যে সাফল্য নিয়ে জাপান যাচ্ছেন মাভাবিপ্রবির দুই বন্ধু

রিফাত সরকার ও নাহিদুর রহমান
রিফাত সরকার ও নাহিদুর রহমান  © সংগৃহীত

জাপানের সরকারি স্কলারশিপ মেক্সট বা মনবুকাগাকুশো পেয়ে ইয়ামাগাতা ইউনিভার্সিটির কেমিক্যাল অ্যান্ড বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে মাস্টার্সের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন রিফাত সরকার ও নাহিদুর রহমান। তারা দুজন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি (বিএমবি) বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। দুজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুও।

মেক্সট জাপানের সরকারি বৃত্তি। এই বৃত্তির ফলে ইয়ামাগাতা ইউনিভার্সিটিতে কোনো টিউশন ফি, পরীক্ষার ফি বা অন্যান্য কোনো ফি দিতে হয় না। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যাবতীয় ফি বিনা মূল্যে এবং পাবলিক বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি ও অন্যান্য ব্যয়ভার বহন করে দেশটি। মাসিক উপবৃত্তি, বিমানে যাতায়াত খরচসহ নানা সুযোগ-সুবিধা মেলে এ বৃত্তি পেলে।

জানা গেছে, প্রথম বর্ষ থেকেই দুই বন্ধুর অভিযানের শুরু। একসঙ্গে পড়াশোনা ও একে অপরকে সহায়তা করা এবং শেখার আনন্দ ভাগাভাগি করা ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। তারা জানতেন, একে অপরের পাশে থাকলে পড়াশোনা সহজ হয় এবং সাফল্য আসে। দুজনই ক্লাসের পর গ্রুপ স্টাডি, খেলাধুলা, আড্ডা ও ভ্রমণে যাওয়া ছিল এগিয়ে যাওয়ার অংশ।

বৃত্তিপ্রাপ্ত রিফাত সরকার রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার অধীনে আলমবিদিতর ইউনিয়নের পূর্ব মনিরাম পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০১৫ সালে শিশু নিকেতন উচ্চবিদ্যালয়, রংপুর থেকে এসএসসি এবং ২০১৭ সালে বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রংপুর থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি মাভাবিপ্রবির বিএমবি বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।

তার বাবা মো. বদরুদ্দোজা সরকার একজন অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য, মা‌ হোসনেয়ারা বেগম একজন গৃহিণী। দুই ভাইয়ের মধ্যে রিফাত বড়। রিফাত সরকার বলেন, ‘ছোটবেলায় আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার, কিন্তু মেডিকেলে চান্স না পাওয়ায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম। তবে করোনাকালে বিভাগের সিনিয়র মো. সোহেল ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় আবার পড়াশোনায় মনোযোগ দিই। এই যাত্রায় আমার পরিবার সর্বদা আমার পাশে থেকেছে। বিভাগের শিক্ষকমণ্ডলী, আমার বন্ধুরা ও বিভাগের সিনিয়ররা আমাকে সব সময় সহযোগিতা করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ ড. সায়মা সাবরিনা ম্যামের প্রতি, যিনি আমাকে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। এছাড়া, ড. আশেকুল ইসলাম স্যার, নোবেল ভাই, চৈতি আপু, রাজীব ভাই এবং আমার জীবনসঙ্গীর সহযোগিতা আমাকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছে।’

আরেক বৃত্তিপ্রাপ্ত নাহিদুর রহমানের জন্ম জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলায়। তিনি ২০১৬ সালে সাধুরপাড়া নজরুল ইসলাম উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৮ সালে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনিও মাভাবিপ্রবির বিএমবি বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।

তার বাবা আনিসুর রহমান একজন ব্যবসায়ী, মা নাছিমা বেগম একজন গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের (দুই ভাই ও এক বোন) মধ্যে দ্বিতীয় নাহিদুর।

নাহিদুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথম বর্ষে পড়াশোনায় খুব বেশি মনোযোগী ছিলাম না। তবে দ্বিতীয় বর্ষ থেকে বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা জন্মায় এবং বন্ধু ছাব্বির,আরিফ, বিভাগের সম্মানিত শিক্ষক ও সিনিয়রদের সহযোগিতায় আস্তে আস্তে পড়াশোনায় মনোযোগী হই। এতে ধাপে ধাপে উন্নতি করে সিজিপিএ ৩.৭৪ নিয়ে অনার্স সম্পন্ন করি।’

শিক্ষকদের বিষয়ে নাহিদ বলেন, ‘আমার অনুপ্রেরণার অন্যতম উৎস ছিলেন আমার থিসিস সুপারভাইজার ড. মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্যার ও শ্রদ্ধেয় ড. সায়মা সাবরিনা ম্যাম। তাদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা ও সহায়তায় এবং সিনিয়র মেক্সট স্কলার রাজীব ভাই, কামরুজ্জামান স্যার, নোবেল স্যারের পরামর্শ অনুযায়ী মেক্সট বৃত্তির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে সফলতা অর্জন করি।’

তিনি বলেন, ‘এই যাত্রা আমাকে শিখিয়েছে অধ্যবসায় ও সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে কোনো স্বপ্নই অসম্ভব নয়। ভবিষ্যতে নিজের অর্জন দিয়ে দেশ ও সমাজের কল্যাণে অবদান রাখার প্রত্যাশা করছি।’

জুনিয়র শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে রিফাত ও নাহিদুর বলেন, অনার্সের শুরু থেকেই অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী থাকা এবং সর্বোচ্চ রেজাল্ট করার পাশাপাশি এক্সট্রাকারিকুলার একটিভিটিজে অংশ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে ব্যক্তিগত দক্ষতা যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্যও ভালো প্রস্তুতি হয়। তৃতীয় বর্ষ থেকেই  গবেষণার কাজে যুক্ত হওয়া উচিত। শিক্ষকদের ও সিনিয়রদের সহায়তায় গবেষণায় অভিজ্ঞতা অর্জন ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা ও স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনও অত্যন্ত জরুরি, কারণ বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ ও উচ্চশিক্ষার সুযোগের জন্য ভালো ইংরেজি দক্ষতা অপরিহার্য।

প্রসঙ্গ, ১৯৫৪ সাল থেকে শুরু করে বিশ্বের ১৬০টির মতো দেশ থেকে আসা ছাত্রদের জন্য এ বৃত্তি দেয় জাপান সরকার। জাপান সরকার প্রদত্ত বৃত্তিগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে খ্যাতনামা আর সবচেয়ে সম্মানিত। এ বৃত্তির জন্য ভিসা পেলে ভিসায় লেখা থাকে ‘গভট. স্কলার’। জাপানের গবেষণার মাধ্যমে বৃত্তি প্রাপ্তির দেশ এবং জাপানের মধ্যে বন্ধুত্বের সেতু হয়ে ওঠা মানবসম্পদকে উৎসাহিত করা এবং উভয় দেশ ও বৃহত্তর বিশ্বের উন্নয়নে অবদান রাখার লক্ষ্যেই দেওয়া হয় এ বৃত্তি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence