দত্তেরহাটে বাসের মধ্যে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি
- নোবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৪২ PM , আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:০২ PM
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থী এবং বহিরাগতদের হামলার শিকার হয়েছেন মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। কোর্স ট্যুর আয়োজনকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত বলে জানা যায়।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের এফআইকিউসি থেকে কোর্স ট্যুর শেষে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার সময় রাত ১১টার দিকে নোয়াখালীর দত্তেরহাটে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফুল হক তুহিন এবং মৎস ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তারেক রহমান ইমন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হামলার শিকার ওই বিভাগের শিক্ষার্থী নাসির বলেন, আমরা আজকে সকালে চট্রগ্রামে যাই আমাদের কোর্স ট্যুরে। সেখানে সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে ফিরে আসার সময় দত্তেরহাট আমার বন্ধু তারেক বাস থেকে নেমে যায়। তখন সে বাহির থেকে আমাকে বাস থেকে নামতে বলে। বাস থেকে না নামায় ৭-৮ জন ছেলে নিয়ে আমি এবং আমার বন্ধু মাসুৃম, মুশফিক এবং বিশাদের ওপর হামলা করে। তারা আমাদেরকে অনবরত কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে এবং গালিগালাজ করে। তাদের মারামারির ৫-৭ মিনিট পরে আইসিই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের তুহিন ভাই যোগ দেন। মূলত ওনার নেতৃত্বেই হামলা চালায় তারা।
আরও পড়ুন: মাভাবিপ্রবির ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২ ইউনিট
পূর্ব কোনো বিবাদের জের ধরে এই হামলার সূত্রপাত কিনা তা জানতে চাইলে নাসির আরও বলেন, তারেকের সাথে তাদের পূর্বে একটা সমস্যা হয়েছিল। সেটা তখন মিমাংসাও হয়েছিল। আমাদের ট্যুর চলাকালীনও কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু সে বাস থেকে নামার সময় এ অতর্কিত হামলা চালায়।
বাসে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ছাত্রী জানায়, কয়েকজন ছেলে এসে তাদের ব্যাচের ছেলেদের ওপর হামলা করে। বাজেভাবে গালিগালাজ ও করে। এমনকি ক্যাম্পাসে গিয়ে মুখ খুললে পরবর্তীতে দেখে নেবেও বলে হুমকি দেয়।
বাস সুপারভাইজার বলেন, চৌরাস্তা থেকে প্রত্যেকটা জায়গায় আমরা তাদেরকে নামিয়ে দিচ্ছিলাম। একইভাবে তাদের একজন দত্তেরহাট নামবে বললে গাড়ি থামানো হয়। গেট খোলার পর দেখি কয়েকজন গাড়িতে উঠে মারামারি শুরু করে।
ট্যুরের দায়িত্বে থাকা বিভাগের শিক্ষকদের একজন সহযোগী অধ্যাপক এ.এফ.এম আরিফুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে যাওয়ার পর যখন আমরা নোয়াখালী ফিরছিলাম তখন শিক্ষার্থীরা আনন্দ করতে করতে আসছিল। কারও মাঝে কোনো ঝামেলা বা ঝগড়া-বিবাদ দেখা যায়নি। আমি মাইজদী বাজার ক্রস করার সময় নেমে যাই। তারা শৃঙ্খলভাবে থাকবে বলেও জানায়। কিন্তু হঠাৎ করে এমন ঘটনা ঘটবে কখনো আশা করিনি। ঘটনার পরে ছাত্ররা ফোন দিয়ে বললে রীতিমতো আশ্চর্য হই।
অভিযুক্ত একই বিভাগের (১৫তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী তারেকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিভাগ থেকে স্যার আমাকে ক্লাস প্রতিনিধি হিসেবে ট্যুর আয়োজন করার দায়িত্ব দেন। আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে কাজ করি। নাসির বা তার অন্য বন্ধুদের সাথে কাজ করি না। গত ২ দিন আগে সে বিভাগের সামনে আমাকে গালিগালাজ করে জোর গলায় জিজ্ঞাসা করে যে সব কিছু তুই করবি নাকি? স্যার কি তোকে একাই দায়িত্ব দিয়েছে কিনা। তখন আমি তাকে বলি যে স্যার আমাকে অফিসিয়ালি দায়িত্ব দিয়েছেন তাই আমি দায়িত্ব পালন করতেছি।
তিনি জানান, এরপর নাসির আক্রমণাত্মক আচরণ দেখে আমি তাকে ধাক্কা দিলে সে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমার পেটে লাথি দেয়। পরবর্তীতে আমি বিষয়টি আমার বন্ধুদের বলি। ট্যুর থেকে ফেরার সময় আমার বন্ধুরা আমাকে ফোন দিয়ে কোথায় আছি জিজ্ঞেস করলে আমি বলি একটু পর দত্তেরহাট পৌঁছাবো। আমি দত্তেরহাটে নামার পর বন্ধুরা বাসে উঠলে তাদের সাথে ধস্তাধস্তি হয়।
তারেক আরও বলেন, তারা এখন মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। তুহিন ভাইয়ের নামেও তারা মিথ্যা বলছে। আশেপাশের লোকজনের কাছে শুনে তুহিন ভাই ঘটনার শেষের দিকে এসে ধাক্কাধাক্কি থামিয়ে দেওয়ার জন্য আমাদের বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে বাস ছেড়ে দিতে বলেন।
এ বিষয়ে আরেক অভিযুক্ত আইসিই বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল হক তুহিন সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করে বলেন, এ ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি শেষ মুহূর্তে ছিলাম। আমি মাইজদী থেকে দত্তেরহাটে আসার সময় ঘটনা দেখে। ঘটনা শুনে গাড়ি থেকে নেমে এক পক্ষকে বাস থেকে বের করে এনে ক্যাম্পাসের বাসে পাঠিয়ে দিয়েছি।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, আমরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি। আগামীকাল তাদেরকে একটা লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নিব।