প্রফেসর ড. রবিউল হক— বিদায় হে বটবৃক্ষ

প্রফেসর ড. রবিউল হক
প্রফেসর ড. রবিউল হক  © টিডিসি ফটো

প্রতিদিনের মতো চেম্বারের তালা খুলে প্রবেশ করা, তারপর কিছুটা তাড়াহুড়ো করে ফাইল ও কাজপত্র গুছিয়ে ক্লাসের দিকে ছুটে চলা। তবে আজ হঠাৎ থমকে দাঁড়ানো। হাতে থাকা ফাইল নোটগুলোর ভার যেন পাহাড়সম। গন্তব্য আজ প্রতিদিনের নিয়ম মাফিক ক্লাস রুমের হোয়াইট বোর্ড অথবা লেকচার টেবিল নয়, প্রিয় ৯০ একর ছেড়ে দূরে অথবা আরও দূরে।

অতঃপর প্রফেসর ড. রবিউল হকের গন্তব্য পরিবর্তিত হয়ে নিজের চিরচেনা চেয়ারে আসন গ্রহণ। সাথে কিছুটা ভারী গলা আর সিক্ত হয়ে আসা চোখ। জানালার বাহিরে তাকিয়ে হাতে গড়া ক্যাম্পাসে শিক্ষকতার ৪১টি বছরের হিসাব মেলানো।

বিদায় সবসময়ই বিষাদময়। বিদায়েরও কি তবে কিছু দায় থাকে? দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় কত প্রিয় মুখ, কত চেনা চেহারা! কত নীরব দৃষ্টি, কত কথা! কত হাসি-গান, কত স্মৃতি! বিদায়ের বেদনা কার বেশি? যে বিদায় নেয়, তার? নাকি যে বিদায় দেয়, তার?

বিদায় সংবর্ধনায় তার বক্তব্যে ছিলো, ‘তোমরা আর যাই হও, যতই সফল হও, যদি তুমি ভালো মানুষ না হতে পারো, তবে তুমি সম্পূর্ণ ব্যর্থ’

শিক্ষকতা জীবনে ছিলেন সকলের কাছে এক অনুকরণীয় আদর্শ, ছিলেন এক মানুষ গড়ার কারিগর। পবিপ্রবি (পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) ভিসি প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের ভাষ্যে, যিনি একজন অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তমনা মানুষ, যিনি দল, মত, ধর্ম নির্বিশেষে সবসময়ই সকলের বিপদে কাছে ছুটে গিয়েছেন সবার আগে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একজন সফল ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা। ছিলেন এক গুণীজন, তৈরী করেছেন তেমনি হাজারো গুণী। তাই হয়তো বেদনার ভারটা তার চেয়ে তার শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদেরই একটু বেশী।

শিক্ষক জীবনের শেষ দিনে যখন বিদায় সংবর্ধনায় মঞ্চে পা রাখলেন, হঠাৎ নিদারুণ নিস্তব্ধতা। সামনে থাকা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবয়বে যেন অলিন্দ-নিলয়ের থমকে আসা আঁধার। শিক্ষকতা জীবনে কত কিছুরই সাক্ষী তিনি। শিক্ষক হিসেবে দিয়ে গেছেন দুহাত ভরে। নিজের প্রতিষ্ঠানকে নিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। গোলপাতার ছাউনিতে আবৃত পটুয়াখালী কৃষি কলেজকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করতে ছিলেন অনন্য ভূমিকায়, নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে।

আরও পড়ুন: ‘কুমিল্লা বোর্ডের প্রশ্নপত্রে’ সাম্প্রদায়িক উসকানি ছিল না

ছিলেন কৃষি অনুষদের ডিন, তার হাতে গড়া খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান অনুষদ আজ দেশের অনন্য উচ্চতায়। ছাত্রদের কাছে যার জনপ্রিয়তা ছিলো অনবদ্য। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টার। রাত ২টা বা ৩টা যখনই হোক ছাত্রদের সমস্যায় ছুটে গিয়েছেন সবার আগে। আগলে রেখেছেন ছাত্রদের এক বটবৃক্ষের মতো। ছাত্রদের অধিকার আদায়ে ছিলেন সবসময়ই সোচ্চার। এতসব প্রাপ্তির কারণেই হয়তো এই বিদায় বেলায় বাতাস এতোটা ভারি।

মঞ্চে উঠে বক্তৃতায় স্মরণ করলেন তার বর্ণীল শিক্ষকতা জীবন, বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও স্মৃতিচারণ, সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের সাথে কাটানো বিভিন্ন মুহূর্ত। উঞ্চ সংবর্ধনা পরিণত হলো নয়ন সিক্ত অভিবাদনে। এসেছিলেন একজন অগ্রদূত হয়ে দ্যুতি ছড়াতে। নক্ষত্রেরও শেষ হয় তবে তার কিরণ ছড়িয়ে যায় গ্রহ-উপগ্রহে। 

শুকনো পাতা প্রাকৃতিকভাবেই বিদায় নেয় নতুন কিশলয়কে জায়গা করে দিতে। আবার সেই নতুন পাতাও এক সময় বিবর্ণ হয়, শুকিয়ে যায়, ঝরে পড়ে। বিদায় মানে সব কিছু শেষ নয়।  শিক্ষকতা জীবনে যে প্রদীপ রেখে গেছেন তা আগামী শতবর্ষ পর্যন্ত প্রদীপ্ত করবে হাজারো উদ্ভাসিত শিক্ষার্থীর হৃদয়কে। সে আশাতেই হয়তো শেষ বেলায় প্রফেসর ড. রবিউল হকের সিক্ত চোখ রবির ভাষায় বলছিলো;

কবিগুরুর আক্ষেপে ‘গিয়েছে যে দিন, একেবারেই কি গেছে?’ ‘কিছুই কি নেই বাকি?’ সে প্রশ্ন হয়তো তার কোনো উত্তর খুঁজে পাবে না, হয়তো পাবেও। কিন্তু, ‍তুমি আসবে তো, প্রিয়? 

তাতে তো আবারও তোমার নির্লিপ্ত ভাষ্য ‘তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান; গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়। হে বন্ধু, বিদায়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence