শুধু ভাষাকে নয়, বর্ণমালাও ভালোবাসতে হবে: মোস্তাফা জব্বার

রবি আয়োজিত ‘প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভা
রবি আয়োজিত ‘প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভা  © সংগৃহীত

প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার আরও এগিয়ে নিতে বাংলায় গুণগত কনটেন্ট নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আয়োজিত ‘প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ভাষা নদীর মতো বহমান। ভাষার কিছু অপব্যবহার সত্ত্বেও প্রবহমান নদীর মতো বাংলা আপন গতিতে প্রবহমান থাকবে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমাদের কাজ তরুণ প্রজন্মকে সংশ্লিষ্ট করে প্রযুক্তির মাধ্যমে এ অগ্রগতি নিশ্চিত করা।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, সরকারের গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে ১৬টি টুলস উন্নয়ন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শুধু ভাষাকে নয়, আমাদের বর্ণমালাও ভালোবাসতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশই বাংলার রাজধানী। বাংলা ভাষাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদেরই কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুন: ঘুমের ওষুধ খেয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রের আত্মহত্যা

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ।

তিনি বলেন, প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার অন্তর্ভুক্তির ফলেই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে পেরেছি। জনসংখ্যার বিচারে বাংলা সপ্তম অবস্থানে থাকলেও ইন্টারনেট ব্যবহারে শীর্ষ ৪০টি ভাষার মধ্যে বাংলা ঠাঁই পায়নি। তাই বাংলার মাধ্যমে প্রযুক্তিকে সর্বস্তরের জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে।

নাসিম পারভেজ বলেন, মোবাইল আর্থিক সেবা বাংলায় সহজলভ্য হওয়ার কারণেই কিন্তু দেশের আর্থিক অগ্রগতি ত্বরাম্বিত হচ্ছে। প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার যত বাড়বে, ডিজিটাল বিভক্তি তত দূর হবে; তাহলে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে দেশ।

বিজয় ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন জুঁই বলেন, শিশুকে আমরা প্রথম কিন্তু ‘এ’ শেখাই না, ‘অ’ শেখাই। এটা উপলব্ধির ব্যাপার। তাই প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার আরও তরাম্বিত করতে আমাদের সেই জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। বিজয় ডিজিটালের আওতায় আমরা শিশুতোষ উপায়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে শিশুদের কাছে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তাদের পাঠ্য বইগুলো উপস্থাপন করছি। সেই উপস্থাপন বাংলায় বলেই আমরা তাদের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারছি।

টেলিকম রিপোর্টারস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) সভাপতি রাশেদ মেহেদী বলেন, ইন্টারনেট আমাদের বাংলার পরিভাষাভিত্তিক শব্দভাণ্ডার নিশ্চিত করতে হবে। প্রযুক্তি-নির্ভর সাহিত্যও বাংলা ভাষার ব্যবহার সমৃদ্ধ করতে পারে।

রবি আজিয়াটা লিমিটেডর চিফ কমার্শিয়াল কর্মকর্তা শিহাব আহমদ বলেন, প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার সর্বজনীন করতে তিনটি ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে।

আরও পড়ুন: ‘শিক্ষার্থীরা পাঁচদিন খুব মনোযোগ করে পড়বে’

প্রথমত, বিনোদন নির্ভরতা থেকে সরে এসে প্রায়োগিক দিকটিতে মনোযোগ দিতে হবে। মনুষ যেনো তার নিত্যদিনের প্রয়োজন বাংলা ভাষায় প্রযুক্তির মাধ্যমে সারতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, সবার হাতে ডিভাইস পৌঁছে দিতে তা আরও সাশ্রয়ী হতে হবে। বাংলাদেশে হ্যান্ডসেট উৎপাদিত হলেও দাম কিন্তু এখনো সবার নাগালে আসেনি। এ ব্যাপারে অন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে সংশিষ্ট সবাইকে ভাবতে হবে।

তৃতীয়ত, বাংলা ভাষায় সার্চ দিয়ে কনটেন্টের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, জাতীয় কল সেন্টার ৩৩৩ শুরু হয়েছিল রবির অর্থায়নে ও কারিগরি সহায়তায়। জাতীয় তথ্য বাতায়ন নির্মাণে যুক্ত ছিলেন রবির তথ্য-প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। রবি-টেন মিনিট স্কুল এরই মধ্যে সফলতা লাভ করেছে। হাতে কলমে বাংলায় কারিগরি শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিগগিরই আমরা আরও একটি প্রকল্প হাতে নেব। প্রযুক্তিতে বাংলার ব্যবহার সহজলভ্য করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

সমাপনী বক্তব্যে রিয়াজ রশীদ বলেন, প্রযুক্তিতে বাংলাকে এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে যেন মানুষ তা সহজে বুঝতে ও ব্যবহার করতে পারেন।


সর্বশেষ সংবাদ