‘ভাইরাল’ হতেই নিখোঁজ হওয়ার নাটক যবিপ্রবি ‘ছাত্রদল নেতা’র?
- যবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:১৪ PM , আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:২৩ PM
নিখোঁজের ২০ ঘণ্টা পর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থী ‘ছাত্রদল নেতা’ সজীব হোসেনকে উদ্ধার করেছে যশোর জেলা পুলিশ। পুলিশ বলছে, অপহরণ বা গুম নয়, ব্যক্তিগত কারণে বন্ধু নাজমুল হাসান রকির বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সজীরে বন্ধুদের দাবি, অপহরণের নাটক সাজিয়ে ‘ভাইরাল’ হতেই নিখোঁজ হওয়ার নাটক করেছিলেন ‘ছাত্রদল নেতা’ সজিব। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়, যেখানে তাকে প্রতারক ও ভন্ড বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন নেটিজেনরা।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত ৯টায় যশোর জেলা পুলিশ মিডিয়া সেল থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তাকে উদ্ধার করার তথ্য জানানো হয়।
জানা যায়, সজীব হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। যশোর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন। গত নভেম্বর মাসে ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এছাড়াও যবিপ্রবি শাখা ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী ছিলেন।
আরও জানা যায়, গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) রাত ৯টার পর থেকে সজীব হোসেনের নিখোঁজ হওয়ার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আমজাদ হোসেন যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের তৎপরতায় বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাতে সজীবকে তার বন্ধুর বাসা থেকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং তাকে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়।
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভেরিফাইড ফেসবুকে সজীবকে যবিপ্রবির ছাত্রদল নেতা দাবি করে নিখোঁজ হওয়ার খবর পোস্ট করা হয়। পোস্টে বলা হয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতা সজীবকে পাওয়া যাচ্ছে না। সে যশোর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কয়েক সপ্তাহ আগে সে ঐ কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন এবং বিপ্লব ২৪ কমিটি নামক নতুন একটা সংগঠনে আহ্বায়ক ছিলেন।
এ ঘটনাকে ভাইরাল হওয়ার নাটক বলে দাবি করে তার বন্ধু ও যবিপ্রবির শিক্ষার্থী হান্নান হোসেন বলেন, সজীব ভাইরাল হওয়ার জন্য আত্মগোপন করেছে। সে যখন আমাকে ম্যাসেজ দেয় ‘তুই কই? আমার সাথে একজন খারাপ ব্যবহার করছে, ৩/৪ জন ছেলের হাতে ছুরি আছে।’ তারপরে তাকে কেউ অ্যাটাক করছিলো এবং দৌড়ানি দিছিল। পরবর্তীতে এক বন্ধুর কাছে চলে যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার কথা রাত ৯টার পর থেকে পরের দিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত আমাকে জানালো না কেনো? আমি সেইভ আছি, ভালো আছি। সজিব যেখানে ছিল অবশ্যই ফোন ছিল। তার জন্য আমি সারারাত ও সারাদিন শিক্ষক, ডিএসবি, এনএসআই, পুলিশ, বন্ধুবান্ধবের সাথে যোগাযোগ করেছি। আমি মনে করি আমাকে ব্যবহার করে নিজেকে ভাইরাল করার জন্য এমন আত্মগোপন করেছে সজীব।’
এদিকে এ ঘটনাকে প্রতারণা বলে দাবি করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, সজীব যে বিতর্কিত কাজটি করেছে সেটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করেছে। ছাত্রদের আন্দোলনকে পুঁজি করে হাইলাইট হওয়ার জন্য বাজেভাবে ব্যবহার করেছে। এতে ছাত্রসমাজ যেভাবে অপমানিত হয়েছে পাশাপাশি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ক্ষুণ্ন করেছে, যার কোন ক্ষমা হয় না। সজীব যে নাটক মঞ্চস্থ করেছে তার মদদদাতা যারা তাদের খুঁজে নিয়ে আসা হোক। কেন তারা এমন নাটক মঞ্চস্থ করল? কেন শিক্ষার্থীদের আবেগ নিয়ে খেলা করা হলো? আমরা মনে করি সজীব যেভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এর জন্য তার শাস্তি হওয়া উচিত। পাশাপাশি এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা উচিত, ভবিষ্যতে যাতে অন্য কোন ছাত্র নিজস্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থীদের আবেগ নিয়ে খেলতে না পারে।
ঘটনা জানতে সজীব হোসেনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।