ঢাবি ছাত্রীকে ধর্ষণে দোষীদের কঠোর শাস্তি দাবি ছাত্রলীগের

  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তি চেয়েছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানান তারা।

মানববন্ধনে শাহেলা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ধর্ষণ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আমরা চাই যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে যারা ধর্ষণ করেছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ষণের শাস্তি খুব বিলম্বিত হয়। আমরা চাই, যেন এই ধর্ষণের শাস্তি অনেক দ্রুত হয়। এমন শাস্তি হয় যা অন্যদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

তাদের বহনকৃত ব্যানারে লেখা ছিলো, ‘ধর্ষণ করতে বর্জন, ঢাবি করো গর্জন’, ‘স্বাধীন দেশে আর কত?’, ‘আমি বাংলাদেশ, আমি লজ্জিত’, ‘বাঙালি অভিধানে আর থাকবে না ধর্ষণ’ ইত্যাদি। কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন।

এদিকে শিকার হওয়ার পর ক্ষোভে ফুঁসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। রাতেই দোষীদের শাস্তির দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। আজও দিনব্যপী নানা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

এদিকে যে স্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তা এখনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। ওই ছাত্রী রোববার রাতে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর এখন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি রয়েছেন। এছাড়া ঘটনায় জড়িত কাউকে আটকও করা সম্ভব হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মনিরুজ্জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি নিয়ে সবাই গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। যে স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জায়গাটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।’


তিনি বলেন, ‘ওসি স্যার ঢাকা মেডিকেলে গেছেন। তিনি নিজে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি। আশা করি দ্রুতই আমরা জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারবো।’

ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রবিবার রাতে রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নামার পর এ ঘটনা ঘটে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী জানিয়েছেন, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল হাই জানান, ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী বর্তমানে ঢামেকের ওএসসিসিতে চিকিৎসাধীন।

ঢাবি রোকেয়া হলের ওই শিক্ষার্থী প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। ওই ছাত্রীর বয়স ২০ থেকে ২২-এর মধ্যে বলে জানা গেছে। ধর্ষণের সময় তাকে মারধরও করা হয়। তার শরীরের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।


ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী জানিয়েছেন, কুর্মিটোলা এলাকায় নামার পর অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন তাঁর মুখ চেপে ধরে। এ সময় তাকে মারধরও করা হয়। এক পর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। অচেতন অবস্থায়ই তাঁকে ধর্ষণ করা হয়।


পরে রাত ১০টার দিকে চেতনা ফেরার পর তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বান্ধবীর বাসায় যান। বান্ধবীকে ঘটনা জানান। এরপর সহপাঠীরা তাঁকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এদিকে ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার ক্যাম্পাসে বিভিন্ন প্রতিবাদী কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। সকাল সাড়ে ১০টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদী মানববন্ধন করবে ছাত্রলীগ।

সকাল ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন শামসুন্নাহার হলের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। ফেসবুকের একটি ইভেন্টের মাধ্যমে তিনি এ ডাক দেন। ইমির ডাকা এ প্রতিবাদী কর্মসূচীতে অংশ নেবে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।


এই প্রতিবাদ কর্মসূচী থেকে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহবায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান।


সর্বশেষ সংবাদ