রাষ্ট্র ব্যর্থ হলে শিক্ষার্থীরা সমস্যার সমাধান করবে: নুরুল হক

শাহবাগে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর
শাহবাগে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর  © টিডিসি ফটো

নিরাপদ সড়কের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো শুরু হওয়া বিক্ষোভের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এতে যোগ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে যোগ দেন তিনি।

রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ শুরু করেন। আশেপাশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এতে যোগ দিয়েছেন।

সেখানে যোগ দিয়ে নুরুল হক নুর বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী এই যৌক্তিক আন্দোলনের সাথে রয়েছে। শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্টের দুজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা এ রাষ্ট্রের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলাগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল। তখন প্রথমদিকে শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করা হলেও এ আন্দোলন দমনের জন্য রাষ্ট্র বর্বর ভূমিকা পালন করেছিল, হাতুড়ি-হেলমেট বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘একদিকে বলা হয়েছিলো যে, শিক্ষার্থীরা তাদের চোখ খুলে দিয়েছে অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের হাতকড়া পরিয়ে দেয়া হয়েছিল।’

তিনি আরো বলেন, ‘আজকে শিক্ষার্থীরা যে আট দফা দাবি দিয়েছে তার প্রত্যেকটি দফা মানতে হবে। গত নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছিল তা আজকের মধ্যেই তুলে নিতে হবে। এ বাংলার ছাত্রসমাজ কখনো অন্যায় করেনি। এদেশের ছাত্রসমাজ মুক্তিকামী মানুষের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছিল, আছে এবং থাকবে।

ডাকসু ভিপি বলেন, ‘এদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনিয়ম বিশৃঙ্খলা রয়েছে, এগুলোর প্রত্যেকটি সমাধান করতে হবে। যদি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ব্যর্থ হন, তাহলে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসে সমস্যার সমাধান করবে।’ এসময় শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকটি দাবি মেনে নিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান নুরুল হক।

রাজধানীর বসুন্ধরা গেট এলাকায় সু-প্রভাত পরিবহনের বাস চাপায় বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার আহম্মেদ চৌধুরী নিহতের ঘটনায় চলছে এই বিক্ষোভ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে বিক্ষোভ সহকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে গিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এসময় নিরাপদ সড়কের দাবিতে নানা ধরণের স্লোগান দিতে থাকেন তারা।

রাশেদ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কিছুদিন আগেও আন্দোলন হয়েছে। সরকার অনেক আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু কোন কাজই হয়নি। আবারও আমাদের একজন ভাইকে হারাতে হলো।’

পরে তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন আশেপাশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

শাহবাগ অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে শাহবাগ মোড়ের মাঝে অবস্থান নেন। তারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমাদের দাবি একটাই, নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘প্রশাসন, ভুয়া’ সহ বিভিন্ন ধরণের স্লোগান দিচ্ছেন।

অবরোধ করার কারণে শাহবাগ এলাকা দিয়ে সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ওই এলাকা দিয়ে চলাচলকারী মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কুড়িলের যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাসে ওঠার সময় পেছন থেকে সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাস বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরীকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। এ দুর্ঘটনার পর থেকেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নামে।

শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-

১. পরিবহন সেক্টরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে এবং প্রতিমাসে বাসচালকের লাইসেন্সসহ সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করতে হবে।

২. আটক হওয়া চালক ও সম্পৃক্ত সকলকে দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৩. আজ থেকেই ফিটনেসবিহীন বাস ও লাইসেন্সবিহীন চালককে দ্রুততম সময়ে অপসারণ করতে হবে।


৪. ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সকল স্থানে আন্ডার পাস, স্পিড ব্রেকার ও ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।

৫. চলমান আইনের পরিবর্তন করে সড়কে হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৬. দায়িত্ব অবহেলাকারী প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭. প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চলাচল বন্ধ করে নির্দিষ্ট স্থানে বাসস্টপ এবং যাত্রী ছাউনী করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৮. ছাত্রদের হাফপাস অথবা আলাদা বাস সার্ভিস চালু করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ