ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সান্ধ্য কোর্স বন্ধ চান না ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষকরা
- ফরহাদ কাদের
- প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৭:৪২ AM , আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৭:৪২ AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে পরিচালিত সব ধরনের সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রাখতে সুপারিশ করেছে যৌক্তিকতা যাচাই কমিটি। কিন্তু তাদের এ সুপারিশ মানতে রাজি নয় শিক্ষকদের একটি অংশ। এরই মধ্যে সান্ধ্য কোর্সের পক্ষে-বিপক্ষে দুটি গ্রুপ দাঁড়িয়ে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধের বিপক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষকরাই।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামীকাল একাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভাতেই সান্ধ্য কোর্স বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। একাডেমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্ষদ একাডেমিক কাউন্সিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অধ্যাপক, বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য। আগামীকাল বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে একাডেমিক কাউন্সিলের একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সভা বিষয়ে তিনি বলেন, সান্ধ্য কোর্স নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠায় গত বছরের মে মাসে ডিনদের সমন্বয়ে একটি যৌক্তিকতা যাচাই কমিটি করে দেয়া হয়। সম্প্রতি যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাই করে কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশও উঠে এসেছে। সান্ধ্য কোর্সের বিষয়টি সম্পূর্ণ একাডেমিক। একাডেমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল রয়েছে। আগামীকাল সান্ধ্য কোর্স বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আহ্বান করা হয়েছে। এটি কোনো নিয়মিত সভা নয়। এটি একটি বিশেষ সভা। সেখানেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
একাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভাকে সামনে রেখে এরই মধ্যে কয়েক দফা সভা করেছে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষকরা। সভা আহ্বানের ক্ষেত্রে সমন্বয়কের ভূমিকা রাখছেন অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল মঈন। আজ ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের হাবিবুল্লাহ কনফারেন্স হলে চূড়ান্তভাবে বসবেন সান্ধ্য কোর্সের পক্ষের শিক্ষকরা। এতে ব্যবসায় শিক্ষকের বাইরে অন্য অনুষদ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদেরও ডাকা হয়েছে।
সান্ধ্য কোর্স বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে এ সভায় অংশ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষকদের মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠান অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল মঈন। তবে সভা আহ্বান এবং ক্ষুদেবার্তার বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মঈন। তিনি বলেন, বিষয়টি সাধারণ শিক্ষকদের বিষয়। এ বিষয়ে আমি এখন কোনো কথা বলতে চাই না। যা বলার একাডেমিক কাউন্সিলের সভার পরই বলব।
এদিকে সান্ধ্য কোর্স বন্ধ চান না খোদ ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডীন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামও। জানা যায়, গত বছরের মে মাসে পাঁচজন ডিনের সমন্বয়ে সান্ধ্য কোর্সের যৌক্তিকতা যাচাইয়ে কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ চৌধুরীকে। অন্য সদস্যরা হলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ও ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান।
এর মধ্যে সান্ধ্য কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি সাময়িক বন্ধের বিষয়ে কমিটির আহ্বায়কসহ চারজন সদস্য একমত পোষণ করলেও ভিন্নমত দিয়েছেন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডীন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম। তাঁর বক্তব্য প্রতিবেদনে আলাদা করে উদ্ধৃত করা হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ না করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক। পরবর্তীতে সে নীতিমালার আলোকে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। তবে নীতিমালা প্রণয়ন পর্যন্ত প্রোগ্রামসমূহ স্থগিত করা হলে ছাত্র-শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬টি বিভাগ ও নয়টি ইনস্টিটিউটে ৬৯টি সান্ধ্য প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সান্ধ্য কোর্স রয়েছে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে। এ অনুষদের ৯টি বিভাগের সবগেুলোতেই তিন থেকে ৯ ব্যাচ পর্যন্ত শিক্ষার্থী সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি করা হচ্ছে। সবমিলে সান্ধ্যকালীন প্রোগ্রামে ৪৫টি ব্যাচ রয়েছে এ ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে। অন্য অনুষদের মধ্যে কলা অনুষদে ৬টি, বিজ্ঞান অনুষদে ৩টি, সামজিকি বিজ্ঞান অনুষদে ১৮টি, আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদে ৪ ও ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলোজি অনুষদে ১টি সান্ধ্যকালীন ব্যাচ রয়েছে।