ভিডিওর ব্যাপারে অবগত ছিলেন জামালপুরের সেই ডিসি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০১৯, ১০:০০ AM , আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৯, ১০:০০ AM
জামালপুরের সাবেক ডিসি আহমেদ কবীরের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিডিওটি সত্য বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসছে। ভিডিওটি জাল বা ফেব্রিকেট নয়। এ ঘটনায় তার নারী সহকর্মী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনাও অভিযুক্ত।
নিজ অফিসের কর্মচারীর সাথে ঘনিষ্ট মেলামেশার ভিডিও ধারণের বিষয়টি অনেক আগে থেকেই অবগত ছিলেন জামালপুরের সাবেক ডিসি আহমেদ কবীর। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার অনেক আগেই (২০.০৩.১৯ তারিখে) অভিযুক্ত সাবেক ডিসি আহমেদ কবীর জানতে পারেন। বিষয়টি ফাঁস করে দেয়া হবে বলে তাকে হুমকি দিয়ে অর্থও দাবি করা হচ্ছিল। অথচ বিষয়টি তিনি ডিসি কালেক্টরেটের কাউকে অবহিত করেননি। এমনকি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাননি।
তিনি তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন, বিষয়টি শুধু জামালপুরের এসপিকে জানিয়েছিলেন। ডিসি আহমেদ কবীর ব্যক্তিগত আগ্রহে এই নারীকে গোপনীয় শাখায় পদায়ন করেছেন এবং তার সান্নিধ্যে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন। গোপনে অনৈতিক ভিডিও ধারণে কথিত নারী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা জড়িত ছিলেন। বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা লাভের পরও তিনি (ডিসি) ওই নারীর বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক কোনো ব্যবস্থা নেননি।
পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, ডিসি আহমেদ কবীরের সঙ্গে সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার প্রথম পরিচয় হয় ডিসি কার্যালয়ে অফিস সহায়ক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে উন্নয়ন মেলায়। পরবর্তী সময়ে অফিস সহায়ক পদে সাধনার নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে ডিসি প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। আপত্তিকর ভিডিও ধারণের বিষয়টি জানার পরও সাবেক ডিসি আহমেদ কবীর তা আড়াল করার চেষ্টা করেন। তিনি দুর্নামের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি না জানিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে বিষয়টি ম্যানেজ করতে চেয়েছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনের এক স্থানে বলা হয়- ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার আগে ডিসির কাছে গ্রামীণফোনের একটি নম্বর থেকে কল আসে। অপর প্রান্তের পুরুষ ব্যক্তিটি ডিসিকে জানান, তার অফিসের টেবিলের কলমদানির মধ্যে একটি পেনড্রাইভ রয়েছে। যেখানে তার (ডিসি আহমেদ কবীর) ও অফিস সহায়ক সাধনার অনৈতিক সম্পর্কের ভিডিও রয়েছে। পরবর্তী সময়ে ডিসি অফিসের টেবিলের কলমদানির ভেতরে একটি পেনড্রাইভ পান এবং সেটি ওপেন করে তাদের অনৈতিক সম্পর্কের গোপন ভিডিও থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন। এরপর আবারও ডিসিকে ওই নম্বর থেকে ফোন করে ভিডিওটি ভাইরাল করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। তদন্ত কমিটিকে এমন তথ্যই জানিয়েছেন ডিসি।
এদিকে তদন্ত কমিটির কাছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাজীব কুমার সরকার বলেন, খাস কামরায় ক্যামেরা লাগানোর বিষয়ে সানজিদা ইয়াসমিন সাধনা জড়িত বলে তার ধারণা। তাছাড়া তদন্তকালীন জিজ্ঞাসাবাদে সাধনা বলেছেন, তিনি পরিস্থিতির শিকার।
তদন্তকালে কমিটির সদস্যদের পর্যবেক্ষণে ডিসির কক্ষটি সুসজ্জিত ও সুরক্ষিত বলে মনে হয়েছে। সেখানে প্রবেশের জন্য তিন দিক থেকে দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ডিসির গোপনীয় সহকারীর রুমের সঙ্গে একটি দরজা, একটি সদর দরজা, যা দিয়ে ডিসির সঙ্গে সরাসরি দেখা করা যায়। অপর দরজাটি ডিসির খাস কামরায় যাওয়ার দরজা। ডিসি যখন বাইরে থাকতেন তখন গোপনীয় সহকারীর দরজা ছাড়া অন্য দরজা খোলা থাকত না। সুতরাং এই দরজা দিয়েই কেউ ঢুকে ডিসির টেবিলের কলমদানিতে পেনড্রাইভ রেখেছে।
এতে ডিসির গোপনীয় শাখার সংশ্লিষ্টতা বা ডিসি ও অন্যান্য সাক্ষীর সন্দেহকৃত অফিস সহায়ক সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তদন্ত কমিটির কাছে যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়।
জিজ্ঞাসাবাদকালে অভিযুক্ত সাবেক ডিসি আহমেদ কবীর তদন্ত কমিটির কাছে বলেন, মোবাইলে হুমকি প্রদানকারী ব্যক্তিটি পুরুষ ছিল। যদি আহমেদ কবীরের বক্তব্য যথাযথ ধরে নেয়া হয় তাহলে ওই পুরুষ ব্যক্তিটি জেলা প্রশাসনের কোনো ব্যক্তি বা বাইরের কোনো ব্যক্তি, যার সঙ্গে সানজিদার সম্পর্ক রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ আগস্ট রাতে চাঞ্চল্যকর ভিডিওটি প্রথমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন সকাল থেকে ফেসবুক ও ইউটিউবে ভাইরাল হয়। দেশে ও বিদেশে লাখ লাখ নয়, কোটি কোটি মানুষ এটি প্রত্যক্ষ করেছে। নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সবাই।