অভিভাবক শূন্য শাবিপ্রবি, শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা
- মোফাজ্জল হক, শাবিপ্রবি
- প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫৩ PM , আপডেট: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ১১:৩৮ PM
দীর্ঘ পনেরো বছর হাসিনা যুগের অবসানের পর পদত্যাগের হিড়িকে দেশের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন শূন্য হওয়ার পাশাপাশি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সকল প্রশাসনিক বডি ও গুরুত্বপূর্ণ পদের কর্মকর্তাদের পদত্যাগের ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম। এতে হতাশা আর অস্থিরতা দেখা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝেও।
গত ২৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কারণে তা পিছিয়ে পরে। এতে তীব্র সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পহেলা জুলাই থেকে দীর্ঘদিন ৩ দফা দাবিতে শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রশাসনিক সেবায় বিঘ্ন ঘটে। এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে সরকারের পতনের পর পদত্যাগ করেছেন হাসিনা সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত শাবিপ্রবির উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল বডি ও হলের প্রভোস্টরাও। গুরুত্বপূর্ণ এসব পদের পদত্যাগের ফলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন শ্রেণিকক্ষে ফিরতে না পারায় উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন পার করছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে কোষাধ্যক্ষ না থাকায় প্রায় ২ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীরাও। দীর্ঘদিন গবেষণাগার পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে থাকার ফলে মরিচা ধরে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন কাজ ও বন্ধ হয়ে আছে। এ অবস্থায় স্থবিরতা বিরাজ করছে সবকিছুতেই। প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকার ফলে দিনদিন আবাসিক হল গুলোতেও বাড়ছে নিরাপত্তার শঙ্কা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ গত বৃহস্পতিবার রাতে আনুমানিক রাত ১২ টার দিকে ১৫/২০ জনের হেলমেট পড়া কয়েকজন এসে দুপুরের মধ্যে হল ছাড়ার কথা বলেন। এরপর থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।
সবশেষ আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগের দোসর রয়েছে এমন অভিযোগ এনে সবাইকে হল থেকে নামিয়ে দিলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। চতুর্মুখী সংকটে ক্রমেই সংঘাত ও অস্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে দেশ সেরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শীর্ষে অবস্থান করা এই প্রতিষ্ঠানটি। কবে স্থিতিশীলতায় ফিরবে ক্যাম্পাস তা নিয়েও ধোঁয়াশা বাড়ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের জোর দাবি খুব শীঘ্রই যেন প্রশাসন নিয়োগ দিয়ে এই অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠা যায়।
এ ব্যাপারে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আবু খালেদ বলেন, প্রশাসন না থাকায় ইতোমধ্যে আমাদের ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর নামে বহিরাগতরা গত ২৬ তারিখ আমাদেরকে আল্টিমেটাম দিয়ে হল ছাড়তে বাধ্য করে। হল ছাড়া হয়ে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। পাশাপাশি আমরা দীর্ঘ একটা সেশনজটের মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমাদের ক্যাম্পাসে দ্রুত প্রশাসন নিয়োগ ও একাডেমিক কার্যক্রম দ্রুত চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
খাদ্য প্রকৌশল ও চা প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জাবের বলেন, জুন মাসে সেমিস্টার ফাইনাল হওয়ার কথা থাকলেও চলমান চতুর্মুখী আন্দোলন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক বডি পদত্যাগের ফলে আমরা শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। একদিকে সেশনজট সমস্যা অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই আমাদের দাবি দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে এই সমস্যার অবসান করা হোক।