মৎস্যখাতে ব্যাপক চাহিদা পিটুইটারি গ্রন্থির, বিক্রি হচ্ছে ৫-৮ হাজারে

পিটুইটারি গ্রন্থি
পিটুইটারি গ্রন্থি  © টিডিসি রিপোর্ট

মাছের মস্তিষ্কের পাশে থাকা ছোট্ট একটি গ্রন্থি ‘পিটুইটারি গ্লান্ড’ যেটা প্রক্রিয়াজাতকরণ করার পর বিভিন্ন মৎস্য হ্যাচারিতে ব্যবহৃত হয় মাছের কৃত্রিম প্রজনন ঘটানোর জন্য। আর মাছের এই পিটুইটারি গ্লান্ড বাজারজাতকরণে মৎস্য খাতে সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবির) সাবেক শিক্ষার্থী নেওয়াজ শরীফ।

সারা বিশ্বের মৎস্য চাষীদের কাছে এই পিটুইটারি গ্লান্ডের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পিটুইটারি গ্লান্ডকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য। বাংলাদেশের বাজারেও এর চাহিদা কম নয়। দেশীয় বাজারে এই গ্লান্ডের প্রতি গ্রামের দাম বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫-৮ হাজার টাকা।

বাণিজ্যিক ও সম্ভাবনার দিক বিবেচনায় মৎস্য উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মৎস্য চাষীদের কাছেও রয়েছে এই পিটুইটারি গ্লান্ডের ব্যাপক চাহিদা। দেশের মৎস্য খাতের  চাহিদার কথা চিন্তা করে এবং সম্ভাবনার নতুন ধার উন্মোচনের কথা চিন্তা করে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড উৎপাদনের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান JSL Agro Fisheries গড়ে তুলেছেন যবিপ্রবির ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী বি. এম. নেওয়াজ শরীফ। 

এই  উদ্যোগের উদ্দেশ্য বিষয়ে নেওয়াজ বলেন, বাংলাদেশের হ্যাচারিগুলোতে এই পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে তবে দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের ভিতরে এই গ্লান্ড উৎপাদনের প্রতিষ্ঠান হাতেগোনা কয়েকটি, এর ফলে আমরা চাহিদা মত এই গ্লান্ড সরবরাহ করতে পারছি না। যে কারণে বিদেশ থেকে আমাদের চাহিদা পূরণ করার জন্য এই গ্লান্ড চড়ামূল্যে ক্রয় করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, যেহেতু বাংলাদেশের মৎস্য খাত সম্ভাবনাময়ী, তাই আমি মনে করি এই খাতটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য এমন উদ্যোগ বর্তমানে আরো বৃদ্ধি হওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তের মৎস্য চাষীরা চাইলে আমাদের কাছ থেকে ভালো মানের পিটুইটারি গ্লান্ড সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া আমরা আমাদের উৎপাদিত পিটুইটারি গ্লান্ড বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পরিকল্পনা নিয়েছি।

নেওয়াজের এ উদ্যোগের পাশে দাঁড়িয়েছে শিশু নিলয় ফাউন্ডেশন এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। ইতোমধ্যে এই দুই সংগঠনের সহযোগিতায় যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার মাছ বাজারগুলোতে যারা মাছ কেটে থাকেন তাদেরকে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড সংগ্রহ করার পদ্ধতির উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন নেওয়াজ৷ প্রশিক্ষণ প্রদানে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছেন যবিপ্রবির ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এবং “শিশু নিলয় ফাউন্ডেশন”-এর মৎস্য কর্মকর্তা মো. জামিল হোসাইন।

পিটুইটারি গ্লান্ড সংগ্রহের জন্য মাছ বাজারগুলোতে যারা মাছ কেটে থাকেন তাদের কাছ থেকে প্রতি পিস পিটুইটারি গ্লান্ড ৫ থেকে ১০ টাকায় সংগ্রহ করে নেওয়াজ শরীফের প্রতিষ্ঠান। সংগ্রহকৃত গ্লান্ড নিজেদের ল্যাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ করে এবং কৌটাজাতকরণ করে সারাদেশের মৎস্য চাষীদের নিকট বাজারজাত করে তার প্রতিষ্ঠান।

নেওয়াজ শরীফ বলেন, এই গ্লান্ডের উৎপাদন অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা। শুধুমাত্র কিছু কারিগরি জ্ঞান থাকলে, ভালো মানের মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। এই ক্ষেত্রটি বাংলাদেশে নতুন হলেও আমি মনে করি এটিকে ছাড়া বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত কেননা এটি একদিকে দেশের মৎস্য খাতকে সমৃদ্ধ করবে অপরদিকে যুব সমাজকে বেকারত্বের হাত রক্ষা করতে পারবে।  তিনি আরো বলেন, এমন উদ্যোগের পাশে সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে বাংলাদেশের মৎস্যখাত ভবিষ্যতে আরো সমৃদ্ধ এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে।


সর্বশেষ সংবাদ