেন, এমন প্রমাণ থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলা শেষে সংবাদমাধ্যমকে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এ জন্যই তারা এমন অনড় হয়ে আছে। তবে আমি আশা করি, আমার কথায় তারা কিছুটা আস্থা ফিরে পেয়েছে।’
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে তিনি কথ বলেন এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগগুলো তুলে ধরে দ্রত ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন।
এদিকে কুয়েট পরিস্থিতি নিরসনে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিও আজ দুপুরে কুয়েটে আসবে।
কমিটিতে রয়েছেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দিন খান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান।
আরও পড়ুন: কুয়েটের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সব ক্যাম্পাসে কর্মসূচি, টিএসসিতে সমাবেশ আজ
প্রসঙ্গত, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল-যুবদল এবং সাধারণ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে, যাতে অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় একাডেমিক কার্যক্রম ও হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
তবে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শিক্ষার্থীরা গত ১৩ এপ্রিল থেকে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন এবং ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।