ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট হ্যাক হতে পারে থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহারে

ফেসবুক
ফেসবুক  © ফাইল ফটাে

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক বহুল ব্যবহৃত একটি অন্যতম মাধ্যম। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় বর্তমানে স্মার্টফোনে ফেসবুকের পাশাপাশি শত শত অ্যাপ ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। আর এসব অ্যাপ ব্যবহার করতে ব্যবহারকারীদের লগইন করতে হয় মেইল বা মোবাইল নাম্বারের মাধ্যমে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে অনেক অ্যাপ অ্যাকটিভ করতে ফেসবুকের মাধ্যমে লগইন করতে হয়। এসব অ্যাপে যখন ফেসবুকের পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করা হয়; ঠিক তখনই হ্যাকারদের হাতে চলে যেতে পারে আপনার  ফেসবুক প্রোফাইলের নিয়ন্ত্রণ।

থার্ড পার্টি অ্যাপ ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবহার করলে হ্যাকিংয়ের কবলে পড়তে পারে আপনার ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট। শুধু তাই নয়, হ্যাকারদের কাছে চলে যেতে পারে ব্যবহারকারীর ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড ও অন্যান্য সব তথ্যও। সম্প্রতি, এমন ৪০০ অ্যাপ শনাক্ত করেছে খোদ ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। অন্তত ১০ লাখ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ডসহ অন্যান্য তথ্য চুরি হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।  আর প্রযুক্তিবিদরা বলেছেন ক্ষতিকর এসব অ্যাপ ব্যবহারের আগে সতর্ক হতে হবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপত্তার স্বার্থে।

ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা অতি-সম্প্রতি গুগল প্লেস্টোর এবং আইওএসের এরকম ৪০০ অ্যাপ শনাক্ত করে তার তালিকা প্রকাশ করেছে। অ্যান্ড্রয়েডের ৩৫৫টি আর অ্যাপলের ৪৭টি অ্যাপের অধিকাংশই গেমস, ভিপিএন, ফটো এডিটর ও রাশিফল সংক্রান্ত বলে জানিয়েছে তারা। বর্তমানে ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের ৭২ হাজার ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে রাখে। একটি সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমের হাতে আপনার বিপুল এই তথ্য ভাণ্ডার যাবার ফলে ব্যক্তি, রাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তায় এক প্রকার জিম্মি দশা তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক কিছুনা।

আরও পড়ুন: কানাডার স্টুডেন্ট ভিসা পাবেন যেভাবে 

তবে সমস্যার সমাধানও রয়েছে আপনার হাতেই; জানাচ্ছেন প্রযুক্তিবিদরা। এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটির সহযোগী অধ্যাপক ড. বিএম মাইনুল হোসেন জানালেন কীভাবে ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ও তথ্য চুরি হয়। তিনি জানান, ‘লগইন উইথ ফেসবুক’ অপশন ব্যবহার করে কোনো অ্যাপে প্রবেশ করলে তারা ফেসবুকের ঐ ব্যবহারকারীর ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ডের অ্যাকসেস পেয়ে যায়। ফলে, খুব সহজেই চুরি হয়ে যায় আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ। পাশাপাশি, আপনার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক এর নিয়ন্ত্রণও চলে যায় তাদের হাতে। 

একই কথা বলছেন তথ্য-প্রযুক্তি বিশ্লেষক তানভীর হাসান জোহাও। তিনি জানান, অ্যাপগুলো ফেসবুকের নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য ছাড়াও সংবেদনশীল জীবন-ঘনিষ্ঠ ও ব্যক্তিগত তথ্যের অ্যাকসেস পেয়ে যায় অ্যাপগুলোতে। পরে তারা এসব তথ্য এবং তথ্যের  অ্যানালিটিক্স বড়বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেও দিতে পারে আপনার অজান্তেই। তবে, এ তথ্য-প্রযুক্তি বিশ্লেষক মনে করেন ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় ফেসবুকের দায়কে অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

বিশ্লেষকরা মনে করেন উদ্বিগ্ন না হয়ে আরও সতর্ক হতে পারলে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তথ্য চুরি। সেজন্য অবশ্যই ব্যবহারকারীদের অ্যাপ ডাউনলোডের আগে সেগুলো সম্পর্কে জেনে বুঝে ইনস্টলের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাই, প্রয়োজনে ইনস্টলের আগে অ্যাপগুলোর রিভিউ দেখে নেয়ারও পরামর্শ তাদের। আর নিরাপত্তা ইস্যু থাকুক বা না থাকুক তিনমাস পরপর ফেসবুক ও ইমেইলের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করার পরামর্শ তথ্য-প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের। এতে অনেকটাই সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে তথ্য চুরি রোধে। 

আরও পড়ুন: স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করুন নিউজিল্যান্ডে 

তাই আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে আপনাকে হতে হবে আরও বেশি সর্তক। আপনাকে বিরত থাকতে হবে যে কোনো লিংকে ওপেন করা থেকে। কোনো লিংক সন্দেহজনক মনে হলে তাতে কোনোভাবেই ক্লিক করা যাবে না। যদি ঘনিষ্ঠ কোনো বন্ধু বা ফেসবুক বন্ধুর কাছ থেকে কোনো ই-মেইল, ম্যাসেঞ্জারে বার্তা বা পোস্ট আসে, যা হয়তো তার স্বাভাবিক আচরণের সঙ্গে মেলে না, সবচেয়ে ভালো হবে সেটায় ক্লিক না করা বা সাড়া না দেওয়া।

ফেসবুকের টু ফ্যাক্টর অপশন এর পাশাপাশি যেখানে সেখানে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট লগইন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। একইসাথে কখনো পাসওয়ার্ড শেয়ার না করার পাশাপাশি চেক করে নিতে হবে ফেসবুকের বিভিন্ন জনপ্রিয় পেজে ঢোকার আগে। সেজন্য অবশ্য কোনো পেজের লিংকের ইউআরএল খেয়াল করে যদি তাতে কোনো ইউআরএল না থাকলে বুঝেতে হবে পেজটি নকল। তাই, আপনার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যেন তথ্য চুরি না হয় সেজন্য আপনাকেই অধিক বেশি উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন প্রযুক্তিবিদরা।

উল্লেখ্য, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ দুবছর আগে ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাপ শনাক্ত করে তালিকা প্রকাশ করেছিল। তাদের অনুরোধে তখন চলমান ক্যামেরা দিয়ে ব্যবহার হয় এমন অনেক অ্যাপ মুছে দেয় গুগল প্লেস্টোর। তবে সর্বশেষ শনাক্তকৃত ৪০০ অ্যাপ নিয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি গুগল, অ্যাপল কর্তৃপক্ষ কিংবা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকও।

প্রসঙ্গত, গুগল অবশ্য কয়েক মাস আগেই থার্ড পার্টি অ্যাপ থেকে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে কল রেকর্ডিং নিষিদ্ধ করেছে। এর ফলে আর কোন অ্যাপ ব্যবহার করেই ফোনে কল রেকর্ড করা যাচ্ছে না। এই কারণে ফোনে বিল্ট ইন কল রেকর্ডার থেকেই এই ফিচার ব্যবহার করতে হচ্ছে। তবে এখন কল রেকর্ডিং শুরু হলে তা খুব সহজেই জেনে যাওয়া সম্ভব হবে ব্যবহারকারীদের জন্য।


সর্বশেষ সংবাদ